ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে বিনিয়োগ প্রয়োজন
- মো: মাঈন উদ্দীন
- ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা বর্তমানে বিপাকে আছে। বেশির ভাগ এসএমই প্রতিষ্ঠান ছোট পুঁজির উদ্যোক্তা। তারা যে পণ্য উৎপাদন করে, সেগুলো বিক্রি করে পুনরায় উৎপাদনপ্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এসএমই খাতের অবদান প্রায় ৩০ শতাংশের মতো। ব্যক্তি উদ্যোক্তার পাশাপাশি ক্লাস্টারভিত্তিক ক্ষুদ্র শিল্পায়নকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এসএমই উদ্যোক্তারা। এ জন্য প্রয়োজন গবেষণা করা, উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া, প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া, আধুনিক উৎপাদনব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত করা।
কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে দেশের দুই কোটির বেশি মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান রয়েছে। শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫ শতাংশই এসএমই খাতে। অর্থনীতির বর্তমান সঙ্কট কাটাতে এ খাতই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য অনুযায়ী, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি মিলিয়ে দেশে প্রায় ৭৯ লাখ উদ্যোগ রয়েছে। তবে বাংলাদেশ বৈশ্বিক গড় এবং প্রতিযোগী কিছু দেশের চেয়ে এখনো পিছিয়ে আছে। যেমন- শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অবদান ৫০ শতাংশের বেশি। ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ার অর্থনীতিতেও অর্ধেকের মতো অবদান এ শিল্পের। এ খাতের মধ্যে হস্তশিল্প, পাটপণ্য, চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, সিরামিক, হালকা প্রকৌশলসহ বিভিন্ন সম্ভাবনাময় খাত রয়েছে।
এসএমই খাতে বিনিয়োগ বাড়লে একদিকে কর্মসংস্থান বাড়বে, অন্যদিকে দেশের রাজস্ব আয় ও রফতানি বাড়বে। অর্থনীতির বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পই হতে পারে সবচেয়ে বড় শক্তি। মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সঙ্কোচনমূলক পদক্ষেপে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প চাঙ্গা করার বিশেষ পদক্ষেপ নিলে সেই আশঙ্কা দূর হবে। দেশে যে হারে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সেখানে কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের খেলাপি ঋণ তুলনামূলকভাবে অন্য খাতের চেয়ে কম। এ খাতে ঋণ আদায়ের হারও ভালো। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসএমই খাতে গুণগত উৎপাদন এবং গবেষণা উৎসাহিত করা গেলে বড় অঙ্কের আমদানি ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব। অন্যদিকে রাজস্ব বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রচেষ্টায় অবদান রাখতে পারে এ খাত।
এসএমই খাত বিকাশের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য সহজে ঋণ পাওয়ার সমস্যা রয়েছে। দক্ষতার সঙ্কট রয়েছে। পণ্য বাজারজাতকরণে সমস্যা রয়েছে। উদ্যোক্তা ও কর্মীদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন সব কিছুর সাথে রয়েছে অর্থনীতির সম্পর্ক। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দেশের রাজনীতিতে কর্তৃত্ববাদের বদলে গণতন্ত্র ও মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সুযোগ এনে দিলেও তা ব্যাহত হতে পারে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে। মানুষ গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের বদলে তাদের জীবন মানে উন্নয়ন হোক- এটি চায়। চায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি। সোচ্চার হচ্ছে অর্থনীতি নিয়ে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক সঙ্কোচনমূলক নীতি নিয়েছে; তারল্য সরবরাহ কমিয়েছে- এ ধরনের উদ্যোগ দেশের অর্থনীতির জন্য, শিল্পের জন্য, ব্যবসায়ীদের জন্য কতটুকু অনুকূল হবে তা দেখা উচিত।
এদিকে জ্বালানি সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি; বরং নতুন করে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকার ভাবছে। বিগত সরকারের আমলে কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী বেশ সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে, যার ফলে অর্থনীতিতে বৈষম্যের পাহাড় তৈরি হয়েছে। এ বৈষম্য ও অসামঞ্জস্য দূর করতে হলে এবং অর্থনীতির গতিকে ঠিক রাখতে হলে এসএমই বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। নানা যোগাযোগের কারণে অনেক সময় বড় ব্যবসায়ীরা তাদের সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে পেলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাবে নানা সমস্যায় রয়েছে। সহজে বিনিয়োগ পাওয়ার সুযোগ তৈরি করে এ খাতের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে উৎসাহ ও উদ্দীপনা প্রদান করা যেতে পারে। কারণ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে এসএমই খাতের অবদান অনেক বেশি ।
এ খাতের উৎপাদনপ্রক্রিয়া ও পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় আকারের শিল্পের তুলনায় অনেক কম বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে এসএমই খাত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সাময়িক হিসাবে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান বেড়ে ৩৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এতে এসএমই খাতের অবদানও বেড়েছে। এ সময়ে জিডিপিতে উৎপাদন খাতের অবদান ছিল ২৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এর মধ্যে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের অবদান ছিল ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ আর কুটির উদ্যোগের অবদান ছিল ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
কোভিড-১৯ অতিমারীর প্রভাব থাকার পরও জিডিপিতে কুটির শিল্প খাতের অবদান ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশে অপরিবর্তিত ছিল। এত সব কারণে এসএমই খাতের সহায়তা করা অনেক বেশি প্রয়োজন। এসএমই ফাউন্ডেশনকে আরো যুগোপযোগী কর্মসূচি গ্রহণ করে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে জাতীয় অর্থনীতিতে এ খাত আরো অনেক অবদান রাখতে পারে।
লেখক : অর্থনীতি বিশ্লেষক ও ব্যাংকার
ইমেইল : [email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা