রাজশাহীতে নামের মিলে জেল খাটলেন কলেজছাত্র
- রাজশাহী ব্যুরো
- ১৪ মে ২০২৪, ২০:৪৪
রাজশাহীতে নামের মিল থাকায় জেল খাটলেন এক কলেজ ছাত্র। মাদক মামলার আসামির সাথে নিজের ও বাবার নামের মিল থাকায় বিনা দোষে একদিন জেল খাটলেন তিনি।
সোমবার (১৩ মে) ভোরে এই কলেজছাত্রকে ধরে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে আসামি শনাক্তে ভুল হওয়ার বিষয়টি পুলিশ বুঝতে পারে। এরপর বিষয়টি তুলে ধরে আদালতে একটি প্রতিবেদন দিলে মঙ্গলবার (১৪ মে) আদালত এই কলেজছাত্রকে মুক্তি দেন।
এই কলেজছাত্রের নাম ইসমাইল হোসেন (২১)। গোদাগাড়ী পৌরসভার ফাজিলপুর মহল্লার আব্দুল করিমের ছেলে তিনি। তার মায়ের নাম মনোয়ারা বেগম। ইসমাইল হোসেন গোদাগাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
অপরদিকে মাদক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক ওই আসামির নামও ইসমাইল হোসেন (২০)। তারও বাড়ি গোদাগাড়ী পৌরসভার লালবাগ হেলিপ্যাড মহল্লায়। বাবার নাম আবদুল করিম। তার মায়ের নাম মোসা. বেলিয়ারা। আসামি ইসমাইল পেশায় কাঠমিস্ত্রি।
সূত্র জানায়, মাদক মামলায় জামিন নেয়ার পর ভারতের চেন্নাই গিয়ে তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন। মাদক মামলার এই আসামি এবং ওই কলেজছাত্রের দুজনের নিজের নাম এবং তাদের বাবার নামও একই। মহল্লা এবং মায়ের নাম আলাদা হলেও পুলিশ এই কলেজছাত্রকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাত পৌনে ১১টার দিকে গোদাগাড়ীর মাদারপুর জামে মসজিদ মার্কেটের সামনে থেকে রাজমিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে ৫০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার করে রাজশাহী জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল। রাতেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তার বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী মডেল থানায় মামলা করেন ডিবির এসআই ইনামুল ইসলাম। এরপর দিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর এক মাস পর গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ইসমাইল হোসেন জামিনে মুক্তি পান। কিছুদিন পর তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজে চেন্নাই চলে যান। তার বাবা ছয় বছর ধরেই সেখানে আছেন।
কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেনের ভাই আব্দুল হাকিম রুবেল গণমাধ্যমকে জানান, সোমবার ভোর রাতে গোদাগাড়ী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতিকুর রহমান তাদের বাড়ি যান। এসময় তিনি একটি মাদক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখিয়ে তার ভাই ইসমাইল হোসেনকে ধরে নিয়ে যান। ওই সময় তারা পুলিশকে জানান, তার ভাইয়ের নামে কোনো মাদক মামলা বা কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা নেই। পুলিশ কোনো কথা না শুনেই ধরে নিয়ে যায়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
কলেজছাত্র ইসমাইলকে গ্রেফতারের বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিনকে অবহিত করলেও তিনি তাকে ছাড়েননি। আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সোহেল রানাকে অবগত করেন। এরপরে সোহেল রানা বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখার জন্য থানা-পুলিশকে নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ খোঁজখবর নিয়ে দেখতে পায়, আসামি ইসমাইলের বদলে অন্য ইসমাইলকে ধরা হয়েছে।
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন গণমাধ্যমকে জানান, সোমবার কলেজ ছাত্র ইসমাইলকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। দু’জনের নিজের এবং বাবার নাম একই থাকার কারণে ভুলটা হয়ে গেছে। পরে ভুল বুঝতে পেরে সোমবার বিকেলেই আমরা একটা প্রতিবেদন দিয়েছি। মঙ্গলবার আদালত কলেজছাত্র ইসমাইলকে মুক্তি দিয়েছেন। আসল আসামি ভারতে পালিয়ে গেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।