বাংলাদেশে নৈরাজ্যের ষড়যন্ত্র ও ভারতের অপপ্রচার
- মহিউদ্দিন আহমেদ
- ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পলাতক পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এবং তার ভারতীয় আধিপত্যবাদী অনুসারীরা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে, যা স্পষ্ট। সময়োচিত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেশপ্রেমিক জনতার।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরাও কয়েকটি প্রস্তাব উপস্থাপন করতে চাই।
প্রথমত, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন করা যেতে পারে। এই কাউন্সিল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষায় গোপনীয়তা রক্ষা করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে। কাউন্সিলের নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টা থাকবেন। সদস্য হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, বিশেষ করে যারা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসন ও ভারতীয় আধিপত্যবিরোধী অবস্থানের কারণে নিগৃহীত হয়েছেন এবং যারা কারাবরণ করেছেন তাদের রাখা যেতে পারে। সেই সাথে নিরাপত্তা বিশ্লেষক, গবেষক, চিন্তাবিদ এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তিন বাহিনী প্রধান পদাধিকার বলে এ কাউন্সিলের সাথে যুক্ত থাকবেন। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের নেয়া সিদ্ধান্ত সশস্ত্রবাহিনী বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
গত সাড়ে ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিককে দিয়ে সেনাবাহিনীতে দলীয়করণ করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। তা সংশোধন করতে এ কাউন্সিল ভূমিকা পালন করবে। সেই সাথে যাবতীয় গুজব ও ভয়ের অবসান ঘটাবে।
২. মিডিয়া সেল : দেশের ভাবমর্যাদা রক্ষা এবং অপপ্রচার মোকাবেলায় একটি শক্তিশালী মিডিয়া সেল গঠন করাও অত্যন্ত জরুরি। এ সেল দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি দূর করতে তথ্যভিত্তিক প্রচার চালাবে। একই সাথে, বিদেশী মিডিয়ার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং গুজব মোকাবেলায় কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। দূতাবাসগুলোতে একটি মিডিয়া সমন্বয়কারী নিয়োগ করে বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা, ভ্রমণ ও বিনিয়োগে উৎসাহিত করা এবং দেশের স্বার্থে লবিং কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা যেতে পারে। এ সংক্রান্ত দূতাবাসের কার্যক্রমের অগ্রগতি ও সাফল্যের ওপর নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
৩. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপ্লবী আকাক্সক্ষা পূরণে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সংস্কার কার্যক্রম যেন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে দেশের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে।
এ ছাড়া, অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে বিশেষ মহলের বিতর্ক সুরাহায় একটি গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত নেয়া হবে যে, অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারপ্রক্রিয়া শেষ না করা পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে কি না। এর মাধ্যমে সরকারের কার্যক্রমের বৈধতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। একই সাথে এর মাধ্যমে সমালোচকদের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব দেয়া সম্ভব হবে।
৪. দেশে লুকিয়ে থাকা পলাতক স্বৈরাচারের অনুচরদের আর্থিক শক্তি দুর্বল করতে ডিমনেটাইজেশন একটি কার্যকর পন্থা হতে পারে। বড় অঙ্কের নোটগুলো বাতিল করা হলে তা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যদি এতে ৩০ শতাংশ সফলতা আসে তাও প্রয়োজনীয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সাহায্য করতে নতুন নোট ছাপাচ্ছে। এ সুযোগে বড় অঙ্কের নোট বাতিলের মাধ্যমে কালো অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব।
এখনকার বাস্তবতা হলো- শেখ হাসিনা ও তার ভারতীয় দোসরদের ষড়যন্ত্র থেকে বাংলাদেশকে রক্ষায় রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে সমন্বিত ও শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল, মিডিয়া সেল এবং গণভোট আয়োজনের মতো উদ্যোগগুলো এই পরিস্থিতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। দেশপ্রেমিক নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এখন সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগী হওয়ার। কেননা, দলের চেয়ে দেশ বড়। মনে রাখতে হবে, বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিবেশে, বিশেষ করে ভারতের বৈরী আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের কোনো বিকল্প এই মুহূর্তে নেই। তাই সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। তবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে চলমান সংস্কার কার্যক্রমে গতি আনতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা আসা জরুরি।
লেখক : কানাডা প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা