১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

প্রশ্ন : অনিয়ম কোথায় নেই!

-


একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান জরিপ করে দেখেছে পৃথিবীর ১০টি দেশকে অপেক্ষাকৃত বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রাশিয়া। আর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সর্বশেষ তথা দশম স্থানে রয়েছে লেবানন। আর নবম স্থানে অবস্থান বাংলাদেশের। উল্লেখ্য, এই ১০টি দেশেই গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতার প্রচুর ঘাটতিও রয়েছে। কিছুকাল আগে যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকের সাথে এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছিলেন। গণতন্ত্রকে যেসব দেশ বেছে নেয় না, সেখানে উন্নয়নের ঘাটতির সাথে অনিয়ম দুর্নীতি বৃদ্ধি পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। গণতন্ত্রের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জবাবদিহিতা। আর জবাবদিহিতার অনুপস্থিতির সুযোগে অনিয়ম ও দুর্নীতি বাধাহীনভাবে প্রসারিত হতে বাধ্য সেসব দেশে। বিশ্বের দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত দেশগুলোর অন্যতম বলে চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশ। এটিকে ভুল তথ্য মনে করা যাবে না। দেশে কী পরিমাণ দুর্নীতি অনিয়ম প্রতিদিন হচ্ছে তার চিত্র দেশের প্রতিদিনের পত্রিকার পাতায় কিছুটা খুঁজে পাওয়া যায়।

তবে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতির খবরও আছে, যা সবার অগোচরে থেকে যায়, যা ওপরের মহলের সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে। এসব পত্রিকার পাতায় উঠে আসা এ দেশে সম্ভব নয়। এবার পত্রিকার পাতায় চোখ দেয়া যেতে পারে। গত ২৭ মার্চ ২০২৪ তারিখে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের দ্বিতীয় শীর্ষ খবরের শিরোনাম ছিল ‘দুর্নীতি ও সন্ত্রাস রুখে দেশ গড়ার প্রত্যয়’। স্বাধীনতা দিবসের নানা খবর ধারণ করে ওই দিনের সব জাতীয় দৈনিক সমৃদ্ধ এক সংখ্যা প্রকাশ করে। ওই জাতীয় দৈনিকটি প্রকৃত অর্থেই দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিল। এই আহ্বান বর্তমান সময়ের জন্য প্রশ্নহীনভাবে সময়োচিত। তার প্রমাণ সেই পত্রিকাটিতেই (সমকাল) রয়েছে। অর্থাৎ পত্রিকাটির ২৭ মার্চ সংখ্যায় প্রথম শীর্ষ সংবাদসহ অনন্ত পাঁচটি দুর্নীতিসংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। সমাজ রাষ্ট্রে কদাকার সব চিত্র সেখানে রয়েছে। শুধু ওই দিনের উল্লিখিত পত্রিকাটি নয়। আরো অনেক পত্রিকার পাতায় সে দিন ছিল নানা দুর্নীতি ও অনিয়মেরই খবর এটি মনে করলে এখন হয়তো ভুল হবে না। এই জনপদ এখন ব্যাপকভাবে দুর্নীতি চাষের এক উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আর এসব অপকর্মের শেকড় সন্ধান করলে দেখা যাবে এর সাথে জড়িত আছে ওপরতলার বহু ক্ষমতাধর ব্যক্তি, সঙ্ঘবদ্ধ কিছু গোষ্ঠী বা সিন্ডিকেট। বহু আগে এক সময় এ দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু আক্ষেপ করে বলেছিলেন- দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে দেশের সাধারণ গরিব মানুষ জড়িত নয়। যাদের অনেক আছে, তাদের আরো বেশি পাওয়ার তাগিদেই ওরা দুর্নীতি করে। তার সেই বোধ একেবারেই খাঁটি ও অকৃত্রিম। আজ অক্ষরে অক্ষরে তার প্রমাণ মিলছে।

এখন দেখা যেতে পারে ২৭ মার্চ এর পত্রিকাগুলো দুর্নীতির কী কী খবর প্রকাশ করেছে। তবে এটি ভাবলে খুব ভুল করা হবে। শুধু ওই দিনই কেবল দুর্নীতির সব খবর প্রকাশ পেয়েছে। বরং এমন সব দুর্নীতির বহু খবরই নিত্যই প্রকাশিত হয়ে থাকে পত্রিকাগুলোতে। যে পত্রিকাটির খবর নিয়ে এই নিবন্ধের সূচনা সেই শীর্ষ খবরটায় প্রকাশিত মূল তথ্য হচ্ছে, সরকারের নানা উদ্যোগ পদক্ষেপ নেয়ার পরও চালের মূল্যবৃদ্ধি রোখা যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের অসহায়ত্বই ফুটে উঠেছে এ খবরের উপজীব্য বিষয়ে। সে খবরের শিরোনাম ছিল, ‘সারা দেশে অভিযান, কোটির বেশি জরিমান’, সর্বশেষ ৩০ প্রতিষ্ঠানকে ৮৩ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি প্রদান। এসব খবরে উল্লেখ রয়েছে ওই সব পদক্ষেপকে পাত্তাই দিচ্ছে না অসাধু চাল ব্যবসায়ীরা। মূলত অসাধু চাল ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটই এসব অপকর্ম বিরতিহীনভাবে করে চলেছে কর্তৃপক্ষীয় সব ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। এই দুর্নীতি দূর করার জন্য যে সর্ষে ব্যবহার করছে, ওয়াকিবহাল মহল মনে করেন। ওই সর্ষের মধ্যেই প্রকৃত পক্ষে গলদ নিহিত রয়েছে।

সেই পত্রিকার প্রথম পাতায় আরেক খবরের শিরোনাম হচ্ছে ‘গাড়ি কোথায় অ্যাপসে ওঠে সড়কের চাঁদা’। এই শিরোনামটাতে একটু হয়তো হেঁয়ালিপনা আছে। তা থাক। খবরের মোদ্দা কথা হচ্ছে, অনলাইনে চালক ও তাদের সহকারীদের যুক্ত করে সেবার আড়ালে দুই বছর ধরে ভয়াবহ জালিয়াতি করে আসছে একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র। খবরটা আসলে ঢাকার ট্যাক্সি সম্পর্কিত একটি জাল জালিয়াতির বিষয় যা দীর্ঘ দিন থেকে চলছিল। ওই পত্রিকায় প্রথম পাতায় প্রকাশিত তৃতীয় খবরটা হচ্ছে, মাদকের ব্যবসাসংক্রান্ত। ওই খবরের শিরোনাম হচ্ছে ‘মাদকের কারবারে ওদের সম্পদের পাহাড়’। সে খবরে আরো রয়েছে, চট্টগ্রাম নগরীতে ২৬ লাখ টাকার প্রিমিও গাড়িতে চলাফেরা করেন এক ব্যক্তি (নাম উল্লেখ করা হলো না।) আরেক গাড়ি আছে তার স্ত্রীর (নাম উহ্য রাখা হলো।) নগরীতে ও টেকনাফে আছে ৩০ কোটি টাকার সম্পদ। তবে তার নেই দৃশ্যমান কোনো আয়ের খাত। অভিযোগ উঠেছে এসব করেছেন মাদক কারবার করে। মাদকের তিনটি মামলার আসামি তিনি। আরো বেশ কয়েকজন মাদক কারবারিও আছে। যারা সবাই কালা ধনে কোটিপতি। চট্টগ্রামে ১৪১ জন মাদক কারবারির নাম আছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিফতরের কাছে। এদের নামে বেনামে অঢেল সম্পদ রয়েছে। দীর্ঘ দিন থেকে এরাও আছে, তেমনি পাশাপাশি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরও রয়েছে। চমৎকার এক সহাবস্থান। এসব ব্যক্তির বিশ্বাসযোগ্য দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও তারা সবাই বিপুল সম্পদের অধিকারী। আলিশান এক জীবনযাপন করেন তারা।

ওই পত্রিকার পেছনের পাতার শীর্ষ খবরটির শিরোনাম হচ্ছে ‘ক্যাশিয়ার থেকে কোটিপতি’। শিরোনামের খবরটিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (নাম উহ্য রাখা হলো) অবৈধ নার্সিং কলেজ অনুমোদন দিয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন তিনি। কেউ তার আত্মীয় হলেই পেয়ে যান চাকরি। পাস না করা শিক্ষার্থীকে নার্সিয়ে ভর্তি, জাল সনদ প্রদান, কোচিং বাণিজ্যসহ বহু অভিযোগ রয়েছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সাবেক এক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পুত্রধনের কল্যাণে তার ও তার স্ত্রীর কপাল খুলে যায়। মন্ত্রী মহোদয়ের পুত্র ওই কর্মকর্তার স্ত্রীর পার্টনারশিপের ব্যবসায় তাদের ভাগ্যের চাকা দ্রুত অগ্রসর হতে থাকে। ওই কর্মকর্তার স্ত্রী নামে রয়েছে ‘মাত্র ৮টি’ নার্সিং কলেজ। এমন ব্যবসা করে স্ত্রীর নামে জমা হয়েছে অঢেল সম্পদ। সুখ স্বাচ্ছন্দ্য সবই তাদের মুঠোয়।

ওই এক দিনেই ওই পত্রিকার ষষ্ঠ পাতার এক খবরের শিরোনাম হচ্ছে, ‘আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের অনুদান ব্যবসায়ী নেতাদের পকেটে’ খবরের ভেতরে রয়েছে কাপাসিয়ার চাঁদপুর বাজারে আগুনে পুড়ে সর্বস্ব হারানোর দোকানিদের অনুদানের টাকায় ভাগ বসিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। এ ছাড়া টাকা বিতরণের অনিয়মের অভিযোগও পাওয়া গেছে। ওই বাজারে ১৮ জন ব্যবসায়ীর জন্য গাজীপুর জেলা পরিষদ থেকে ওই ১৮ জনের নামে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়। তবে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীই পুরো টাকা বুঝে পাননি। এমনকি বাজারে কোনো দোকান নেই কিংবা দোকানে আগুন লাগেনি এমন ব্যক্তিও অনুদান পেয়েছেন স্বজনপ্রীতির কারণে। ওই পত্রিকার সপ্তম পৃষ্ঠার আরেক খবরের শিরোনাম হচ্ছে, ‘দুর্নীতি তদন্তে প্রভাব ফেলার আশঙ্কায় কর্মকর্তা বরখাস্ত।’ খবরে উল্লেখ রয়েছে ‘জামালপুর উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তাকে (নাম উহ্য রাখা হলো) দুর্নীতি তদন্তের কাজে প্রভাব ফেলতে পারেন। এ আশঙ্কায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, সাময়িক বরখাস্তকৃত ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির বহু অভিযোগ রয়েছে। স্থান সঙ্কুলান হবে না বিধায় খবরটি কিছুমাত্র তথ্য উপস্থাপন করা হলো।

২৭ মার্চ অপর এক জাতীয় দৈনিকে (মানবজমিন) প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলার এক উপজেলার জনপ্রতিনিধির (উপজেলা চেয়ারম্যান) বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের স্বাক্ষর জাল করার অপরাধে আদালত তাকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। বর্তমানে তিনি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান। তবে তিনি গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। খবরে আরো প্রকাশ তিনি উত্তরা ব্যাংকের দুই কোটি পাঁচ লাখ টাকার ঋণ মওকুফের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার স্বাক্ষর জাল করেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি আছে। স্মরণ করা যেতে পারে তিনি টানা দুই মেয়াদে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও তিনি তৃতীয় বারের মতো এবারো উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি কি সব কানুনের ঊর্ধ্বে এবং এ জন্যই তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘ধরাছোঁয়ার’ বাইরে থাকতে পারছেন।

জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের শেষের পাতায় প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম ছিল ‘অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে আরএনবির কিছু সদস্য।’ ওই শিরোনামে শোল্ডারে বা ওপরে ছোট হরফে লেখা ছিল ‘ব্যবস্থা গ্রহণে উদাসীনতা’ নিশ্চয়ই এর মধ্যে একটা বার্তা আছে। পত্রিকাটির চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিস থেকে প্রেরিত ওই খবরে বলা হয়েছে ‘রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নিয়োগ, বদলিবাণিজ্য, কোয়ার্টার দখল ও কেনাবেচার কাজসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। পূর্বশত্রুতার জেরে এখন নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে মারামারিতে। এদের মারামারির কারণে বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে। বহু সময় গড়িয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা এখনো হয়নি বলে অভিযোগ আছে। গত দুই মাসে চট্টগ্রামের খুলশি থানায় চেক প্রতারণা মামলায় তিনবার গ্রেফতার হয়েছেন এই লোক। তার বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগও রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ওপরের কর্মকর্তাদের কাছে তার ব্যাপারে বারবার অভিযোগ করা হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এ খবর থেকে কেউ কেউ এমনও মনে করতে পারেন এত ছোট পদের ব্যক্তিদের নিয়ে লেখার কী দরকার। অবশ্য এর মাধ্যমে এটাই বোঝানো হচ্ছে। তার পদটি ছোট হলেও তার অপরাধগুলো কিন্তু হালকা নয়; বরং ভারী। আর সে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তা ছাড়া দুর্নীতি, অনিয়ম এখন একটি সাধারণ কালচারে পরিণত হয়েছে। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত, সব দুর্নীতির পেয়ালা কানায় কানায় পূর্ণতা লাভ করেছে।

যেহেতু এই নিবন্ধে দুর্নীতিসংক্রান্ত খবরগুলো নেয়া হয়েছে কেবল ২৭ মার্চের প্রকাশিত কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে। আর লেখা সংগ্রহের কাট-আউট লাইনও ধরা হয়েছে ওই সময়ের বিবেচনায়। তাই আর কোন দিনকে টাচ করা ইচ্ছা ছিল না। কেননা লেখার জন্য নির্ধারিত জায়গা অতিক্রম করা সম্ভব নয়। বাধ্য হয়ে ৩১ মার্চ জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রথম ও দ্বিতীয় শীর্ষ দু’টি খবর এবং পরদিন ওই পত্রিকায় একই ব্যক্তির দুর্নীতির তথ্যসংবলিত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। মাত্র কিছুকাল আগে সেই ব্যক্তি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিরাট এক বাহিনীর প্রধান ছিলেন। সন্দেহ নেই খবরটি যারা পাঠক করেছে অবশ্যই তারা স্তম্ভিত না হয়ে পারবে না। এখন ওপরতলায় যে মারাত্মক পচন দেখা দিয়েছে তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ উল্লিখিত সেই তিনটি রিপোর্ট। সে জন্যই উল্লেখ করা হয়েছে, ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত এখন দুর্নীতিতে সয়লাব।
বাংলাদেশে যে সর্বত্রই অনিয়ম অব্যবস্থা বিরাজ করছে তাতে এখানে সততা ও নিষ্ঠার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২৭ মার্চ দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক খবরের শিরোনাম ছিল, ‘ঢাকায় বৈধ রেস্তোরাঁ আছে মাত্র ১৩৪টি।’ রেস্তোরাঁ মালিকদের দাবি, নিবন্ধন ও লাইসেন্স প্রক্রিয়া অনেক জটিল ব্যাপার। সরকারি বিভিন্ন দফতরে দৌড়াতে দৌড়াতে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। সে রিপোর্টে আরো উল্লেখ রয়েছে, রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে চাইলে একজন বিনিয়োগকারীকে সরকারের সাতটি সংস্থার অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিতে হয়। এমন বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে ঢাকায় রেস্তোরাঁ ব্যবসা করছে মাত্র ১৩৪টি প্রতিষ্ঠান। তা ছাড়া এতসব বাধা অতিক্রম করতে হলে কর্তৃপক্ষকে ‘নজর নেওয়াজ’ও দিতে হয়। এমন বাধা অতিক্রম করে রেস্তোরাঁ বাণিজ্য করা কঠিন হয়ে পড়েছে। একই সমস্যা হয়তো অন্যত্র একই রকম।

