২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

প্রতিশোধপরায়ণ না হয়ে জামায়াত দেশকে নতুন করে গড়তে চায়

প্রতিশোধপরায়ণ না হয়ে জামায়াত দেশকে নতুন করে গড়তে চায় - নয়া দিগন্ত

রাজশাহীতে সাংবাদিকদের নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বলেছেন, ছাত্রজনতার ঐক্যবব্ধ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশ আবার নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের দু:শাসনকালে যেকোনো দলের চেয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি জুলুম-নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এতো কিছুর পরেও প্রতিশোধপরায়ণ না হয়ে জামায়াতে ইসলামী এই দেশটাকে নতুন করে গড়তে চায়। শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরের দিকে রাজশাহী নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন প্রিণ্ট ও ইলেকট্রোনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী মহানগরী আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় দলটির নেতারা এসব কথা বলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণবিষ্ফোরণে স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা এবং রাজশাহীসহ দেশের সার্বিক রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রোনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে এই মতবিনিময় করেছে রাজশাহী মহানগরী জামায়াতে ইসলামী।

এতে জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের দুঃশাসনকালে রাজশাহীতে যেকোনো দলের চেয়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি জুলুম-নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে জানিয়ে তার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন।

এরপর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রাজশাহী মহানগরী আমির মাওলানা ড. কেরামত আলী সাংবাদিকদের বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে রাজশাহীতে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১১ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলেই সবচেয়ে বেশি জুলুম-নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।

তিনি বলেন, আমরা কোনো প্রতিবাদ করতে পারিনি। এমন কী কেউ মারা গেলে জানাজার নামাজটাও পড়তে দেওয়া হয়নি। আমাদের লোকজন যে কান্না করবে সেই স্বাধীনতাটুকুও ছিল না। তাই দেশের পটভূমি পরিবর্তন হওয়ার পর রাজনৈতিকভাবে প্রতিশোধ নিলে আমাদেরই বেশি প্রতিশোধ নেয়া উচিত। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী কখনোই প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি করে না।

মাওলানা কেরামত আলী আরো বলেন, জামায়াত প্রতিশোধ নিতে চায় না। ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা দেশ থেকে স্বৈরাচার হটাতে পেরেছি। এখন দেশ গড়ার সময়। জামায়াত দেশ গঠনে কাজ করছে।

এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল বলেন, কোনো নিরাপরাধ মানুষ যেন মামলায় না জড়ায়, আমরা সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছি। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। কোনো ধরনের অন্যায় ও লুটপাটের সঙ্গে আমাদের নেতাকর্মীদের সম্পর্ক নেই। আগামীতে অনেক কাজ আছে। আমরা জনগণকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। আমরা নতুন প্রজন্মকে ন্যায় ও সত্য সম্পর্কে জানাতে ও চেনাতে চাই। আমাদের পরিকল্পনাই হচ্ছে- কীভাবে দেশটাকে নতুন করে সাজানো যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারগুলোকে জামায়াতের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। দেশ গড়তে আর কোনো সহিংসতা চায় না জামায়াত।
পুলিশের সমালোচনা করে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বলেন, অধিকাংশ মামলা ও নির্যাতনই রাজনৈতিক নেতাদের আদেশে পুলিশের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। পুলিশ তাদের নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে নির্যাতন করেছে। এরপরও দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে থানাসহ ক্ষতিগ্রস্ত সব সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তার কাজ করেছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। কারণ জামায়াতে ইসলামী নতুন করে দেশটাকে গড়তে চায়।

নেতারা আরো বলেন, দেশের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা অবর্ণনীয় পুলিশী নির্যাতনের শিকার হলেও সব কিছু ভুলে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পরবর্তী সময় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ লাইন, বিভিন্ন মন্দির ও হিন্দুদের বাড়ি পাহরাসহ লুটপাট এবং চাঁদাবাজী রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। একই সাথে আন্দোলন সংগ্রামে নিহতদের সার্বিক দায়-দায়িত্ব গ্রহণসহ আহতদেরও উপযুক্ত চিকিৎসা সেবায় যথাযথভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় সর্বাত্বক ত্রাণ পৌছানোর ব্যবস্থা করেছে জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী মহানগরী।

এতে জানানো হয়, ছাত্রজনতার আন্দোলনকালে ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারী সরকার জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের নামে ৪৫০টির অধিক মামলা করেছে। আর অজ্ঞাত মামলা হিসেবে এর সংখ্যা দাঁড়ায় হাজারেরও অধিক। আন্দোলনে ১১ জনকে হত্যা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কুপিয়ে দুজনের পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। এছাড়া পাঁচজনকে গুম করে রাখা হয়েছিলো।

এতে অন্যদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর নায়েবে আমির ও রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ সেলিম ও নায়েবে আমির অধ্যক্ষ সিদ্দিক হোসেন, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাহবুবুল আহসান বুলবুল, প্রচার ও মিডিয়া অধ্যাপক সারোয়ার জাহান প্রিন্স, ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি আব্দুল মোহাইমিন, মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি সিফাত আলমসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement