অসহায় শ্রমিকের মেয়ের বিয়ে দিলো হাজারো শ্রমিক
- আকরাম হোসাইন, শেরপুর (বগুড়া)
- ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:০৩
‘আমরাও পারি’ স্লোগানকে বাস্তবে দেখিয়ে দিলো বগুড়ার শেরপুর উপজেলার হাজারো শ্রমিক। ধুমধাম করে এক অসহায় শ্রমিকের মেয়ের বিয়ে দিলেন তারা।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বগুড়ার শেরপুর পৌর শহরের ধুনট মোড় এলাকায় এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
কনে উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের আন্দিকুমড়া গ্রামের বাসিন্দা আকরাম হোসেন ও মঞ্জুয়ারা বেগমের মেয়ে আঁখি আকতার মনিকা। আর বর ওমর ফারুক একই ইউনিয়নের মামুরশাহী গ্রামের বাসিন্দা হযরত আলী ও পারুল বেগমের ছেলে।
শেরপুর-ধুনট বন্দর মোটর শ্রমিক কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে জমকালো আয়োজনে ওই বিয়ে দেয়া হয়। গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে আলোকসজ্জা, তোরণ, কনে ও বরের মঞ্চ, কনে সাজানোর জন্য বিউটিশিয়ান, ভিডিও ধারণ কোনো কিছুরই কমতি ছিল না এই অনুষ্ঠানে। বরযাত্রীসহ আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন প্রায় পাঁচ শতাধিক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আকরাম হোসেনের পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। তার স্ত্রী ছাড়াও দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে সংসারে। এর মধ্যে বেশ কিছুদিন আগেই বড় মেয়ের বিয়ে হয়। অভাব-অনটনের কারণে আঁখি আক্তারের বিয়ে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তয় ছিল ওই পরিবারটি। এক পর্যায়ে বিষয়টি জানতে পারেন শেরপুর-ধুনট বন্দর মোটর শ্রমিক কল্যাণ সংস্থার উপদেষ্টামন্ডলী ও নেতারা। এরপর সংস্থার সভাপতি শওকত খন্দকরা ও সাধারণ সম্পাদক রাজু মোল্লা আকরাম হোসেনকে মেয়ের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে বলেন।
বিয়ের মধ্যস্থতাকারী আবু হানিফ বলেন, সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিয়ের যাবতীয় খরচসহ সব আয়োজন করা হয়েছে। এমনকি স্বর্ণালংকার দিয়ে বর-কনে সাজানো ও সংসারে প্রয়োজনীয় যাবতীয় সামগ্রী, আসবাব উপহার দেয়া হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে সংস্থাটির উপদেষ্টা শেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র জানে আলম খোকা ও শ্রমিক নেতা আরিফুর রহমান মিলন ও রুহুল আমিন সিটুর সার্বিক তত্ত্বাবধানে।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের ধুনট মোড়ে সংস্থাটির কার্যালয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। একটি কক্ষে দেখা যায় গায়ে হলুদের মঞ্চ ও কনেকে সাজানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছেন বিউটিশিয়ান। বরের জন্যও প্রস্তুত মঞ্চ।
আঁখির বাবা আকরাম হোসেন জানান, কখনো ভাবেননি, তার মেয়ের এত বড় আয়োজনে বিয়ে হবে। এ জন্য শ্রমিক সংস্থাটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
কনে আঁখি আক্তার বলেন, ‘নিজস্ব কোনো জায়গা-জমি নেই। বাড়ি-ঘরও নেই বললেই চলে। পৌরসভার জায়গার ওপর তোলা খুপরি ঘরেই আমাদের বসবাস। অর্থের অভাবে পড়াশোনা শিখতে পারিনি। দুই বোন, এক ভাইকে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তা করতেন দরিদ্র মা-বাবা। এমন পরিস্থিতিতে কখনো ভাবিনি, এত ধুমধামে আমার বিয়ে হবে। তবে এই আয়োজন দেখে বুঝলাম, যাদের কেউ নেই, তাদের জন্য আল্লাহ আছে।’
সমাজের গরিব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেরপুর-ধুনট বন্দর মোটর শ্রমিক কল্যাণ সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা জানে আলম খোকা ও উপদেষ্টা আরিফুর রহমান মিলন বলেন, স্থানীয় অনেকেই এই মহতি কাজে সহযোগিতা দিয়েছে। তাই তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নবদম্পতির হাতে বকনা বাছুর, ছালগল, থেকে শুরু করে স্বর্ণলংকার, শোকেস, আলমারি, ড্রেসিং টেবিলসহ নগদ টাকাও তুলে দেয়া সম্ভব হয়েছে।
আগামীতে প্রতি বছর দুজন অসহায় শ্রমিকের মেয়ের বিয়ের আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা