০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, empty
`

রিকশা চালকই হত্যা করে গার্মেন্টকর্মী মিমকে

রিকশা চালকই হত্যা করে গার্মেন্টকর্মী মিমকে - নয়া দিগন্ত

বগুড়ার শাজাহানপুরে গার্মেন্টকর্মী মিম আক্তারকে বহনকারী রিকশা চালক নিজেই রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। রোববার বিকেলে হত্যাকাণ্ডে জড়িত বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলার পাকুড়তলা এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে রিকশা চালক নুর ইসলাম (২৮) বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খালিদ হাসানের আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, নিহত মিম ঢাকার আশুলিয়ার গ্রীন লাইফ গার্মেন্টসে কাজ করতেন। গত ৪জুন তিনি গাজিপুরের মৌচাক এলাকা থেকে বগুড়া গামী একটা বাসে উঠেন। তার কাছে কোন মোবাইল ফোন ছিল না, বাসের কক্ট্রাক্টরের মোবাইলের মাধ্যমে তিনি তার কলোনীর হোটেলকর্মী মায়ের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। বাসটি রাত সাড়ে নয়টার দিকে বগুড়ার বনানী পেট্রোল পাম্পের সামনে মিমকে নামিয়ে দেয় এবং কক্ট্রাক্টর তাকে একটি অটোরিকশায় তুলে দেন। যথাসময়ে বাড়িতে না পৌঁছায় মিমের পরিবার সেই কক্ট্রাক্টরের নম্বরে দফায় দফায় যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তাকে রাত সাড়ে নয়টার দিকে রিকশায় তুলে দেয়া হয়েছে।

পরদিন সকালে রানিরহাট-গন্ডগ্রাম এলাকার রাস্তার উপরে একটা মেয়ের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে এলাকার লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে শাজাহানপুর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে এবং নিহত মেয়ের পাশে থাকা পরিচয়পত্রের নম্বরে ফোন দিয়ে তার মাকে ডাকলে তিনি এসে মৃতদেহ শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় মিমের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, মেয়েটি যে রিকশায় উঠেছিল সেই রিকশা চালককে খুঁজতে থাকে শাজাহানপুরের সদস্যরা। গত ১৬ জুন রাতে কৈগাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই ফারুক সেই বর্ণনার সাথে মিলে যাওয়া অটো রিকশাচালক নুর ইসলামকে (২৮) খুঁজে পান।

বর্তমানে সে পালশা এলাকায় ভাড়া থেকে রিকশা চালায়। পুলিশ কর্মকর্তা ফারুক তাকে চ্যালেঞ্জ করে। এরপর তিনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাজাহানপুর থানার এসআই রাজ্জাককে জানান। এরপর তাকে শাজাহানপুর থানায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ঘটনার কথা স্বীকার করে। সে জানায় বনানী পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে সে মেয়েটিকে তুলে ঘটনাস্থলে নিয়ে গেছে, তার সাথে আরও চারজন ছিল।

প্রাথমিকভাবে সে জানায় সবাই মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে তারপর মেরে ফেলেছে। চারজনের নাম ঠিকানাও সে বলে দেয়। এরপর শাজাহানপুর থানা পুলিশ পরদিনই তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে দেখা যায় তাদের অবস্থান সেখানে মোটেও ছিল না বরং আটক রিকশা চালকের সাথে চারজনেরই পূর্ববর্তী শত্রুতা আছে। আর গণধর্ষণের কোন আলামতও মেয়েটির শরীরে ছিল না। এতে পুলিশ দ্বিধায় পড়ে তাকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমাণ্ডে নেয়া হয়। আটক তিন ব্যক্তিকে তার মুখোমুখি করা হলে সে এদের বাদ দিয়ে নতুন দুজনের নাম বলে। সেই দুজনের একজনকে মোকামতলা থেকে আটক করে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে দেখা গেল তারা নিকট অতীতে বগুড়া শহরেই আসেনি। এরপর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে সত্যটা স্বীকার করে।

আটক রিকশা চালক নুর জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মেয়েটাকে তুলে নিয়ে সে বনানী মোড়ে আসতেই তার মাথায় কুবুদ্ধি চেপে যায়। শহরের দিকে না এসে সে শাকপালার দিকে যেতে থাকে। মেয়েটি বগুড়ার রাস্তাঘাট না চেনায় বুঝতে পারেনি। টিপটিপ বৃষ্টি হওয়াতে রাস্তা ছিল জনশূন্য। মেয়েটিকে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে তার ব্যাগ কেড়ে নিয়ে তার সাথে খারাপ আচরণ শুরু করলে মেয়েটি বাঁধা দেয় এবং ধস্তাধস্তি শুরু করে। সে মেয়েটির মুখে আঘাত করলে তার ঠোঁট কেটে যায়। পরে নুর ইসলাম রিকশার চাকা খোলার রড দিয়ে তার ঘাড়ে আঘাত করে। এক আঘাতেই মেয়েটি মারা গেলে সে রডটি ছুড়ে ফেলে দিয়ে ব্যাগটি নিয়ে চলে যায়। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক রডটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, স্বামীর সাথে বিরোধের পর স্বামী তালাক দিয়ে গাজীপুরের বাসা থেকে বের করে দিলে মীম আক্তার বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে পথিমধ্যে খুনের স্বীকার হয়। তার আদি বাড়ী কাহালু উপজেলায়। বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায় তার মা ও ভাই ভাড়া থাকতো।

 


আরো সংবাদ



premium cement