২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

পোরশার সেই উত্তাল পুনর্ভবা এখন শুধুই বালুচর

পোরশার সেই উত্তাল পুনর্ভবা এখন শুধুই বালুচর - ছবি : নয়া দিগন্ত

নওগাঁর পোরশা উপজেলার নিতপুর সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া এক সময়ের উত্তাল পুনর্ভবা নদী নাব্যতা হারিয়ে এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে। ফলে খরা মৌসুমে এর তলদেশ যেমন খেলার মাঠ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তেমনি গরু-ছাগলের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। অথচ এ নদীতেই এক সময় ঢেউয়ের তালে চলাচল করতো অসংখ্য নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। মাঝিরা নৌকা নিয়ে ছুটে চলতো গোমস্তাপুর, রহনপুর, নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য উপজেলার বিভিন্ন ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতে।

ওইসব উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা বড়বড় হাট-বাজার ও ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতে ধান, পাট, আলু, বেগুন, সরিষা, কালাই, গমসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের ছোট-বড় নৌকায় পাল তুলে ছুটে চলতেন। শুধু পণ্যই নয়, বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রির জন্য তারা নিয়ে যেতেন গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি।

সে সময় পুনর্ভবা ছিল পূর্ণযৌবনা। এ উপজেলার ব্যবসায়ীরা একমাত্র নদীপথ হিসাবে ব্যবহার করে তারা ব্যবসাবাণিজ্যের মাধ্যমে জীবন জীবিকার শক্ত ভিত্‌ গড়ে তুলেছিল। শুধু হাটবাজার নয়, নদীটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল অনেক জনপদ। এর পানি দিয়ে কৃষকরা দুই পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে সবুজ ফসল ফলাতো। ফুল-ফসলে ভরে উঠতো মাঠের পর মাঠ।

ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অফুরন্ত উৎস ছিল এই পুনর্ভবা। মাছ পাওয়া যেত সারা বছর। ফলে জীবিকার সন্ধানে নদীসংলগ্ন ও পাশের গ্রামগুলোতে অসংখ্য জেলে পরিবারের বসতি গড়ে উঠেছিল। জীবিকা নির্বাহের জন্য জেলেরা রাতদিন ডিঙি নৌকায় জাল নিয়ে চষে বেড়াতেন মাছ ধরার জন্য। মাছ বিক্রি করে অসংখ্য জেলে পরিবারের সংসার চলতো।

সময় গড়িয়ে সেই ভরাযৌবনা পুনর্ভবা এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে। জেলে পরিবারগুলো হয়ে গেছে প্রায় বিলীন। নদীর পাড়গুলো হয়েছে কৃষিজমি। নদীগর্ভে জেগে উঠা চরে এলাকার শিশুরা খেলছে ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলা। এক সময়ের ব্যবসা বণিজ্যের উৎসগুলো হয়ে গেছে চিরতরে বন্ধ। থমকে গেছে নদী, নিভে গেছে বিপুল সম্ভাবনা।

নদী কেন্দ্রিক সম্ভাবনাগুলো নিভে গেলেও কেউ কখনো এসব নিয়ে ভাবেনি। খরা মৌসুমে সরকারিভাবে নদীটি খননের পদক্ষেপ নেয়া হলে অন্তত বালুচরে পরিণত হতো না। তাছাড়া নদীটি কখনো খনন বা রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে নদী এখন ফসলের জমিতে পরিণত হয়েছে।

প্রতি বছর খরা মৌসুমে এ নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় স্থানীয়ভাবে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে মাটির নীচের পানি উত্তোলন করে অনেকেই ধানচাষ করছেন। ঐতিহ্যবাহী এই নদীটি খনন না করা হলে এক সময়ের উত্তাল পুনর্ভবা মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।


আরো সংবাদ



premium cement