ইসলামে উদারতা
- প্রফেসর কর্নেল (অব:) ডা: জেহাদ খান
- ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
‘যাদেরকে অন্তরের সঙ্কীর্ণতা থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফল।’ (আল কুরআন ৫৯:৯) আয়াতটি কুরআনের ৬৪ নাম্বার সূরায় পুনরাবৃত্তি হয়েছে। দুনিয়ার এ পরীক্ষাগারে কর্মসম্পাদনের জন্য মহান আল্লাহ আলো, বাতাস, পানিসহ অসংখ্য নিয়ামত মুসলিম অমুসলিম সবাইকে সমানভাবে দান করেছেন। রাসূল সা: তাঁর দাস যায়েদ রা:কে এত আদর যত্নে লালন পালন করেন যে তাঁর বাবা চাচা তাঁকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলে তিনি যেতে অনীহা প্রকাশ করেন।
আনাস রা: রাসূলের সান্নিধ্যে বাল্য বয়সে ১০ বছর অতিবাহিত করেছেন। তিনি তাঁকে কোনো দিন অনুযোগ করেননি যে, কেন তিনি এ কাজটি করেছেন। আয়েশা রা: অল্প বয়সে রাসূলের ঘরে যান। তিনিও ছোটখাটো ভুল করেছেন। এজন্য তাঁকে তিনি কোনো দিন তিরস্কার করেননি। একজন প্রতিবেশী রাসূলের চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখত। একদিন তা দেখতে না পেয়ে রাসূল তার খোঁজ নিতে গেলেন যে সে অসুস্থ কিনা। একজন ইহুদি তাঁর অতিথি হয়ে এলো। তাকে তিনি ভালোভাবে আপ্যায়ন করলেন। কিন্তু যাওয়ার সময় বিছানায় সে মলত্যাগ করে গেল। কিন্তু তার তলোয়ারটি সে ভুলে ফেলে গেল। সে যখন ভয়ে ভয়ে তা ফেরত নিতে এলো, তিনি তাকে কোনো কটু কথা বললেন না বরং দুঃখ প্রকাশ করলেন তার অসুস্থতার জন্য। তার এ উদারতা দেখে ব্যক্তিটি মুসলমান হয়ে গেল।
‘ভালো ও মন্দ সমান হয় না। প্রতিহত কর (মন্দকে) তা দিয়ে যা উত্তম, ফলে তখন তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা আছে সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো।’ (আল কুরআন ৪১:৩৪)
আবু বকর রা:-এর এক গরিব আত্মীয় ছিল যাকে তিনি নিয়মিত সাহায্য করতেন। তিনি আয়েশা রা:-এর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ প্রচারে শরিক হন, যা রাসূল ও তাঁর সহধর্মিণীকে অবর্ণনীয় কষ্ট দেয়। আবু বকর রা: এ কথা জানতে পেরে ঘোষণা করেন যে, তিনি তার মাসোহারা বন্ধ করে দিবেন। মহান আল্লাহ তখন আয়াত নাজিল করলেন যেন এ কাজ না করা হয়। রাসূল সা:কে নানারকম মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে যেমন- কবি, জাদুকর, গণক, মিথ্যাবাদী জিনগ্রস্ত, আবু কাবশা ইত্যাদি। এগুলোর তিনি কোনো জবাব দিতেন না। তাকে অন্তত ৮-৯ বার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অপরাধী হাতে নাতে ধরা পড়েছে। তারপরও তিনি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন।
‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে রাখে এবং অন্যের দোষত্রুটি মাফ করে দেয়। এ ধরনের সৎ লোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন। (আল কুরআন ৩:১৩৪)
রাসূল সা: ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ নিতেন না। তিনি শুধু যুদ্ধের ময়দানে এবং আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কঠোর হতেন। মক্কা বিজয় পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা হয়ে আছে। মক্কার কুরাইশরা রাসূল ও তাঁর সাহাবিদের নানাভাবে অত্যাচার করেছে, অনেক সাহাবিকে হত্যা করেছে এত কিছুর পরও রাসূল কয়েকজন বিশেষ অপরাধী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দিলেন। যুদ্ধবন্দীদের সাথেও রাসূল নজিরবিহীন উদার আচরণ করেছেন। বদরের যুদ্ধবন্দীদেরকে সাহাবিরা ঘোড়া বা উটের পিঠে বহন করেছেন আর নিজেরা গিয়েছেন পায়ে হেঁটে। তাদেরকে রুটি খেতে দিয়েছেন যদিও নিজেরা খেয়েছেন শুকনো খেজুর। শত্রুরা মুসলিমদের লাশকে বিকৃত করেছে অথচ মুসলিমরা শত্রুদের লাশ কবরস্থ করেছেন।
জেরুসালেম দুইবার মুসলিমরা জয় করেন। ওমর রা:-এর সময় ও সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর সময়। এ সময়গুলোতে সাধারণ জনগণের প্রতি মুসলিমদের আচরণ ছিল কত মানবিক! অথচ ক্রুসেডাররা জেরুসালেম দখল করার পর নির্বিচারে হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশু পর্যন্ত হত্যা করেছে। প্রফেসর কে এস রামা কৃষ্ণ রাও বলেন, মুহাম্মদ সা: যুদ্ধক্ষেত্রকেও মানবিক আচরণ করেছেন। তিনি কঠোরভাবে নিষেধ করেছিলেন কারো তহবিল হস্তগত করা, ধোঁকা দেওয়া, বিশ্বাস ভঙ্গ করা, নির্যাতনপূর্বক হত্যা, অঙ্গচ্ছেদ করা, শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধ হত্যা, লুটতরাজ করা, সম্পদ নষ্ট করা, ফলবান বৃক্ষ কাটা ও উপাসনাকারী কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করা।’
আমাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনেও রাসূল উদারতার অনেক শিক্ষা দিয়েছেন। একদিন তিনি বালক আনাসকে বললেন ওমুককে ডেকে নিয়ে আসো। তিনি জবাব দিলেন ‘পারব না’। রাসূল কিছুই বললেন না। কিছুক্ষণ পর এসে তাকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি এখনো পারবে না? আনাস লজ্জিত হয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ এখন পারব। রাসূল কোনো খাবারের কখনো দোষ ধরতেন না। পছন্দ না হলে তিনি খেতেন না। অথচ আমাদের সমাজে এরকম সামান্য জিনিস নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগে ঘর পর্যন্ত ভেঙে যায়। একদিন সকালে রাসূল ঘরে এসে জিজ্ঞাসা করলেন ঘরে খাবার কি আছে? উত্তর পেলেন, কিছুই নেই।
তিনি তখন বললেন, তাহলে আমি আজ রোজা রাখলাম। পাশ্চাত্যের এক নওমুসলিম বলেন, এরকম অবস্থা হলে আমরা গৃহকর্ত্রীকে বলি কেন তুমি আগে বলনি, তুমি দেখছি এক সমস্যা। একবার রাসূল জানতে চাইলেন ঘরে তরকারি কী আছে? বলা হলো যে শুধু সিরকা আছে। তা দিয়েই তিনি রুটি খেতে লাগলেন, বললেন, সিরকা কতই না ভালো তরকারি। অথচ আমরা সিরকা দিয়ে রুটি খেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। এক যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে আয়েশা রা: তার ধার করা গলার হার হারিয়ে ফেললেন। এজন্য রাসূল তাঁকে কিছুই বললেন না। তিনি সমস্ত বাহিনীকে থামালেন এবং কিছু লোককে পাঠিয়ে দিলেন হারটি খোঁজার জন্য। অথচ আবু বকর রা: এসে তাঁর মেয়ের উপর রাগ করতে লাগলেন। এই নিবেদিতপ্রাণ মহান সাহাবি একদিন তার গোলামের চেয়ে নিম্নমানের কাপড় পরেছিলেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন যে, তিনি বৃদ্ধ আর সে যুবক। কাজেই ভালো মানের কাপড় তারই বেশি দরকার। ওমর এর সময় একজন অমুসলিম ভিক্ষা করছিল। তা দেখে তিনি তাড়াতাড়ি তার ভাতার ব্যবস্থা করে দেন। ইমাম ইউসুফের আদালতে একজন ইহুদি মহিলা বাদশা হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করল। নির্ভীক কাজী ওই মহিলার পক্ষে রায় প্রদান করলেন। সম্রাট আলমগীরকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে ভারতীয় প্রচারমাধ্যম সাধারণত চিত্রায়িত করে থাকে। অথচ তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকায় হিন্দুদের মন্দির সংস্কার করেছিলেন। বর্তমান সময়েও অনেক মুসলিম দেশে অমুসলিম সংখ্যালঘুরা বাস করে। তাদের সাথে অনেক উদার আচরণ করা হয়। এসব দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিমদের ওপর নির্যাতনের কোনো নজির নেই। অথচ অধিকাংশ অমুসলিম দেশে সংখ্যালঘু মুসলিমরা নির্যাতনের শিকার। এভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শিক্ষা অনুসরণের ফলে সর্বযুগে মুসলিমরা উদারতার পরিচয় দিয়েছে।
এবার অমুসলিমদের উদারতা প্রসঙ্গে। অমুসলিমদের কাছে যেহেতু সৃষ্টিকর্তা ও তাঁর বাণীবাহক বা অবতারের দিকনির্দেশনা অবিকৃত অবস্থায় সুরক্ষিত নেই, কাজেই তারা উদারতার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। কুরআনের ভাষায়, ‘যখনই তারা ক্ষমতার অধিকারী হয়, তখনই চেষ্টা করে যাতে সেখানে অকল্যাণ সৃষ্টি করতে পারে। আল্লাহ ফ্যাসাদ ও দাঙ্গা হাঙ্গামা পছন্দ করেন না।
ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো ক্ষমতার অধিকারী হয়ে অস্ট্রেলিয়াতে ২০ মিলিয়ন আদিবাসীকে ও উত্তর আমেরিকায় ১০০ মিলিয়ন এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ৫০ মিলিয়ন রেড ইন্ডিয়ানকে হত্যা করেছে। ১৮০ মিলিয়ন আফ্রিকান কালো মানুষকে ক্রীতদাস বানিয়ে আমেরিকায় নেয়া হয়েছিল যাদের শতকরা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ সমুদ্রপথেই মারা গিয়েছিল। আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোটি কোটি লোক হত্যা করা হয়েছে। শুধু হিরোশিমাতেই একদিনে নিহত হয়েছিল এক লাখ ২০ হাজার লোক। ক্ষমতার অধিকারী হয়ে মিয়ানমারের সামরিক ও বেসামরিক জান্তা আরাকান মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। অথচ অহিংসবাদ বৌদ্ধধর্মের অন্যতম মূলনীতি। মুসলিমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিসহ ৭০০ বছর ভারত শাসন করেছে এবং এর আর্থসামাজিক উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছে এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। ব্রিটিশদের মতো তারা ভারতের ধনসম্পদ নিজের দেশে পাচার করে দু’টি দুর্ভিক্ষ উপহার দেয়নি। বোম্বের এক নায়িকা যথার্থ বলেছেন, ‘মুঘলদের আগমন ছিল ভারতের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তারা না এলে এখনো আমাদেরকে স্বামীর চিতায় পুড়ে মরতে হতো।’ ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি উল্লিখিত কুরআনের আয়াতটির কথা মনে করিয়ে দেয়। তারা ক্ষমতার অধিকারী হয়ে মুসলিমদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করেছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংস, গুজরাট হত্যাকাণ্ডসহ প্রতিনিয়ত মুসলিমদের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন করে চলেছে। তারাই আবার আমাদের দেশে দূরবীন দিয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা খুঁজে বেড়ায়।
‘যখনই তাদের বলা হয় যে পৃথিবীর বুকে দাঙ্গা ফাসাদ সৃষ্টি করো না, তখন তারা এটাই বলে যে আমরা তো মীমাংসাকারী ও সংস্কারক।’ আল কুরআন
কোথাও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে লাখ লাখ মানুষ হত্যা করা হয়েছে। কোথাও সামরিক স্বৈরতন্ত্র উচ্ছেদ, কমিউনিজম প্রতিরোধ, সন্ত্রাস দমন এবং গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র এর নামে লাখ লাখ লোক হত্যা করা হয়েছে বা হচ্ছে। পাশ্চাত্য সভ্যতার জন্মই হয়েছে নিষ্ঠুরতা, প্রতিহিংসা পরায়ণতা ও অনুদারতার ওপর ভিত্তি করে।
গত ২০০০ বছরের ইতিহাস এসব উদাহরণে ভরপুর, যার কিছুটা ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি। এ সভ্যতা ২০০০ বছর ইহুদিদের হত্যা করেছে অত্যাচার করেছে আর মুসলিমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে পর্যন্ত নিয়োগ দিয়েছে। সেই ইহুদিরা ক্ষমতা পেয়ে মুসলিমদের সাথে বিশেষ করে, প্যালেস্টাইনের মুসলিমদের সাথে কী রকম বর্বরোচিত আচরণ করছে তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। তারা নারী, শিশু, স্বাস্থ্যকর্মী, হাসপাতাল, সাংবাদিক, জাতিসঙ্ঘ কর্মকর্তা কাউকে তাদের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রেহাই দিচ্ছে না। এ ব্যাপারে পাশ্চাত্যের শক্তিধর অনেক দেশ ইসরাইলকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। পাশ্চাত্য সভ্যতা বর্তমানে ক্ষয়িষ্ণু। পৃথিবীবাসী বর্তমানে কল্যাণকামী একটি সভ্যতার অপেক্ষা করছে যা ইসলাম ছাড়া আর কিছুই নয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, পাশ্চাত্য সভ্যতা বিভিন্ন মুসলিম দেশে এখনো নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে আছে। তারা নিজেদের দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, উদারতা, সামাজিক নিরাপত্তা, আইনের শাসন ইত্যাদি দেখতে পছন্দ করে কিন্তু মুসলিম দেশের ক্ষেত্রে ঠিক বিপরীত জিনিস কামনা করে। তারা মুসলিম দেশগুলোতে গণতন্ত্র ধ্বংস করে স্বৈরশাসককে ক্ষমতায়ন করে যারা তাদের উদ্দেশ্য সাধনে সহায়ক হয়ে থাকে। তারা তাদের উদ্দেশ্য গোপন রেখে নানাভাবে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে যেমন ঋণ প্রদান, প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নানা খাতে সহায়তা।
তাদের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে মহান আল্লাহ বলেন :
‘হে মুমিনগণ যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমরা যদি তাদের একটি দলের আনুগত্য কর তারা ঈমানের পর তোমাদেরকে কাফের অবস্থায় ফিরিয়ে নেবে।’ (আল কোরআন ৩ : ১০০)
মহান আল্লাহ আরো বলেন :
‘হে মুমিনগণ তোমরা তোমাদের ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের সর্বনাশ করতে ত্রুটি করবে না। তারা তোমাদের মারাত্মক ক্ষতি কামনা করে। তাদের মুখ থেকে যে শত্রুতা প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে আর তাদের অন্তরসমূহ যা গোপন করে তা অধিক ভয়াবহ। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্ট বর্ণনা করেছি, যদি তোমরা উপলব্ধি করতে।’ (আল কুরআন ৩ : ১১৮)
ব্রিটেনের বর্তমান রাজা চার্লস বলেন, ‘ইসলাম ধর্মীয় সহিষ্ণুতার উদাহরণ স্থাপন করেছে যা ইউরোপে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ছিল। ইসলাম আমাদের অতীত ও বর্তমানের একটি অংশ, জীবনের সর্বক্ষেত্রে, যা আধুনিক ইউরোপ তৈরিতে সহায়তা করেছে।’
অধ্যাপক ব্রিফল্ট বলেন, ‘আমরা যাকে বিজ্ঞান বলে আখ্যায়িত করি তা জিজ্ঞাসু মন, নতুন অনুসন্ধান পদ্ধতি, পরীক্ষণ-নিরীক্ষণ পদ্ধতি এবং গণিতশাস্ত্রের অগ্রগতির ফলে ইউরোপে বিকাশ লাভ করে যা সরবরাহ করেছিল আরবগণ।’ অথচ ইউরোপের উদারতার নজির দেখুন। তাদের সব প্রচারমাধ্যম অনবরত প্রচার করে চলেছে যে ইসলাম প্রগতির অন্তরায় এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, সন্ত্রাসবাদের জন্ম দেয়। যে ইউরোপ ও স্পেনকে মুসলিমরা আলোকিত করল, যুদ্ধের পর তাদের সাথে স্পেনে কেমন আচরণ করা হলো? তারা মুসলিমদেরকে নিরাপত্তার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে মসজিদে মসজিদে একত্র করল। তারপর তাদেরকে মসজিদ বন্ধ করে পুড়িয়ে হত্যা করল। অন্য মুসলিমদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে জাহাজে তুলে সমুদ্রে ডুবিয়ে মারল। এরপর যারা স্পেনে রয়ে গেল তাদেরকে বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করল। ইহুদিদেরকেও তারা হত্যা করল বা দেশান্তরিত করল। অর্থাৎ নিষ্ঠুরতা হচ্ছে ইউরোপীয় সভ্যতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ।
ইসলাম মানবতাকে নিষ্ঠুরতা থেকে মুক্তি দিতে পারে। তারা মুসলিমদের চিকিৎসাবিজ্ঞান, গণিত, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা জ্যোতির্বিদ্যা ইত্যাদি গ্রহণ করেছে কিন্তু মুসলিমবিজ্ঞানীদের নাম এমন ভাবে বিকৃত করেছে যেন তাদেরকে মুসলিম মনে না হয়। যেমন আভেসিনা (ইবনে সিনা), রাজেস (আল রাজি), আল বেটাসিনায়স, (আল বাত্তানি), হাজেন (ইবনে হাজম), আল বুকাসিস (আবুল কাশেম), এভোরোজ (আবু রুশদ) প্রমুখ। অথচ মুসলিমবিজ্ঞানীরা গ্রিক বিজ্ঞান গ্রহণ করার সময় বিজ্ঞানীদের নাম অত্যন্ত সম্মানের সাথে উল্লেখ করেছেন। এই হচ্ছে ইসলামের উদারতার শিক্ষা।
লেখক : মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা