২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বড়দিনের তাৎপর্য

-

বড়দিন, যা ক্রিসমাস নামেও পরিচিত, খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এটি যিশুখ্রিষ্টের জন্মোৎসব হিসেবে পালিত হয়। প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর দিনটি ঘিরে সারা পৃথিবীতে আনন্দ, উদ্দীপনা ও প্রার্থনার ঢেউ বয়ে যায়। কিন্তু এই উৎসবের তাৎপর্য শুধু ধর্মীয় পরিসরেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি মানবিকতা, ভালোবাসা ও ঐক্যের এক অনন্য প্রতীক।
বড়দিনের সূচনা হয় খ্রিষ্টধর্মের প্রাচীন যুগে। যদিও বাইবেলে যিশুর জন্ম তারিখ নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই, চতুর্থ শতাব্দীতে রোমান সম্রাট কনস্টান্টাইনের শাসনামলে ২৫ ডিসেম্বর দিনটি যিশুর জন্মদিন হিসেবে উদযাপন শুরু হয়। এ দিনটি রোমানদের ‘সোল ইনভিকটাস’ নামক শীতকালীন উৎসবের সাথে সম্পৃক্ত ছিল।
খ্রিষ্টধর্মের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এই তারিখকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে গ্রহণ করা হয়। প্রাচীন রোম থেকে শুরু হওয়া এই উৎসব মধ্যযুগে বিভিন্ন সংস্কৃতির মিশ্রণে নতুন রূপ নেয়। ক্রিসমাস ট্রি, উপহার বিনিময় ও ক্যারল গানের মতো উপাদান বড়দিন উদযাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।
বড়দিনের তাৎপর্য শুধু যিশুর জন্ম উদযাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি মানবতার প্রতি ঈশ্বরের গভীর ভালোবাসার এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। যিশুর জন্ম সেই সময় হয়েছিল যখন সমাজ ছিল অন্যায়, দুঃখ ও বিভেদের আঘাতে জর্জরিত। তার আগমন মানবজাতিকে শান্তি ও মুক্তির এক নতুন বার্তা দিয়েছিল। যিশু তার জীবন দিয়ে শিখিয়েছেন ত্যাগ, ক্ষমা এবং দয়ার মর্ম। আজকের বাস্তব জীবনে বড়দিনের এই শিক্ষাগুলো আরো বেশি প্রাসঙ্গিক।
বড়দিন মানুষের মনে ক্ষমার শিক্ষা দেয়। জীবনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যিশুর শিক্ষা আমাদের বিভেদ ভুলে এক হওয়ার পথ দেখায়। এই উৎসবের আরেকটি তাৎপর্য হলো সেবার বার্তা। যিশু ছিলেন দরিদ্র, অসহায় ও নিপীড়িত মানুষের বন্ধু। তিনি শিখিয়েছেন, প্রকৃত ধর্ম মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। বড়দিনের সময়ে গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করার যে রীতি প্রচলিত, তা আমাদের এই শিক্ষাই দেয় যে, মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করাই পরম ধর্ম।
বড়দিন শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটি সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন মজবুত করার একটি উপলক্ষ। বড়দিনে পরিবার একত্র হয়, একসাথে প্রার্থনা ও আনন্দ করে। বর্তমান সময়ে, যখন পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাচ্ছে, বড়দিন আমাদের শেখায় কিভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকা যায়। এটি সামাজিক ঐক্যের এক শক্তিশালী বার্তা।
বড়দিন আমাদের জীবনে আশার এক নতুন আলো জ্বালায়। যিশুর জন্ম ছিল এক নতুন সূচনার প্রতীক। জীবনের অন্ধকার সময়ে বড়দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রতিটি কঠিন পরিস্থিতির পেছনে একটি নতুন সূচনা অপেক্ষা করে।
আজকের বাস্তবতায় বড়দিনের শিক্ষাগুলো সমাজের প্রতিটি স্তরে গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের সৎভাবে জীবনযাপন, ন্যায়পরায়ণতা এবং অন্যের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার প্রেরণা দেয়। যিশুর শিক্ষা যদি আমরা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারি, তবে সমাজে শান্তি, ভালোবাসা এবং মানবতার প্রসার ঘটবে।
বড়দিন শুধু একটি উৎসব নয়, এটি এক শিক্ষা। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনের প্রকৃত অর্থ শান্তি, ক্ষমা ও ভালোবাসায় নিহিত। যিশুর জীবন আমাদের পথ দেখায় এবং তার শিক্ষা আমাদের জীবনে সত্য ও ন্যায়ের আলো ছড়ায়।
বড়দিনের মূল তাৎপর্য মানবতার এই চিরন্তন বার্তায় নিহিত।


আরো সংবাদ



premium cement
টাকা কম পেলেও রহমতগঞ্জে এসে ভালোই হয়েছে : জীবন মধ্য প্রাচ্যের প্রতিপক্ষ খুঁজছে বাফুফে বিএসএফের ধরে নিয়ে যাওয়া ১৪ বাংলাদেশী ভারতের কারাগারে মারা গেছেন পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের মেজো ছেলে গাড়িকাণ্ড : তিন নেতার সদস্যপদ ফিরিয়ে দিলো বিএনপি ‘অবহেলিত জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে সবাই এগিয়ে আসতে হবে’ চুয়াডাঙ্গায় ১৪টি স্বর্ণের বারসহ ৩ চোরাকারবারি আটক ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে : জামায়াত আমির ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ নতুনভাবে গড়ার দায়িত্ব সবার : মির্জা ফখরুল ইসলামি বিপ্লব মানে ক্ষমতা দখল নয় : নুরুল ইসলাম বুলবুল বন্দী চুক্তিতে ‘নতুন বাধা’ তৈরি করছে হামাস, অভিযোগ ইসরাইলের

সকল