এই নিবন্ধ শেষ করতে চাই অন্তত দু’টি জাতীয় দৈনিকে (প্রথম আলো ও মানবজমিন) প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদ্ধতি দিয়ে। তবে ওই প্রতিবেদনটি অবশ্য ২৭ মার্চ নয় ৩১ মার্চে প্রকাশিত হয়েছে। যেহেতু বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধটির সব প্রতিবেদনই ২৭ মার্চ প্রকাশিত পত্রিকাগুলো থেকে সংগৃহীত হয়েছে। শুধু পরবর্তীতে ৩১ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃতি তুলে শেষ করতে চাই এই লেখা। প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম হচ্ছে, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায় অন্যতম বাধা ঘুষ-দুর্নীতি।’ ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে বাংলাদেশের সাথে ব্যবসার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছু বাধার মুখোমুখি হয়ে থাকে। সরকারি কেনাকাটা, মেধা-সম্পদ সংরক্ষণ, ডিজিটাল বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শ্রমিকের অধিকারের মতো বিষয় নিয়েই এই বাধাগুলো। বাংলাদেশে ব্যবসায়-বাণিজ্য এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাধা এই ঘুষ-দুর্নীতি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়-বাণিজ্য নিয়ে সে দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন মন্তব্য করা হয়েছে। বিদেশে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতাবিষয়ক জাতীয় বাণিজ্য মূল্যায়ন প্রতিবেদনে ৬০টি দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা উঠে এসেছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী ক্যাথরিন অতি সম্প্রতি ৩৯৪ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সেখানে বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য প্রসঙ্গটি এসেছে। এতে বলা হয়েছে সরকারি কেনাকাটা সাধারণত গণখাতে ক্রয় আইন-২০০৬ এর আওতায় দরপত্রের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের নীতি অনুসরণ করলেও দুর্নীতির অভিযোগ সাধারণভাবেই রয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়ভাবে ইলেকট্রনিক সরকারি ক্রয় পোর্টাল চালু রয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অংশীজনরা পুরনো প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগের পাশাপাশি পছন্দের দরদাতার স্বার্থে পক্ষপাতমূলক শর্ত জুড়ে দেয়া ও দরপত্রের সামগ্রিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশ কিছু মার্কিন প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করেছে বিদেশী প্রতিযোগীরা প্রায়ই তাদের স্থানীয় অংশীদারদের ব্যবহার করে ক্রয় প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। উদ্দেশ্য হলো মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে দরপত্রে বিজয়ী হতে না পারে।
মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো অভিযোগ করেছে, ঘুষ প্রতিযোগিতাবিরোধী চর্চা, দরপত্রের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব- এসব বিষয় সরকারি দরপত্রে মার্কিন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের পথে বাধা। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ রয়েছে, ব্যবসায়িক বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে ঘুষ ও চাঁদা দেয়ার প্রচুর অভিযোগ থাকলেও দুর্নীতিবিরোধী আইন প্রয়োগ যথেষ্ট নয়। এমনকি লাইসেন্স পেতেও ঘুষ দিতে হয়। বাধ্য হতে হয় বলেও অভিযোগ করেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রশ্ন হতে পারে দুর্নীতি অনিয়ম তাহলে কোথায় নেই!
[email protected]

 

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement