বিলুপ্তির পথে পোরশার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প
- এম রইচ উদ্দিন, পোরশা (নওগাঁ) সংবাদদাতা
- ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:২২
তৈজসপত্রে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে নওগাঁর পোরশা নিতপুরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। মৃৎশিল্পের স্থান দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক, মেলামাইন, সিরামিক, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামসহ বিভিন্ন ধাতব দ্রব্যের তৈরি নানা রকম আধুনিক তৈজসপত্র।
মানুষের রুচির পরিবর্তন, কম চাহিদা, কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতা, বেশি দাম ও পুঁজির অভাবে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারার ফলে বিলুপ্ত হতে চলেছে এই মৃৎশিল্প। মৃৎশিল্পের জন্য নিতপুর পালপাড়া এক সময় বেশ পরিচিত ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আজ তা বিলীন হতে চলেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মৃৎশিল্পের কারিগররা এখন অনেকেই বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে চার্জার ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন চালিয়ে অথবা দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। যারা এখনো এ পেশার সাথে জড়িত তারা অনেকেই কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
মৃৎশিল্পী পরলোকগত ভোরন পালের ছেলে নারায়ন পাল জানান, বর্তমান সময়ে মৃৎশিল্প খুব একটা ভূমিকা রাখে না। এক সময় ঘণ্টায় মাটির কলস বিক্রি হতো ৫০০টি। এখন দু’মাসে ২০টি কলসও বিক্রি হয় না।
তিনি জানান, নারায়ন পালের তিন ভাইয়ের পরিবারে ২৪ জন সদস্য রয়েছেন। এ ব্যবসা দিয়ে তাদের ভরণপোষণ ঠিকমতো করতে পারছেন না।
একই পাড়ার লাল বিহারী পাল জানান, বর্তমানে তাদের ব্যবসা খুব শোচনীয়ভাবে চলছে। একটা সময় ছিল যখন মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, ঘটি, সরাই, কলস, পয়সা জমানোর ব্যাংক, পুতুল ইত্যাদির কোনো বিকল্প ছিল না। সরকারি সুযোগ-সুবিধা, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ঋণ প্রদানে অনীহা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তারা কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন। বাপ-দাদার এই পেশা ছেড়ে তারা অনেকেই অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
তিনি আরো জানান, আগে মাটির জিনিস বানাতে মাটি কিনতে হতো না। রঙ, যন্ত্রপাতি ও জ্বালানি সহজলভ্য ছিল। বর্তমানে এসব প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বাড়ায় এবং মাটি কেনার কারণে তারা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ কারণে পোরশার মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে।
এ বিষয়ে পোরশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আরিফ আদনান বলেন, ‘মৃৎশিল্প আমাদের ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। অতীতে মৃৎশিল্পের কারিগরদের জন্য কী করা হয়েছে তা বলতে পারবো না। তবে এখন কোনো অনুদান এলে তাদেরকে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা