কর্মসংস্থান ও শিল্পোন্নয়নে দরকার বিদেশী বিনিয়োগ
- মো: মাঈন উদ্দীন
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশ জনবহুল দেশ। জনসংখ্যা দেশের অনেক বড় সম্পদ। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে হবে। এ ব্যাপক জনসংখ্যাকে প্রয়োজনীয় সময়ে কাজে লাগাতে না পারলে তা দেশের জন্য বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে। জনসম্পদকে কাজে লাগাতে হলে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের প্রধান উপাদান হলো সস্তা শ্রম। তবে শুধু সস্তা শ্রম দিয়ে খুব বেশি বিনিয়োগ আনা যাবে না। সে জন্য তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করতে হবে। একই সাথে শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি, উন্নত অবকাঠামো ও যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে যেসব শিল্প বৃহৎ পুঁজি আকর্ষণ করে। বৃহৎ পুঁজি ও বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানেই অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হলে দেশীয় শিল্পের উন্নয়ন প্রয়োজন। কারণ দেশী শিল্প উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে বিদেশ বিনিয়োগ আসবে, বিদেশীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে। বিদেশী বিনিয়োগের পথে কী কী প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যা রয়েছে তা বের করতে হবে। আর্থিক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সব সমন্বয়হীনতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে। বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বৃদ্ধির উপায় হলো দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা হ্রাস। প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ ও শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য দরকার প্রয়োজনীয় জমি, উন্নত অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। মালয়েশিয়ার মতো দেশ যেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূলে ছিল জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের বহুজাতিক ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রচুর বিনিয়োগ। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হলে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে দেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে হবে। দেশে গত তিন দশকে কয়েকটি বিদেশী কোম্পানির সফল বিনিয়োগ হলেও বহুজাতিক কোম্পানির বিনিয়োগ তেমন আসেনি। কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি ছাড়া কাউকেই তেমন আকৃষ্ট করা যায়নি। বাংলাদেশ বিদেশী বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হলেও বিনিয়োগ পরিবেশের বিষয়টি শুধু আলোচনায়ই সীমাবদ্ধ। বিদেশীদের আকর্ষণে নানামুখী নীতি প্রণয়ন হলেও এর ধারাবাহিকতা নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে ৩০০ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। ২০২২ সালে এসেছিল ৩৪৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে বিদেশী বিনিয়োগ কমেছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বা ৪৭ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের মতে, ডলার সঙ্কটের কারণে দুই বছর ধরে অনেক বিদেশী কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে মুনাফা নিজ দেশে নিতে পারছে না। এর ফলে অনেকেই বিনিয়োগ করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। আবার অনেকে ব্যবসায় সঙ্কুুচিত করে ফেলছেন। নতুন করে ব্যবসায় সম্প্রসারণও কমিয়ে ফেলেছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। গত কয়েক বছরে সবচেয়ে বেশি বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে। দেশটি থেকে ৬১ কোটি ৩৯ লাখ ডলার বিনিয়োগ এসেছে। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্র। দেশ দু’টি থেকে যথাক্রমে- ৩৬ ও ৩১ কোটি ডলার বিনিয়োগ এসেছে। গত বছর সবচেয়ে বেশি বিদেশী বিনিয়োগ আসে উৎপাদন খাতে। মোট বিদেশী বিনিয়োগের প্রায় ৪২ শতাংশ এসেছে এ খাতে। উৎপাদন খাতের বিনিয়োগের বড় অংশই পুনর্বিনিয়োগ আকারে এসেছে। বিনিয়োগের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পেট্রোলিয়াম খাত। দেশে ইপিজেডের সংখ্যা ৯টি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বিদেশী বিনিয়োগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হিস্যা রয়েছে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের (ইজেড) বাইরের এলাকায়। প্রায় ৮৭ শতাংশ বিনিয়োগই ছিল ইপিজেড ও ইজেডের বাইরে। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে পুঁজিবাজারকে ঢেলে সাজাতে হবে। যা এফডিআই আকর্ষণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বর্তমানে বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রয়েছে তারা ইচ্ছা করলে এফডিআই দ্রুত বাড়াতে পারে। কারণ, নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিদেশে যে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তা কাজে লাগিয়ে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানো যেতে পারে। বিশেষ করে শিল্প ও উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে।
বিদেশী বিনিয়োগের জন্য সুন্দর ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, প্রশস্ত রাস্তা, বিদেশী নাগরিকদের সাথে প্রফেশনাল ব্যবহার ও আচরণ, রাজনৈতিক পরিবেশ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যোগাযোগ এবং সংযোগ (কানেক্টিভিটি) ঘটানো ও রক্ষার ক্ষমতা, প্রাকৃতিক পরিবেশ, সম্পদের প্রাচুর্য, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত অথবা প্রশিক্ষণযোগ্য জনবল, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস- ইত্যাদি বৈদেশিক বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে পারে।
লেখক : অর্থনীতি বিশ্লেষক ও ব্যাংকার
ই-মেল : [email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা