২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে গিয়ে হাসিনা নিজেই বিতাড়িত হয়েছেন : রফিকুল ইসলাম খান

- ছবি : নয়া দিগন্ত

ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে গিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ থেকেই বিতাড়িত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, ক্ষমতা কারো জন্য চিরস্থায়ী নয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে হাসিনার পতনের পর ফের তা প্রমাণিত হলো।

শনিবার নিজ নির্বাচনী এলাকা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বিভিন্ন পথসভায় বক্তব্যকালে ছাত্রশিবিরের সাবেক এ কেন্দ্রীয় সভাপতি এসব কথা বলেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জের নলকা ব্রিজে পৌঁছলে প্রায় এক হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে রফিকুল ইসলাম খানকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। প্রথমে তিনি উপজেলার হাটিকুমরুল গোলচত্বরে পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এরপর বোয়ালিয়া বাজার, সলঙ্গা থানা মাঠ, দবিরগঞ্জ বাজার, কুচিয়ামারা, গয়হাট্টা বাজার, কয়ড়া বাজার, মোহনপুর, বালসাবাড়ি, শাহজাহানপুরে পথসভা শেষে বিকেলে উল্লাপাড়া পৌরশহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে সভা শেষে কর্মসূচি শেষ করেন।

রোববার উল্লাপাড়া কামিল মাদরাসায় আলেমদের সাথে মতবিনিময়, হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে মতবিনিময়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে মতবিনিময়সহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিবেন তিনি।

বিকেলে উল্লাপাড়া উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক শাহজাহান আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় রফিকুল ইসলাম খান আরো বলেন, বাংলার ৮০০ বছরের ইতিহাসে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির আগমনে লক্ষণ সেন পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেছেন এই বাংলার ঘোষেটি বেগম শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে তিনি গত ৫ আগস্ট গণভবণ থেকে হেলিকপ্টারে করে দিল্লিতে পালিয়ে যান।

তিনি বলেন, ভারত পরিকল্পিতভাবে পানি ছেড়ে দেয়ার কারণে দেশের ৮-৯টি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। এ সময় তিনি সকলকে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাড়ানোর আহ্বান জানান।

রফিকুল ইসলাম খান বলেন, এই সরকারের নেশা ছিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে চিরতরে হত্যা করে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করা। রাজনীতিবিদদের হত্যা করা, সাংবাদিক-পেশাজীবীদের হত্যা করা, সর্বশেষ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে একদলীয় ফ্যাসিবাদী সরকার চিরদিনের জন্য কায়েম করা। এই সরকারের নেশা ছিল অর্থ পাচার করা, দুর্নীতি করা। শেখ হাসিনার বাসার পিয়নও যদি ৪০০ কোটি টাকার মালিক হন, তাহলে বাড়ির মালিক কত টাকার মালিক? প্রশ্ন রাখেন জামায়াতের এই কেন্দ্রীয় নেতা।

তিনি বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে বাংলার সাধারণ মানুষ কথা বলতে পারে নাই, রাজনীতিবিদরা, ওলামায়ে কেরাম কথা বলতে পারে নাই। কথা বললেই টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। জেলখানায় বন্দী করা হতো, অথবা গুম করা হতো অথবা ক্রসফায়ারে তাদের হত্যা করা হতো। পুলিশের মধ্যে সরকারের কিছু পেটুয়া বাহিনী ছিল যারা অতি উৎসাহী হয়ে জনগণের ওপর জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে বলেও অভিযোগ এ নেতার।

রফিকুল ইসলাম খান বলেন, স্বৈরাচারী এই সরকারের বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরই আন্দোলন করেছে। কিন্ত এই আন্দোলনকে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে নাই। কিন্তু, এবার কোটা বিরোধী আন্দোলনে বাংলার ছাত্রসমাজ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে রাজপথে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কোটাবিরোধী আন্দোলন কেন হয়েছিল আপনারা জানেন। দেশের ৫ শতাংশ মানুষের সরকারি চাকরিতে কোটা ছিল ৫৬ শতাংশ কোটা, আর ৯৫ শতাংশ মানুষের জন্য কোটা ছিল ৪৪ শতাংশ। অর্থাৎ দলীয় ক্যাডার ছাড়া এই সরকারের আমলে কারো চাকরি হতো না। সকল ক্ষেত্রে দলীয়করণ করেছিল। দুর্নীতি অনিয়ম করে দেশকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার সকল ষড়যন্ত্র করেছিল এই ঘোষেটি বেগম।

দীর্ঘ ১৭ বছর তার নির্বাচনী এলাকা উল্লাপাড়ায় আসতে পারেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সময় আমার বাবা মারা গেছে, আমাকে আসতে দেয়া হয়নি। ভাই-বোন, ফুফু, চাচা মারা গেছে, আমাকে জানাজায় অংশ নিতে দেয়া হয় নাই। কি অপরাধ ছিল আমার? আমি তো আপনাদেরই সন্তান। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ের সিনেট সদস্য হওয়ার পরও আমাকে প্রায় ৪-৫ বছর জেল খানায় আটকে রাখা হয়েছে। আমাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়েছে। যেটা সম্পূর্ণ আইনবিরোধী।

রফিকুল ইসলাম খানের কর্মসূচিগুলোতে আরো বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির ড. অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা শাহীনুর আলম, সেক্রেটারি অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক নুর মোহাম্মদ মণ্ডল, উল্লাপাড়া উপজেলা জামায়াত সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম, সলঙ্গা থানা আমির হোসাইন আলী, সেক্রেটারি রাশেদুল ইসলাম শহিদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।


আরো সংবাদ



premium cement