কান্ট ও হিউমের দর্শনে গাজালির প্রভাব
উৎসের উচ্চারণ- মুসা আল হাফিজ
- ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
‘জগতে কোনো কার্য ঘটে না কারণ ছাড়া। যেখানে কাজ আছে, সেখানে কাজের কারণ আছে।’ কাজ ও কারণ মূলত দুই ঘটনা। যেখানে একটি ঘটনার জন্য অন্য ঘটনা ঘটে। উভয় ঘটনার মধ্যে যেটি আগে ঘটে কিংবা যে ঘটনার জন্য অন্য ঘটনা ঘটে, তাকে আমরা বলি কারণ, আর এর ফলে যেটা ঘটে পরে, তাকে বলি কার্য। ধরা যাক, বৃষ্টি হলো, মাটি ভিজে গেল। এখানে বৃষ্টি হলো কারণ, মাটি ভেজা কার্য। প্রাচীন দার্শনিকরা দাবি করতেন, কার্য-কারণ সম্পর্ক আবশ্যিক ও অনিবার্য। তবে একটি ঘটবে কেবল একটি কারণের দ্বারা। একটি কাজের একাধিক কারণ থাকতে পারে না।
ইমাম আবু হামিদ গাজালি (১০৫৭-১১১১) একে ভুল প্রমাণ করেন। তিনি দেখান, কার্যকারণের মধ্যে কোনো অনিবার্য সম্পর্ক নেই। কার্যকারণ ঘটনার পূর্বাপর সম্পর্কমাত্র। কোনো প্রাকৃতিক বস্তু বা ঘটনা অন্য কোনো বস্তু বা ঘটনার কারণ হতে পারে না। খাদ্যগ্রহণ ও ক্ষুধা নিবৃত্তি, আঘাত ও ব্যথা এগুলো কার্য ও কারণ। কিন্তু এগুলো প্রাকৃতিক ব্যাপার। প্রাকৃতিক নিয়মের কারণেই তারা পরস্পরের কার্য ও কারণ হতে পেরেছে। কিন্তু উভয়ের সম্পর্ক সম্ভাব্যতার ব্যাপার, অনিবার্যতার কোনো ব্যাপার নয়। এ থেকে কোনো নিশ্চিত জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি এক ঘটনা অন্য ঘটনার আগে বা পরে ঘটে। কিন্তু এক ঘটনা অন্য ঘটনায় রূপান্তরিত হতে পারে কি? পারে না। ফলে গ্রিক দার্শনিকরা যখন বলেন, পানি পিপাসা নিবারণের কারণ, গাজালি একে সংশোধন করেন। তার মতে, পিপাসা নিবারণের আপাত কারণ পানি। প্রকৃত কারণ আল্লাহ। আল্লাহর ইচ্ছাশক্তি দিয়েই এটি সম্পন্ন হয়। এর মানে হলো, গাজালি সব কিছুর আদি কারণ উপস্থাপন করেন।
তিনি জগতব্যবস্থায় জারি করেছেন সাধারণ নিয়ম। এই নিয়মে যা কিছু আগে ঘটছে, তাকে আমরা বলছি শর্ত, আর এর সাথে যুক্ত হয়ে যা পরে ঘটছে, তাকে বলছি ফলাফল। এই নিয়মের মধ্য থেকে জন্ম নিয়েছে আমাদের অভিজ্ঞতা, ধারণা, জ্ঞান। এর সাথে সঙ্গতিশীল ঘটনা যখন ঘটতে থাকে, আমরা তখন একে স্বাভাবিক সম্বন্ধ হিসেবেই ধরে নিই। প্রাকৃতিক বস্তু বা নভোমণ্ডলীয় কোনো সত্তাও কোনো কিছুর কারণ হতে পারে না। যেসব গতি-প্রকৃতি ও নিয়ম তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে, এগুলোর ফলেই তারা ফলাফলের সাথে যুক্ত হয়। এই নিয়ম ও গতি-প্রকৃতিই রচনা করে প্রাকৃতিক কার্য-কারণ প্রক্রিয়া।
গাজালি প্লেটোনিক বিকিরণবাদের ভ্রান্তি প্রমাণ করেন। তিনি দেখান, এর ভুল ব্যবহার থেকে কিভাবে দার্শনিকরা সব কিছুতে কার্য-কারণ সম্পর্ক খোঁজেন, আর প্রতিটি বিষয়কে এক-এক সম্পর্ক বলে ব্যাখ্যা করেন। তাদের এই ব্যাখ্যা ভুল। কারণ এটি কোনো একমাত্রিক বা এককধর্মী ব্যাপার নয়। এ হলো যৌথ প্রক্রিয়া। এ হচ্ছে অনেক শর্তের সমষ্টি। সব শর্ত যখন কেউ জানবে, তখনই বুঝতে পারবে কোনো কারণের আসল রূপ। দার্শনিকরা ভুল করে একটি কারণের জন্য একটিমাত্র কার্যকে দায়ী করছেন। প্রকৃতপক্ষে কোনো একটি ঘটনাও একটিমাত্র কারণে ঘটে না। এতে একসাথে কাজ করে অনেক কারণ, নানা রকম শর্ত। এসব কারণ ও শর্তের কোনোটা আমরা জানি, কোনোটা জানি না। খুব স্বাভাবিকভাবে অনেক কারণ ও শর্ত আমাদের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না, পরে হয়তো বিচ্ছিন্নভাবে জানা যায়। এর কারণ আমাদের দৃষ্টি ও উপলব্ধির সীমাবদ্ধতা।
প্রকৃতিতে আগের ও পরের ঘটনা কোনোটাই কোনোটার শুদ্ধ মা নয়, সন্তান নয়। তাদের মধ্যে নেই কোনো আবশ্যিক সম্পর্ক। তবুও ঘটনাগুলো সুশৃঙ্খল। এর মধ্যে রয়েছে পূর্বাপর সিলসিলা, যা নিয়মের মতো বন্ধন লাভ করে, যাকে বলা যায় কারণিক সংযোগ। কারণিক এই সংযোগ যখন নির্দিষ্টতা ছাড়াই এগিয়ে চলে, তখন সে এক পর্যায়ে এমন এক উৎস কিংবা মোহনায় গিয়ে মিলিত হয়, যার অস্তিত্ব না থাকলে এই নিয়মই থাকত না। সেই উৎস কিংবা মোহনার নাম আদি কারণ। কারণের সত্যকে মানলে আদি কারণ মানতেই হয়, যেখান থেকে সব কিছু উদ্ভূত। আদি কারণই সব কারণের শুরু ও শেষ। সে কোনো কিছুর কার্য নয়, তার জন্য না আছে কোনো শর্ত, না ফলাফলের নিয়ম। সে কারণ জগতের সব কিছু থেকে আলাদা।
সে সত্তা মুসাব্বিবুল আসবাব, সকল উপাদানকে সম্ভব করে যে। সক্রেটিস-এরিস্টটল একে আদি কারণ হিসেবে মানলেও মনে করতেন, তিনি ইচ্ছাহীন, তার কোনো ক্রিয়াশীলতা নেই। তার সারধর্ম হলো চিন্তন এবং তার এই চিন্তন থেকেই সব কিছুর সৃষ্টি। গাজালি একে ভুল প্রমাণ করেন। তিনি দেখান, আদি কারণ নিষ্ক্রিয় নন, ইচ্ছাহীন নন, তিনি কেবল চিন্তন নন। তার ইচ্ছা ও নিজস্ব সক্রিয়তা সব কিছুর মূল কারণ। কারণ ইচ্ছা চিন্তনের পূর্বগামী।
ডেভিড হিউম (১৭১১-১৭৭৬) কিংবা তার পূর্ববর্তী জন লক (১৬৩২-১৭০৪)সহ বহু দার্শনিক প্রাচীন গ্রিক চিন্তাধারার অনুগামী ছিলেন। কিন্তু ধারাবাহিক অধ্যয়ন ও চিন্তার পরিক্রমায় হিউম স্বীকার করেন, কার্য-কারণ পরম্পরা আমাদের জ্ঞান দেয় না। তার মতে, জ্ঞান লাভের আসল ভিত্তি হচ্ছে সংবেদন এবং ধারণা। কারণ ও কার্যের অনিবার্যতা অস্বীকার করেন হিউম অভিজ্ঞতা ছাড়া শুধু বিশ্লেষণ দ্বারা কার্যকে কারণের মধ্যে পাওয়া যায় না। কারণের তাফসির করে কার্যের ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়। খাদ্যকে শর্ত মেনে ক্ষুধা নিবারণকে ফলাফল বলে রায় দেয়া হয়। কিন্তু ক্ষুধা নিবারণ তো খাদ্যের মধ্যে নেই। কারণ খাদ্যকে যতই বিশ্লেষণ করি, ক্ষুধা নিবারণ পাওয়া যায় না। ফলে উভয়টার মধ্যে অনিবার্য সম্পর্ক নেই। কেউ যদি বলেন, খাদ্য ক্ষুধা নিবারণ করে না, তাহলে সেটা অযৌক্তিক হবে না। যেহেতু কারণ ও কার্য দু’টি আলাদা ব্যাপার অভিজ্ঞতা আমাদের জানায়, ঘটনাসমূহের মধ্যে সিলসিলা আছে, একটির সাথে আরেকটির সহাবস্থান আছে। কিন্তু অনিবার্য সম্পর্ক নেই। হিউম কবুল করেন, কোনো ঘটনার কারণ আসলে একটি মাত্র নয়, বহুমুখী কারণ রয়েছে। ফলে একটি কারণের ওপর ফলাফলের দায়ভার চাপানো যায় না।
ডেভিড হিউমের মতবাদ গাজালির কার্য-কারণ মতবাদের বংশধর। কারণ ও কার্যের মধ্যে অনিবার্য সম্পর্কের অস্বীকৃতি ঘোষণা করেছিলেন গাজালি। একাদশ শতকে সেই ঘোষণার প্রতিধ্বনি করেন হিউম। হিউম কার্য-কারণের সম্পর্কের নির্ভরতা দেখান আমাদের অভিজ্ঞতায়।
অভিজ্ঞতার সীমাবদ্ধতা হিউমকে নানা বিকারের কবলে ফেলেছে। কিন্তু তার তত্ত্বের যা সারবত্তা, তা বলতে গেলে গাজালির প্রতিধ্বনি।
ফরাসি ভাববিশারদ আর্নেস্ট রেনান (১৮২৩-১৮৯২) বলতেন, সাত শতাব্দী আগে গাজালি যা বলেছেন, তার ওপর একটিও নতুন কথা বলতে পারেননি হিউম। কিন্তু কেবল হিউম নয়, গাজালির কার্য-কারণ তত্ত্বের ছায়া ধরে অগ্রসর হয় বিখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের এ বিষয়ক তত্ত্বও।
আধুনিক ইউরোপীয় দর্শনের অন্যতম যুগান্তকারী চিন্তাবিদ কান্টের দর্শন সাধনাও অনেকাংশে গাজালির অনুকারী।
ইমানুয়েল কান্টের ‘ক্রিটিক অব পিউর রিজন গ্রন্থ জ্ঞানতত্ত্ব ব্যাখ্যা করেছে। তিনি এতে অভিজ্ঞতাবাদ এবং যুক্তিবাদের সমালোচনা করেন কান্ট দেখান, মানুষের জ্ঞান শুধু সংবেদনশীল অভিজ্ঞতা (অভিজ্ঞতাবাদ) বা একক (যুক্তিবাদ) থেকে আসে না। তিনি দেখান, জ্ঞান সর্বজনীন এবং একই সাথে প্রয়োজনীয়। কিন্তু তা অভিজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত নয়।
মন কিভাবে সংবেদনশীল অভিজ্ঞতা তৈরি করে তা ব্যাখ্যা করার জন্য কান্ট ট্রান্সসেন্ডেন্টাল নান্দনিক এবং ট্রান্সসেন্ডেন্টাল লজিক ধারণা প্রবর্তন করেন; দাবি করেন, স্থান এবং সময় বাহ্যিক বস্তুর অন্তর্নিহিত নয় বরং তা হচ্ছে মানুষের অন্তর্দৃষ্টির একটি অগ্রগণ্য রূপ। মন অশোধিত সংবেদনশীল তথ্যের ওপর কার্য-কারণ এবং পদার্থ ইত্যাদিকে আরোপ করে। যা বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি ও জ্ঞান গঠন করে।
অভিজ্ঞতাবাদ ও যুক্তিবাদের কান্টিয় বিশ্লেষণের পূর্বসূরিতা আছে। এই বিচারধারার পূর্বপুরুষ হিসেবে গাজালিকে হাজির করা হয়েছে। তিনি তার তাহাফুতুল ফালাসিফায় জ্ঞান এবং সংশয় সম্পর্কে গুরুতর আলাপ করেন। প্রাচীন গ্রিকদের তো বটেই, আপন সময়ের দার্শনিকদেরও সমালোচনা করেছেন গাজালি, বিশেষ করে যারা গ্রিক চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত, যুক্তির ওপর তাদের অত্যধিক নির্ভরশীলতা এবং অভিজ্ঞতাকে যারা সারসত্য মনে করেন।
গাজালি জ্ঞানের বুনিয়াদে কাশফ (ঐশী উদঘাটন) ইলহামের (ঐশী প্রেরণা, ইশারা) অবস্থানকে স্পষ্ট করেন এবং সর্বোপরি অহিকে জোরালোভাবে তুলে ধরেন। যুক্তিবাদ ও অভিজ্ঞতার সমালোচনায় কান্ট গাজালির ছায়া মাড়িয়ে চলেন। কিন্তু সমাধান নির্দেশে দু’জনের পথ আলাদা হয়ে যায়।
কান্ট প্রথাগত অধিবিদ্যার সমালোচনা করেন। তিনি দেখান, সম্ভাব্য অভিজ্ঞতার নাগালের বাইরে আদিভৌতিক প্রশ্নগুলো অজানা বিষয় ফলে তা অর্থহীন।
তবে গাজালি একটি সামগ্রিক আদিভৌতিক কাঠামোকে আলিঙ্গন করেছিলেন। যেখানে আল্লাহই চূড়ান্ত বাস্তবতা, অন্য সব কিছুই তাঁর থেকে অস্তিত্ব লাভ করে। গাজালি বিশ্বের আকস্মিকতার পক্ষে যুক্তি দেন। তিনি দেখান, জগত সৃজিত, সে আপন অস্তিত্বের জন্য প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। গাজালির নৈতিকতা গভীরভাবে আল্লাহর সাথে যুক্ত। এর মর্মমূলে আছে বিশুদ্ধ ইচ্ছা (নিয়ত) ও নিষ্ঠা (ইখলাস)। কান্টের কাছে নীতিবিদ্যার মর্মমূলে আছে সদিচ্ছা (Good Will)। একমাত্র সদিচ্ছাই নিরপেক্ষ। কারণ সদিচ্ছা কোনো শর্ত ছাড়াই সৎ। এই শর্তহীন সততার কারণে সে অবস্থায় খারাপ হতে পারে না। তার জন্য আর কিছুর দরকার নেই, নিজের আলোতেই সে আলোকিত। কিন্তু কেন সদিচ্ছার এত গুরুত্ব? কান্টের মতে, যেহেতু ইচ্ছা কর্তব্যের জন্য কাজ করে, ইচ্ছা ছাড়া কর্তব্য সম্পন্ন হয় না। ফলে সে কর্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং কর্তব্যের জন্যই সে অস্তিত্বে আসে। আর যা কর্তব্যের জন্য অস্তিত্বে আসে, তার নৈতিক মূল অবধারিত। কান্টের সদিচ্ছা তত্ত্ব গভীরভাবে গাজালির ইহইয়াউ উলুমিদদ্বীন দ্বারা প্রভাবিত। গাজালি যে প্রক্রিয়ায় নিয়ত ও ইখলাসকে (নিষ্ঠা) ব্যাখ্যা করেছেন, কান্ট অংশত তারই প্রতিধ্বনি করেন।
হিউমের সংশয়বাদ কান্টকে নির্বিচারবাদ থেকে মুক্তি দিয়েছিল। কিন্তু কান্ট স্পৃষ্ট হয়েছিলেন গাজালির নিজস্ব সংশয়বাদ দ্বারা। গাজালিও ঐশীজ্ঞানের ক্ষেত্রে ঘোষণা করেন প্রজ্ঞার অক্ষমতা। তিনি নিশ্চিত জ্ঞানের সন্ধান করেন সুফি তন্ময়তার মধ্যে। আর কান্ট কার্যকরী প্রজ্ঞার মধ্যে পেয়েছিলেন জ্ঞানের নিশ্চয়তা।
কিন্তু গাজালি পরবর্তী মুসলিম দর্শন তার তত্ত্বের সুফল ভোগ করতে পারেনি সেভাবে। সেকালে গাজালির পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের চূড়ান্ত বিকাশ না ঘটার জন্য ‘যান্ত্রিক ব্যবস্থার শৈশবকে’ দায়ী করেন কমরেড এম এন রায়। কান্ট সেই দর্শনকে কাজে লাগান ‘শ্রেণী-স্বার্থের প্রতি মানুষের অনুরাগ’ লক্ষ্য করে। এম এন রায়ের ভাষায়- গাজালির মতবাদ ছিল তার সময়ের বহু অগ্রবর্তী। বাস্তব উপকরণের অভাবে এই আরব চিন্তানায়কের নভোচারী মনের বলিষ্ঠ পক্ষপুট খর্বিত করে দিলো। অন্য দিকে শ্রেণী-স্বার্থের প্রতি মানুষের অনুরাগ কান্টের প্রমাণ অভিসারি (Critical) প্রতিভাকে করলো অভিভূত।
এভাবেই শত শত বছর ধরে পশ্চিমা দর্শনে গাজালির প্রভাব ও প্রতাপ নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত থেকেছে। দশম শতকে টলেডোর দার্শনিক জেহুদা হেলেভি তার কিতাবুল খাজারি লেখেন হিব্রু বর্ণমালায়, আরবি ভাষায়। এ গ্রন্থে পুরোপুরি অনুকরণ করা হয় গাজালির তাহাফুতুল ফালাসিফার পদ্ধতি। অপর ইহুদি দার্শনিক হাসদাই ক্রেসকাসের রচনাও তাহাফুতের অনুকরণে রচিত।
খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই গাজালির গ্রন্থাবলির ল্যাতিন ও হিব্রু তর্জমা আরম্ভ হয়। তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থাবলী খ্রিষ্টান ও ইহুদি পণ্ডিতদের অবলম্বন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল ‘মাকাসিদুল ফালাসিফা’। বহু অনুবাদ ও বহুভাষ্য প্রকাশিত হয় এর। সতেরো শতকের পূর্ব পর্যন্ত গ্রন্থটি পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে পাঠ্য হিসেবে ছিল সমাদৃত।
ইউরোপের শ্রেষ্ঠ মনীষী টমাস একুইনাস (১২২৫-১২৭৪) গাজালি ও অন্য মুসলিম চিন্তাবিদদের দান স্বীকার করেন। অনুবর্তিতার এ ধারা পরে অব্যাহত থেকেছে অভিজ্ঞতা ও আধ্যাত্মিকতার বিভিন্ন দর্শনের পাশাপাশি প্রভাবের ভাষ্যে। বস্তুবাদপীড়িত আজকের পৃথিবীতে সেই দর্শন নতুন উজ্জীবনের ঐশী সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের দরোজায় কড়া নাড়ছে। ড. অগাস্টাস থৌলাস-এর মতো দার্শনিক তাই গাজালিকে অভিহিত করেছেন সত্যিকার ঐশীগুণসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে। যার প্রভাব আরো অনেকের মতো কান্ট ও হিউমের ভাবনায় গভীরভাবে জ্যোতি বিস্তার করেছিল।
লেখক : কবি, গবেষক
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা