রাষ্ট্র সংস্কারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা
- মু. আবদুল হাকিম
- ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
রাষ্ট্র সংস্কারের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে যথার্থ উপলব্ধি না থাকলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। মাঠে নামার আগে জানতে হবে কারা রাষ্ট্র সংস্কারের শত্রু, কারা মিত্র। না জেনে মাঠে নামলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
৫৩ বছর ধরে বিদ্যমান রাষ্ট্রের সুবিধাভোগীরা কোনো দিন রাষ্ট্র সংস্কার চায় না। কেননা, রাষ্ট্র সংস্কার হলে সুবিধাগুলো থেকে তারা বঞ্চিত হবে। এ জন্য তারা রাষ্ট্র যেভাবে আছে সেভাবে রাখতে চায়। কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল চিরদিন রাষ্ট্র সংস্কারবিরোধী। অপরাধীরা, দুর্নীতিপরায়ণ, সন্ত্রাসীরা চায় না রাষ্ট্র সংস্কার হোক। উন্নয়ন বাজেট, ব্যাংক ও শেয়ার মার্কেট লোপাটকারীরা চায় না রাষ্ট্র সংস্কার হোক। টাকা পাচারকারীরাও চায় না। কিন্তু তারা সরাসরি রাষ্ট্র সংস্কারের বিরোধিতা করবে না। তারা অন্যদিক দিয়ে আক্রমণ করে সংস্কারের উদ্যোগ ভণ্ডুল করার চেষ্টা করবে।
রাষ্ট্র সংস্কারে যারা লাভবান হবে তারা বেখবর এবং নির্লিপ্ত। গণমাধ্যমের মালিকানা স্বার্থান্বেষী মহলের হাতে। সামাজিক মাধ্যম কালো টাকার দখলে। রাষ্ট্র সংস্কার করে জনগণের কী লাভ তা তারা জনগণকে কখনো জানাবে না; বরং অপতথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করবে। জনগণকে সচেতন এবং সম্পৃক্ত করার বিপুল জনবল এবং আর্থিক সামর্থ্য সংস্কারপন্থীদের হাতে নেই। সব দেশে সবকালে কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল দ্বারা সংস্কারপন্থীরা নাজেহাল হন। অনেকে জীবনও হারান। এদেশের বেশির ভাগ গ্র্যাজুয়েট রাষ্ট্র সংস্কারে আগ্রহী নয়। অথচ এতে তারাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। সঙ্গত কারণে এর অগ্রভাগে তাদের থাকা উচিত। কিন্তু তা ঘটছে না। এ বিষয়ে নেই কোনো মোটিভেশনাল কার্যক্রম। যারা আগ্রহী তারাও জানে না এ বিষয়ে তাদের করণীয় কী বা ভূমিকা কী। ভ্যানগার্ড হিসেবে একদল মরণপণ বিপ্লবীর লংমার্চ এবং লম্বা তৎপরতা ছাড়া জগতে কোনো বিপ্লব সম্ভব নয়।
সংবিধানসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি আইনের সাথে স্বার্থান্বেষী মহলের লাভ-ক্ষতির হিসাব জড়িত। সংবিধানসহ এ জাতীয় আইনের মোট সংখ্যা বর্তমানে ৯৮০টি। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহলের সংখ্যা হাজার হাজার। কাজেই কোনো আইন সংস্কারে তারা কাউকে হাত দিতে দেবে না। অনেকে বলবে, রাষ্ট্র ও সমাজ সংস্কারের কোনো দরকার নেই। নিজেকে সংস্কার করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমজনতা এ জাতীয় জনতুষ্টিমূলক বাণী শুনতে বেশি পছন্দ করে। এদেশে হাজার হাজার অপকর্ম করেও হাততালি পাওয়া যায়। বলা হয়ে থাকে, ব্যক্তি সংস্কার করলে সমাজ বা রাষ্ট্র এমনি এমনি সংস্কার হয়ে যায়। ব্যক্তি সংস্কার করতে এত এত মসজিদ, মাদরাসা, মক্তব, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, সিনাগগ এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিনিয়ত এত এত জলসা, মিলাদ ও মজলিস হচ্ছে। এ ছাড়া আছে হাজার রকম মেডিটেশন ও নীতিবাক্য। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এতে হাতেগোনা কিছু মানুষের সংস্কার হয়। বেশির ভাগ মানুষের হয় না।
মহান আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন শুধু তিনিই নিজেকে সংস্কার করতে পারেন। বাকিরা পারেন না। তারা রিপুর কাছে হেরে যান। ব্যক্তির খাসলত না মরলে সে বদলায় না। কাজেই ব্যক্তি সংস্কার একটি দুরূহ কর্মসূচি। সুতরাং আমাদের মন দিতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্র সংস্কারে। অন্য কিছুতে নয়। এটি ব্যক্তি সংস্কারের চেয়ে অনেক সহজ ও সম্ভব। যারা রাষ্ট্র সংস্কার চায় না তারা যারা চায় তাদের থেকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং সুসংহত। কাজেই সংস্কার মানে ¯্রােতের বিপরীতে যাত্রা বা পর্বতারোহণ।
একাডেমিক সুবিধাবাদ
সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে গোপন পরামর্শ দিয়ে তার অনুগত অধ্যাপকদের ভাইস চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, রেজিস্ট্রার, প্রভোস্ট, প্রক্টর ইত্যাদি নিয়োগ করতে পারেন। একইভাবে কলেজগুলোর অধ্যাপকদের মধ্য থেকে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ করতে পারেন। সরকারি-বেসরকারি মিলে দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কলেজের সংখ্যা অনেক। অথচ এগুলোতে নেই কোনো রাষ্ট্র সংস্কারের ঢেউ। এ ছাড়াও আছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এসব স্থানের লোভনীয় পদের টোপ দেখিয়ে অধ্যাপকদের অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখার সুযোগ আছে। ফলে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে একটি বিশাল অধ্যাপক বাহিনীকে জ্ঞানপাপী হিসেবে লালনপালন করার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর আছে। দলদাস ও পদলোভী অধ্যাপকরা এসব পদের জন্য একাডেমিক স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন এবং নিজস্ব বিবেক ও মূল্যবোধ জলাঞ্জলি দিতে কখনো কসুর করেন না। মাফিয়া সরকার এদের দিয়ে পত্রিকায় কলাম লিখিয়ে নেয় এবং টকশো করায়। এরাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনির্বাচিত এবং অসাংবিধানিক বলে হাজার হাজার উপসম্পাদকীয় লিখে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে সরকারের সব অপকর্মকে বৈধতা দান করে। এটি মোকাবেলা করতে হলে বিগত সরকারের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত একাডেমিকদের সংস্কারকার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে আদর্শ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকশিত করতে হবে।
আমলাতান্ত্রিক সুবিধাবাদ
পিরামিড আকৃতির সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র সবসময় একটি সুবিধাবাদী কোটারি গ্রুপ সৃষ্টি করে আসছে। তারা উচ্চ পদগুলো দখলে হেন কোনো কাজ নেই যা করতে প্রস্তুত নয়। দলদাসত্ব, পদলেহন, চাটুকারিতা ও চামচাগিরি করে লক্ষ্য অর্জনে তারা কখনো পিছপা হয় না। তারা ভালো করে জানে, এসব বড় পদে নিয়োগে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন বা নীতিমালা নেই। দক্ষতা, যোগ্যতা, মেধা, সততা, নৈতিকতা, দেশপ্রেম- এসব যাচাইয়ের কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। এগুলো অর্জন করতে প্রয়োজন শুধু প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পা। এটি পেতে শুরু হয় তাদের নোংরা তৎপরতা। যেকোনো উপায়ে সেটি তারা অর্জন করে। এরাও কখনো রাষ্ট্রের সংস্কার চায় না; বরং বাগড়া দিতে চায়। এটি মোকাবেলা করতে হলে বিগত সরকারের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত সব আমলাকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সংস্কার কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কার ভালো না মন্দ তা বোঝানোর জন্য সংস্কারমন্ত্রে দীক্ষিত করে তাদের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে। তাদের দিয়ে জনসভা এবং পথসভা করাতে হবে।
সুবিধাবাদী গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম
রাষ্ট্রের দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের সুবিধাভোগী এক দল সাংবাদিকও আছে। এরা দীর্ঘ ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছিল। যারা বিগত সরকারের সব অপকর্ম ধামাচাপায় নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে এবং ভুল খবর দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে। রাষ্ট্রে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস না থাকলে এরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সংস্কারের কথা শুনলে এরা তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। এরা সব সংস্কার কার্যক্রমকে দিন-রাত ইউরোপ-আমেরিকার চক্রান্ত বলে প্রচার করে স্বার্থান্বেষী মহল এবং লুটেরা শ্রেণীকে রাষ্ট্রে চিরস্থায়ী করতে চায়। কাজেই যেকোনো মূল্যে সংস্কার ঠেকাতে এরাও বদ্ধপরিকর। একদল নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক সাংবাদিক এবং গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম ছাড়া রাষ্ট্র মেরামত অসম্ভব। বিগত সরকারের আমলে যারা ঝুঁকি নিয়ে দেশে অথবা বিদেশে অবস্থান করে সরকারের সব অপকর্ম জনগণকে জানিয়েছেন তাদের সংস্কারকার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। দলীয়করণের অক্টোপাস থেকে সাংবাদিক সমাজকে উদ্ধার করতে হবে। সাংবিধানিক তথ্য কমিশনের আওতায় সামাজিক ব্যবসায় তহবিল গঠন করতে জনগণের কাছ থেকে পুঁজি আহ্বান করতে হবে। সংবাদ ব্যবসার করপোরেট কর হার ৫ শতাংশ করতে হবে। এ ব্যবসায় করতে পেশাদার সাংবাদিকরা কমিশন থেকে বিনা সুদে ঋণ নিয়ে প্রতিযোগিতামূলকভাবে কোম্পানি গঠন করবেন। রাষ্ট্র সংস্কারকে উপলব্ধি ও আত্মস্থ করতে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলে এক বা একাধিক থিংক ট্যাংক থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে; যারা সংশোধিত সংবিধানের আলোকে নিজ নিজ দলের গঠনতন্ত্র ও দলীয় নীতিমালা হালনাগাদ করতে অবিরাম কাজ করবে।
সুবিধাবাদী ঠিকাদার
টেন্ডারবাজির মাধ্যমে লাভবান ঠিকাদাররা কোনো দিন রাষ্ট্র সংস্কারে আগ্রহী হবে না; বরং বাগড়া দেয়ার সুযোগ পেলে হাত ছাড়া করবে না। আলাদা উন্নয়ন বাজেট পৃথিবীর অনেক দেশে নেই। এ বাজেটে উন্নয়নের নামে লুটপাট করা সুবিধাজনক ও নিরাপদ। এতে মোটা অঙ্কের কমিশনের পাশাপাশি জনগণকে চমকও দেখানো যায়। শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে আগামী বাজেটে উন্নয়ন বাজেটের আকার যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়নের মচ্ছব বন্ধ করে শিক্ষিত বেকারদের উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে।
সুবিধাবাদী বিচার বিভাগ
প্রধানমন্ত্রীকে সংবিধান দলীয় কোটায় উচ্চ আদালতে কিছু বিচারক নিয়োগের ক্ষমতা দিয়েছে। এ ক্ষমতা পেয়ে তিনি অনুগত এবং সুবিধাবাদী উকিলদের দিয়ে কিছু বিচারক হাইকোর্টে নিয়োগ দিতে পারেন। এখানে নির্ধারিত যোগ্যতার মাপকাঠি নেই। যোগ্যতা, দক্ষতা, সততা, নৈতিকতা, মেধা, দেশপ্রেম ইত্যাদি যাচাইয়ের কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পাই যথেষ্ট এবং যা তারা অর্জনে সিদ্ধহস্ত। রাষ্ট্র মেরামতে এদেরও তীব্র অনীহা। সুতরাং এক্ষেত্রে বাধাদানে তাদের কোনো কার্পণ্য থাকবে না। বিচারহীনতা, গণতন্ত্রহীনতা, অস্বচ্ছতা ও অজবাবদিহি থাকলে লুটেরা ও স্বার্থান্বেষী মহল রাষ্ট্রে যা খুশি তাই করতে পারে।
রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো দুরভিসন্ধি আছে কিনা এবং রাষ্ট্র সংস্কার মার্কিন ষড়যন্ত্র কি না তা নিয়ে কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে বিভ্রান্তি ও অপতথ্য ছড়ায়। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা কোনোক্রমে দীর্ঘায়িত করবে না। সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে যতটুকু সময় দরকার ততটুকু নেবে। এ সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় আর কোনো দিন ফিরবে না। এ সরকার আগামী দিনের রাজনীতিতেও জড়াবে না। কাজেই নিঃস্বার্থে রাষ্ট্র সংস্কার তাদের পক্ষে সম্ভব। রাষ্ট্র সংস্কার হবে জনস্বার্থে এবং জনগণের ক্ষমতায়নে। সরকারের ক্ষমতার কাঠামো ও পরিধি বাড়িয়ে নিতে নয়।
রাষ্ট্র সংস্কার হবে মাফিয়াতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, সামন্ততন্ত্র, অভিজাততন্ত্র এবং ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অনিয়ম, অত্যাচার, অনাচার, দুরাচার, দুঃশাসন এবং উৎপীড়ন নির্মূল করতে। রাষ্ট্রের সর্বস্তরে আইনের শাসন, ন্যায্যতা, ন্যায়বিচার, ইনসাফ ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায়। রাষ্ট্র সংস্কারে আমজনতা লাভবান হবে। স্বার্থান্বেষী মহল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাজেই জনগণকে জানাতে হবে কিভাবে তারা লাভবান হবে। না জানালে স্বার্থান্বেষী মহল জনগণকে ভুল বুঝিয়ে সংস্কার বানচাল করে দেবে। জানালে নিজ গরজে সংস্কারকে তারা এগিয়ে নেবে। এ জন্য সবার আগে দরকার একটি সংস্কারবান্ধব গণমাধ্যম।
রাষ্ট্র সংস্কার স্বল্পমেয়াদে সফল করতে হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানে একটি কর্মসংস্থান অধিদফতর খুলতে হবে। সারা দেশে দল-মত নির্বিশেষে সব শিক্ষিত বেকারকে এ সংগঠনের ছাতার নিচে আনতে হবে। না আনতে পারলে লুটেরা শক্তি তাদের আবার হেলমেট বাহিনী বানাবে। শিক্ষিত বেকারদের দিয়ে সারা দেশে এসএসসি থেকে পিএইচডি গ্র্যাজুয়েট পর্যন্ত শিক্ষিত বেকারদের একটি শুমারি করতে হবে। ভোটের মাধ্যমে শিক্ষিত বেকারদের উপজেলা কমিটি, জেলা কমিটি, বিভাগীয় কমিটি এবং একটি কেন্দ্রীয় কমিটি হবে। এরা দেশের ধনী অনুসন্ধানে আয়কর বিভাগকে সার্বিক সহযোগিতা দেবে। এরপর এ শিক্ষিত বেকারদের দিয়ে দেশে শত কোটি টাকার মালিক কতজন তার একটি শুমারি করতে হবে। কালো টাকার মালিক কতজন তারও শুমারি করতে হবে। এ তালিকাভুক্ত ধনবানদের কাছ থেকে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা চাইতে হবে। তাদের দাখিল করা পরিকল্পনার ভিত্তিতে সরকারের একটি কমিটি কর্মসংস্থানবিষয়ক মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুত করবে। কমিটিতে থাকবেন রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান ও যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধন পরিদফতরের নিবন্ধক প্রমুখ।
দেশের শিক্ষিত বেকারদের ব্যাংক এবং পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন সংশোধন করে ১০ কোটি টাকা এবং তদূর্র্ধ্ব মূল্যের সব ব্যবসায় ও বিনিয়োগকে কোম্পানি আইনের আওতায় আনতে হবে। করপোরেট করহার করতে হবে ন্যূনতম ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ। আইন করে সব ব্যাংককে কমার্শিয়াল বন্ড ইস্যু করে পুঁজি সম্প্রসারণের ক্ষমতা এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও অ্যাসেট ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা ন্যস্ত করতে হবে। বাংলাদেশের সব ব্যাংককে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ব্যাংক হিসেবে গড়ে তুলে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে।
ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হতে পারে। করপোরেট সুশাসন বাড়ালে এবং করহার কমালে শেয়ারবাজার এমনি এমনি চাঙ্গা হবে বলে আশা করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো কোনো না কোনো ব্যাংকের সাথে ট্যাগ করতে হবে যাতে যৌথভাবে শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করতে পারে। প্রতিটি ব্যাংক হবে ওই এলাকার জব ব্যাংক। এক শ’ কোটি টাকার বেশি মূলধন হলে ক্যাপিটাল মার্কেটে তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক করতে হবে। তা না হলে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান সম্ভব নয়।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা