০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`
তৃতীয় নয়ন

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক থাকতে হবে

-


চট্টগ্রামে মধ্যরাতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের মিছিল হচ্ছিল রেলস্টেশনের সামনে। সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়। অপর দিকে রাজশাহীতে পুলিশের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। সরকার বলেছে, ‘এ ঘটনার পেছনে কোনো রাজনীতি নেই। ওরা আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেছে।’ কথাটি না বললেও হতো। মানুষ জানে, পতিত সরকারের সময় তাদের একনিষ্ঠ অনুগত ছাড়া কেউ নিয়োগ পায়নি। তারা উচ্ছৃঙ্খল হবে- এটিই স্বাভাবিক। ভারতীয় মিডিয়া ও সরকার এসব নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এর মধ্যে চট্টগ্রামের ইসকনের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। ভারত সরকার এ ব্যাপারে বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছে। ইসকনের জনৈক নেতাকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বন্দী করা হয়েছে। সাথে সাথে তার ভক্তরা ক্ষেপে ওঠে এবং একজন আইনজীবীকে পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করে। চট্টগ্রামে এ নিয়ে আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেন এবং কর্মবিরতি পালন করেন। সারা দেশে এর প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালিত হয়। ইসকনের নেতারা বহিষ্কৃত কি না, সেটি বড় কথা নয়। তার ভক্তরা যা করেছে, তা অবর্ণনীয়। সরকারের একজন উপদেষ্টা বলেছেন, ইসকন নেতাকে বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের নেতাকে গ্রেফতার করা হয়নি। তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য একজন উপদেষ্টা বলেছেন, সরকার দেশের মানুষের মধ্যে সম্প্রদায়গত বিভাজন চায় না। তবু উসকানি দেয়া হচ্ছে। সরকার উসকানির কোনো ফাঁদে পা দেবে না। এমনকি ধর্মীয় উপদেষ্টা বলেছেন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য, ইসকন একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। এর পুরো অর্থ ‘আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণভাবনা সংঘ’। এই সংগঠন বাংলাদেশে বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। ঢাকাতেও এর কাজ রয়েছে। এরা ঢাকার স্বামীবাগে অন্যের মন্দির দখল করে জাঁকিয়ে বসেছে। চট্টগ্রামে বিশেষভাবে এরা শক্তিশালী এবং সেখানে হাজারি গলিতে আক্রমণ চালিয়েছে পুলিশের ওপর। তখন এই হামলাকারীদের বহিষ্কৃত বলে দাবি করা হয়। দিন দিন এরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সরকার বলছে, বাইরের উসকানি না থাকলে এক দিনে এত ঘটনা ঘটতে পারে না। এর পেছনে দেশী-বিদেশী হাত থাকতে পারে। ভারত সরকার এ নিয়ে প্রচার করছে। এ দিকে শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি এক মাসের মধ্যে ঢাকা আসবেন। এরপর সব চুপচাপ। তার ছেলে এবং অন্যতম প্রভাবশালী উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় নির্বাচনের দাবি নিয়ে এখন চুপচাপ আছেন। জয় বলেছিলেন, তার মাকে মারা এত সহজ নয়। তার দেহরক্ষীরা জীবন দেবে, তবু নেত্রীকে মারতে দেবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, রক্ষীরা সবাই গণভবন ছেড়ে পালিয়েছে আর শেখ হাসিনা বোনসহ হেলিকপ্টারযোগে পালিয়ে ভারতে নিরাপদ আশ্রয়ে।

আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি শেখ হাসিনাকে সমর্থন করবেন না। এখন হাসিনা দেশে আসেন কি না দেখার বিষয়। ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার শুরু হয়েছে। অপর দিকে ভারত তাকে ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে অভিহিত করছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মা এ ব্যাপারে মুখ খুলছেন না। ভারত সরকার বলছে, অনুরোধে তাকে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে। আগে থেকে সব কিছু ঠিকঠাক না থাকলে তিনি বোন শেখ রেহানাসহ আগরতলা হয়ে দিল্লি যেতে পারেন না। তিনি এখন খুবই ব্যস্ত এবং ভারতে বসে জোরেশোরে ঘোঁট পাকাচ্ছেন। এর বিরুদ্ধে এক থাকতে হবে। অন্যথায় ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঘটতে পারে। বিএনপিও এ ব্যাপারে সচেতন। তারেক রহমান এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম বলছেন, আওয়ামী লীগ টাকা ছিটাচ্ছে তাদের লোকদের সক্রিয় রাখতে। ওরা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেছেন, পাল্টা বিপ্লব হতে পারে। দেশ এখনো স্থিতিশীল নয়। সবাইকে সব সময় সতর্ক থাকা দরকার।

 


আরো সংবাদ



premium cement