অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত জামায়াত
- রাজশাহী ব্যুরো
- ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:১৩
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছে জামায়াতে ইসলামী। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে যাচ্ছি। এ সহযোগিতা আমাদের থাকবে।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সদস্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব জামায়াতে ইসলামীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তার এ সরকারকে পরিচালনায় তিনি আমাদের সহযোগিতা চেয়েছিলেন। আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে আমাদের প্রতিনিধিদল ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের কাছে সুপারিশমালা রেখে এসেছি। তিনি বলেছিলেন, আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন। আমরাও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলাম। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে যাচ্ছি। এ সহযোগিতা আমাদের থাকবে।
তবে দেশের রাজনীতিতে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখনো দু’মাসই হয়নি। কিন্তু শুরু থেকেই এ ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে ধূলিসাৎ করার জন্য একটা পাল্টা প্রতি বিপ্লবের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, ছাত্র-জনতা সেই বিপ্লবের প্রতি বিপ্লবকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। তারা জুডিসিয়াল ক্যু করার চেষ্টা করেছিল। দলবাজ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে হাইকোর্টের আপিল ডিভিশনের জাস্টিসরা ষড়যন্ত্র করে প্রথমে একটা ফুলকোর্ট মিটিং করে ষড়যন্ত্র করছিল যে এ অন্তর্বর্তী সরকারকে বাতিল করবে। এ খবর জানার পর আমাদের দামাল ছাত্রসমাজ সমস্ত হাইকোর্ট ঘেরাও করে এবং বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবি করে। তখন প্রধান বিচারপতিসহ আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। আমাদের ছাত্রসমাজ জুডিসিয়াল ক্যু থেকেও বাংলাদেশকে রক্ষা করতে সফলতার পরিচয় দিয়েছে।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, তারা আনসার কাণ্ড ঘটিয়ে আবার সচিবালয় দখল করে সরকারকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করেছিল। সেটাও ছাত্রসমাজ রুখে দিয়েছে। জনপ্রশাসনে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য, ক্ষোভ তৈরি করে সরকারকে তারা ফেইল করাতে চায়। আমাদের এ বাংলাদেশ সব ধর্ম, বর্ণ, মানুষের এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের বাংলাদেশ। সেখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে উস্কে দিয়ে বলছে, এখানে হিন্দুরা নিরাপদ নয়। তারা সারা দুনিয়াকে দেখাতে চায় এখানে তারা নিরাপদ নয়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী সব ধর্মের মানুষের স্বাধীনতা রক্ষায় পাশে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, সচিবালয় থেকে শুরু করে জনপ্রশাসনে অনেক জায়গায় স্বৈরাচারের অনেক দোসর ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারা আমাদের কথা শুনে না, জনগণের কথা শুনে না। ফ্যাসিবাদের জন্য তাদের অন্তরে অনেক মায়া। এ মায়া করে লাভ হবে না। ওদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত সম্পর্কে সজাগ থাকুন।
তিনি বলেন, এই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের ঋণ আমাদেরকে শোধ করতে হবে। তাদের আত্মত্যাগের মাধ্যেমেই এই বিজয় অর্জিত হয়েছে। জামায়াত-বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধীরা এই আন্দোলনের বীজ রোপণ করলেও বিজয় এসেছে ছাত্র-জনতার হাত ধরে। আবু সাঈদসহ শত শত শহীদ ভাইদের আত্মত্যাগের মাধ্যেমে। আমরা এই আত্মত্যাগকারী শহীদ ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে রাখতে চাই।
এ সময় অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার বলেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে দেশকে এগিয়ে নিতে জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সরকারের সকল ভালো কাজের সাথে জামায়াতে ইসলামী আছে। এই সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মানে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, দেশের উন্নয়নের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
তিনি আরো বলেন, গুজব ও অপপ্রচার চালিয়ে ফ্যাসিবাদী শক্তির দোসররা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাতে পারে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
ছাত্র-জনতা বিপ্লবের মাধ্যমে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে তাতে সাংবাদিক ভাইদেরও ঐতিহাসিক ভূমিকা ও অবদান রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ মুহাম্মদ শাহাবুদ্দিন।
রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মাওলানা কেরামত আলীর সভাপতিত্বে এবং মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মন্ডল ও সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক শাহাদৎ হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ সিদ্দিক হোসাইন, অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ সেলিম, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাহবুবুল আহসান বুলবুল, অধ্যাপক আব্দুস সামাদ, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি অধ্যাপক সারোয়ার জাহান প্রিন্স, সমাজকল্যাণ সেক্রেটারি গোলাম মুর্তজা, যুব সেক্রেটারি জসিম উদ্দিন সরকারসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিকেলে একই স্থানে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের যুব প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা