২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
অদৃশ্য দৃশ্যাবলী

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৪

-

(শেষ পর্ব)

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম কিস্তির ধারাবাহিকতায় আরও দু-একটি কথা যোগ করতে চাই। বলা হয়েছিল, বিশ্ব এখন আগ্নেয়গিরির চূড়ায় বসে আছে। বলা হয়েছিল, ফিলিস্তিন ও লেবাননের কথা। সেখানে ইসরাইল ও তার মিত্ররা যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তাতে স্পষ্ট, যেকোনো মুহূর্তেই ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওই দুই স্থানে ইরানের ভূমিকা নিয়ে চরম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ইরান সে হুমকিকে থোরাই আমলে নিয়েছে। আমেরিকাকে এখন ভুলে গেলে চলবে না, ইরানে এখন শাহ’র আমল আর নেই। ইরান আর যুক্তরাষ্ট্রকে বন্ধু বলে মনে করে না বরং ইরান চীন, তুরস্ক ও রাশিয়াকে মিত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে। ইরান সামরিক ক্ষেত্রে কতটা অগ্রসর হয়েছে, সেটিও দৃশ্যমান। কিন্তু যুদ্ধের একটি বড় কৌশল হচ্ছে প্রতিপক্ষের হাঁড়ির খবর রাখা। আর সেখানে অবশ্যই ইরানের ঘাটতি রয়েছে। সে জন্য সাম্প্রতিককালে তাদের বড় মূল্য দিতে হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস কোনো রাখঢাক না করেই আসন্ন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দিয়েছে। এই ঘোষণা কিন্তু নির্বাচনের আগাম একটি বার্তা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ও বিশ্ববাসীর জন্য। পত্রিকাটি তার পাঠকদের উদ্দেশে বলেছে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে না দাঁড়ালে সে দেশের গণতন্ত্রের গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হবে। টাইমসের সম্পাদকীয় বোর্ড ১৯৫৬ সালের পর থেকে প্রেসিডেন্ট পদে কোনো রিপাবলিকান প্রার্থীকে সমর্থন করেনি। ওই সময়ের আগে কেবল রিপাবলিকান প্রার্থী আইজেন হাওয়ারকে সমর্থন দেয়ার ইতিহাস আছে পত্রিকাটির। যাই হোক, কমলা যদি প্রেসিডেন্ট হন তাহলে মনে করার কোনো কারণ নেই যে, ইসরাইল ফিলিস্তিন, লেবানন ও ইরান প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটবে। যে সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ নিয়ে বিশ্বজুড়ে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে তার অবসান ঘটবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে কিছু ইন্টারেস্টিং ঘটনা রয়েছে। তার দু-একটি প্রথম পর্বে বলা হয়েছে। আরো কয়েকটির কথা জেনে নেয়া ভালো।

সবচেয়ে স্বল্পমেয়াদি প্রেসিডেন্ট
উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন (ফেব্রুয়ারি ৯, ১৭৭৩-এপ্রিল ৪, ১৮৪১) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবম রাষ্ট্রপতি। তিনিই প্রথম মার্কিন রাষ্ট্রপতি, যিনি নিজ কর্মস্থলে প্রথম মেয়াদ শেষ করার আগেই মারা যান। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে অভিষেক অনুষ্ঠানে হ্যারিসন তুষারপাতের মধ্যেই টানা এক ঘণ্টা ভাষণ দিয়েছিলেন। এর ফলে ঠাণ্ডা লেগে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন এবং মাসখানেক পরে মারা যান। তার শাসনামল ছিল মাত্র ৩১ দিন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সময় হ্যারিসনের বয়স ছিল ৬৮ বছর। হ্যারিসনের সেই দীর্ঘ ভাষণটি লিখে দিয়েছিলেন তার এক বন্ধু। বন্ধুর সেই সহায়তাই তার জন্য কাল হয়েছিল।

কেনেডি প্রথম রোমান ক্যাথলিক প্রেসিডেন্ট
জন ফিটজেরার্ল্ড কেনেডি বা জন এফ কেনেডির জন্ম মে ২৯, ১৯১৭ সালে। মৃত্যু নভেম্বর ২২, ১৯৬৩ । তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ সালে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মার্কিন নৌবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। ১৯৬০ সালে তিনি তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি এবং রিপাবলিকান প্রার্থী রিচার্ড নিক্সনকে পরাজিত করেন। তিনি থিওডর রুজভেল্টের পর আমেরিকার দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম রাষ্ট্রপতি, বিংশ শতাব্দীতে জন্ম নেয়া প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি প্রথম ও একমাত্র ক্যাথলিক এবং প্রথম আইরিশ আমেরিকান রাষ্ট্রপতি।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথলিক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল তখন ২২.৭ শতাংশের মতো। পক্ষান্তরে প্রোটেস্টান্ট খ্রিষ্টানের সংখ্যা তখন ছিল মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি। তিনি একমাত্র রাষ্ট্রপতি যিনি পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছিলেন। ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর ডালাস অঙ্গরাজ্যে লিহার্ডি আসওয়ার্ল্ড নামক ব্যক্তি গুলি করে কেনেডিকে হত্যা করে। তরুণ প্রেসিডেন্ট কেনেডি অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে সে সময় দ্বীপরাষ্ট্র কিউবাকে নিয়ে সৃষ্ট একটি সঙ্কটময় পরিস্থিতি অত্যন্ত দক্ষতা ও সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করেছিলেন। অধুনালুপ্ত সোভিয়েট ইউনিয়ন আমেরিকার অনতিদূরে কিউবায় পারমাণবিক বোমা বহনযোগ্য মিসাইল স্টেশন স্থাপন করেছিল। সেই উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছিল। কেনেডি তৎক্ষণাৎ মার্কিন নৌবহর পাঠিয়ে কিউবাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। সোভিয়েট ইউনিয়নকে এসব স্থাপনা অবিলম্বে সরানো আলটিমেটাম দেন। এই হুমকির পর দ্রুত সেসব স্থাপনা কিউবা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগ যথাযথ পদক্ষেপ হিসাবে কেনেডি প্রশাসন প্রশংসিত হয়। পক্ষান্তরে সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎকালীন নেতা নিকেতা ক্রুশচেভের এই নতি স্বীকারের ফলে বিশ্ব পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা থেকে স্বস্তি লাভ করে।

গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণকারী ৪ প্রেসিডেন্ট
এখন পর্যন্ত চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

আব্রাহাম লিংকন: হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল জন উইকস বুথ নামের এক ব্যক্তি গুলি করেন তাকে। একটি কমেডি নাটকের বিশেষ মঞ্চায়ন দেখতে স্ত্রীসহ ওয়াশিংটনের ফোর্ড থিয়েটারে গিয়েছিলেন লিংকন। মাথার পেছনে গুলিবিদ্ধ আব্রাহাম লিংকন মারা যান পরদিন। কালোদের অধিকারের বিষয়ে তার দৃঢ় সমর্থন ছিল এই হত্যাকাণ্ডের মূলে।

জেমস গারফিল্ড: হত্যাকাণ্ডের শিকার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড। মাত্র ছয় মাস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে পারেন তিনি। ১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটনের একটি রেলস্টেশনে হাঁটছিলেন তিনি। নিউ ইংল্যান্ডের একটি ট্রেন ধরার কথা ছিল তার। এ সময়ই চার্লস গুইতো নামের এক ব্যক্তি গুলি করেন তাকে। টেলিফোনের উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল শুধু গারফিল্ডের জন্য নকশা করা একটি যন্ত্র ব্যবহার করে তার বুকে ঢোকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। তবে সফল হননি। কয়েক সপ্তাহ হোয়াইট হাউজে মুমূর্ষু অবস্থায় থাকার পর সেপ্টেম্বরে নিউজার্সিতে নিয়ে যাওয়ার পর মারা যান তিনি।

উইলিয়াম ম্যাককিনলে: ১৯০১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের বাফেলোয় একটি বক্তৃতা দেয়ার পর গুলিবিদ্ধ হন ম্যাককিনলে। জনগণের সাথে হাত মেলানোর সময় একেবারে কাছ থেকে তার বুকে দু’টি গুলি করেন এক ব্যক্তি। চিকিৎসকরা আশা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে ক্ষতের চার পাশে পচন ধরে ১৯০১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মারা যান ম্যাককিনলে।

লিয়ন অব চলগোস নামের ২৮ বছর বয়স্ক ডেট্রয়টের এক বাসিন্দা গুলি করার কথা স্বীকার করেন। পরে বৈদ্যুতিক চেয়ারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।
জন এফ কেনেডি: ১৯৬৩ সালের নভেম্বর এক গুপ্তঘাতক শক্তিশালী রাইফেলের সাহায্যে গুলি করে জন এফ কেনেডিকে। স্ত্রী জ্যাকুলিনসহ ডালাসে গিয়েছিলেন তখন কেনেডি। ডালাস শহরের কেন্দ্রস্থলে ডিলি প্লাজার ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় গুলি করা হয় গাড়িবহরে। কেনেডিকে দ্রুত পার্কল্যান্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অল্প সময় পরে সেখানে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

হত্যাচেষ্টার শিকার যেসব মার্কিন প্রেসিডেন্ট
জেরার্ল্ড ফোর্ড: ১৯৭৫ সালে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে দুইবার হত্যার চেষ্টা করা হয় ফোর্ডকে। তবে প্রতিবারই অক্ষত থেকে যান তিনি। প্রথমবার সেকরামেন্তোতে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলেন ফোর্ড। এ সময় রাস্তার লোকজন ঠেলে এগিয়ে এসে লিনেট্রে ফ্রমি নামের একজন পিস্তল তাক করেন ফোর্ডের দিকে। কিন্তু ট্রিগার চাপলেও গুলি বের হয়নি। ফ্রমি দীর্ঘ কারাভোগের পর ২০০৯ সালে মুক্তি পান। ১৭ দিন পর সান ফ্রান্সিসকোর এক হোটেলের বাইরে সারা জেন মুর নামের এক নারী ফোর্ডকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। কিন্তু লক্ষ্যচ্যুত হয় গুলি। দ্বিতীয় গুলি করার চেষ্টা করার সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি মুরের হাত ধরে ফেলেন। দীর্ঘ কারাভোগের পর ২০০৭ সালে মুক্তি পান মুর।

রোনাল্ড রিগ্যান: রোনাল্ড রিগ্যান ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি বক্তৃতা দিয়ে গাড়িবহরের দিকে এগোচ্ছিলেন। এ সময় উপস্থিত জনতার মধ্যে থাকা জন হিঙ্কলি জুনিয়র তাকে গুলি করেন। রিগ্যান ১৯৮১ সালের মার্চের এই গুলির ঘটনায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। তার প্রেস সচিব জেমস ব্র্যাডিসহ আরো তিনজন এ সময় গুলিবিদ্ধ হন। ব্র্যাডি এ ঘটনায় আংশিকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। হত্যার চেষ্টাকারী হিঙ্কলিকে গ্রেফতার করা হয়। তবে রিগ্যানকে গুলি করার জন্য মানসিক অসুস্থতাকে জুরিরা কারণ হিসেবে বিবেচনা করলে একটি মানসিক হাসপাতালে বন্দী অবস্থায় চিকিৎসা দেয়া হতে থাকে। ২০২২ সালে নিজের বা অন্যদের জন্য আর বিপজ্জনক নয় বলে একজন বিচারক রায় দিলে ছাড়া পান হিঙ্কলি।

জর্জ ডব্লিউ বুশ: ২০০৫ সালে জর্জিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিখাইল সাকাশভিলির সঙ্গে দেশটির রজাধানী তিবলিসিতে একটি শোভাযাত্রায় অংশ নেন জর্জ ডব্লিউ বুশ। এ সময় তার দিকে একটি হ্যান্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়।

কাপড়ে মোড়ানো গ্রেনেডটি প্রায় ১০০ ফুট দূরে পড়ার সময় দু’জনই বুলেট প্রুফ ব্যারিয়ারের পেছনে ছিলেন। গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়নি এবং কেউ আহত হননি। এ ঘটনায় ভøাদিমির আরুতিউনিয়ান নামে এক ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

রবার্ট এফ কেনেডি: লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি হোটেলে যখন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, তখন বরার্ট এফ কেনেডি ডেমোক্র্যাটিক রাষ্ট্রপতির মনোনয়ন চাইছিলেন। ১৯৬৮ সালের ক্যালিফোর্নিয়া প্রাইমারিতে তার বিজয়ী বক্তৃতা দেয়ার কিছুক্ষণ পরে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এ সময় আরো পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। কেনেডি ছিলেন নিউ ইয়র্কের একজন সিনেটর এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ছোট ভাই। এ ঘটনার পাঁচ বছর আগে প্রেসেডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

অ্যান্ড্রু জ্যাকসন : আমেরিকার গৃহযুদ্ধের আগে প্রেসিডেন্ট ছিলেন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন। ক্যাপিটলে একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। সেখানে তাকে লক্ষ্য করে পরপর দুইবার গুলি করেন হামলাকারী। কিন্তু একটি গুলিও জ্যাকসনের শরীরে লাগেনি।

থিওডর রুজভেল্ট : সময়টা ১৯১২ সাল। ট্রাম্পের মতো আবারো প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন থিওডর রুজভেল্ট। প্রচার সভায় বক্তব্য দিতে উইসকনসিনের মিলওয়াউকিতে যাচ্ছিলেন তিনি। একজন সেলুন তত্ত্বাবধানকারী তাকে গুলি করেন। তবে হামলাটি ব্যর্থ হয়।

ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট : প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তখনো দায়িত্ব নেননি ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। ১৯৩৩ সালে মিয়ামিতে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করেন আততায়ী। রুজভেল্টকে হত্যা করতে ব্যর্থ হন হামলাকারী। তবে গুলিতে নিহত হন পাশে থাকা শিকাগোর মেয়র।

হ্যারি ট্রুম্যান : ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট মারা যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন হ্যারি ট্রুম্যান। ১৯৫০ সালে পুয়ের্তো রিকোর নামক একজন জাতীয়তাবাদী হোয়াইট হাউজের বাইরে তার ওপর হামলা চালান। তবে বেঁচে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

জর্জ ওয়ালেস : তখন জর্জ আলাবামা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর। ১৯৭২ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ওয়াশিংটনের বাইরে তার ওপর গুলি করা হয়। এতে প্রাণে বাঁচলেও পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন এই রাজনীতিক।

ইতিহাসখ্যাত যত প্রেসিডেন্ট
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রেসিডেন্ট তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তিতে নিজ দেশের পাশাপাশি বিশ্বকেও প্রভাবিত করে খ্যাত হয়ে আছেন। তারা হচ্ছেন-

আব্রাহাম লিংকন : ১৮৬১ সালে আব্রাহাম লিংকন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন । ১৮৬৫ সালের এপ্রিল মাসে তাকে হত্যা করা হয়। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নয়, তিনি পুরো বিশ্বে একজন খ্যাতিমান ও প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাস প্রথার অবসান ঘটান। দাস প্রথাকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সময় তার অসাধারণ নেতৃত্ব গুণ, বাগ্মিতা, দূরদর্শিতার বলে তিনি সফলভাবে সব প্রতিবন্ধকতা জয় করতে সক্ষম হন।

জন এফ কেনেডি : জন এফ কেনেডি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি আমেরিকার দ্বিতীয় কম বয়সি প্রেসিডেন্ট। তিনিই একমাত্র আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যিনি পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে, কিউবার মিসাইল সঙ্কট, আফ্রিকান-আমেরিকান সিভিল রাইটস মুভমেন্ট এবং বে অব পিগস আক্রমণ। এ ছাড়া তিনি চাঁদে মানুষ পাঠানোর প্রথম উদ্যোগ অ্যাপোলো প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন।

জর্জ ওয়াশিংটন : যুক্তরাষ্ট্রের সর্বপ্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন আমেরিকার বৈপ্লবিক যুদ্ধের সময় আর্মির চিফ কমান্ডার ছিলেন। তিনি খসড়া সংবিধান প্রতিস্থাপন করেন। ১৭৮৮ সালে সর্বসম্মতিক্রমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ।

ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট : ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি চারবার নির্বাচিত হন। তিনি বিশ্বের একজন মূল রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত হন যখন পুরো বিশ্বের অর্থ সঙ্কট দূর করার চেষ্টা করেন। তিনি জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাবক।

থিওডর রুজভেল্ট : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৬তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন থিওডর রুজভেল্ট। মাত্র ৪২ বছর বয়সে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন তিনি। ১৯০১ থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন । রুশ-জাপান যুদ্ধাবসানে ভূমিকা রাখার জন্য ১৯০৬ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়।

রোনাল্ড রিগান : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন রোনাল্ড রিগান। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর। ১৯৮৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে তিনি মার্কিন অর্থনীতিতে সচ্ছলতা নিয়ে আসেন।

টমাস জেফারসন : টমাস জেফারসন, যিনি ১৭৭৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের রচয়িতা তিনি। তিনিই আমেরিকায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রথম কথা বলেন। ১৭৭৬ সালে স্বাধীনতা লাভের পর দেশটির ১৩টি অঙ্গরাজ্যের সীমানাও নির্ধারণ করেন জেফারসন। তিনি আগে প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সেক্রেটারি হিসেবেও কাজ করেন।

হ্যারি এস ট্রুম্যান : হ্যারি এস ট্রুম্যান ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভ করে। এর প্রভাব হিসেবে আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্কে ফাটল ধরে, যা স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা ছিল। ট্রুম্যান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নাৎসি জার্মানি আত্মসমর্পণ করে। জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে তিনি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের অনুমতি দেন। তিনি ১৩ বিলিয়ন ডলারের মার্শাল পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন ।

বিল ক্লিনটন : উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন। বিল ক্লিনটন নামে সমধিক পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম রাষ্ট্রপতি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখেন।
ক্লিনটন ২০০১ সালে যেকোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের যৌথ-সর্বোচ্চ অনুমোদনের রেটিং নিয়ে অফিস ত্যাগ করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ঐতিহাসিক র্যা ঙ্কিংয়ে তার রাষ্ট্রপতির পদ মধ্য থেকে উচ্চ স্তরের মধ্যে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম নির্বাচন (অর্থাৎ যে নির্বাচনে ক্লিনটন বিজয়ী হন) অনুষ্ঠানের সময় ২০০০ সালে বিশ্বের ৩৫ জন সাংবাদিককে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের আমন্ত্রণ জানানো হয়। বাংলাদেশ থেকে আমি আমন্ত্রণ পেয়ে সে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাই। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে আটটি অঙ্গরাজ্য সফর করে সে দেশের নির্বাচন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করি।

বারাক ওবামা : তার পূর্ণ নাম দ্বিতীয় বারাক হুসেইন ওবামা (জন্ম ৪ আগস্ট, ১৯৬১)। তিনি রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী, যিনি ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৪৪তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন । ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য ওবামা ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আফ্রো-মার্কিন বংশোদ্ভূত রাষ্ট্রপতি।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। ওবামা সাধারণ নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি মনোনীত জন ম্যাককেইনের বিরুদ্ধে নির্বাচিত হন এবং ২০ জানুয়ারি, ২০০৯ এ তার চলমান সাথী জো বাইডেনের পাশাপাশি জয়ী হয়েছিলেন। ৯ মাস পরে, ওবামাকে ২০০৯ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়। ঐতিহাসিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে তার রাষ্ট্রপতিত্বের মূল্যায়নে তাকে আমেরিকার রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে উচ্চ স্থান দেয়া হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্টদের তালিকা

জর্জ ওয়াশিটন, জন অ্যাডামস, টমাস জেফারসন, জেমস ম্যাডিসন, জেমস মনরো, জন কুইন্সি অ্যাডামস, অ্যান্ড্রু জ্যাকসন, মার্টিন ভ্যান বুরেন, উইলিয়াম হেরি হ্যারিসন, জন টাইলার, জেমস নক্স পোলক, জাচারি টেলর, মিলার্ড ফিলমোর, ফ্র্যাঙ্কলিন পিয়ার্স, জেমস বুকানন, আব্রাহাম লিংকন, অ্যান্ড্র্রু জনসন, ইউলিসিস সিম্পসন গ্রান্ট, রাদারফোর্ড বার্চার্ড হেইস, জেমস আব্রাম গারফিল্ড, চেস্টার অ্যালান আর্থার, স্টিফেন গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড, বেঞ্জামিন হ্যারিসন, স্টিফেন গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড, উইলিয়াম ম্যাককিনলে, থিওডর রুজভেল্ট, উইলিয়াম হাওয়ার্ড টাফট, উড্রো উইলসন, ওয়ারেন গামালিয়েল হার্ডিং, ক্যালভিন কুলিজ, হার্বার্ট ক্লার্ক হুভার, ফ্র্যাঙ্কলিন ডেলানো, রুজভেল্ট, হ্যারি এস ট্রুম্যান, ডোয়াইট ডেভিড, আইজেন হাওয়ার, জন ফিটজেরাল্ড কেনেডি, লিন্ডন বেইনস জনসন, রিচার্ড মিলহাউস নিক্সন, জেরাল্ড রুডলফ ফোর্ড, জেমস আর্ল কার্টার জুনিয়র, রোনাল্ড উইলসন রিগান, জর্জ হার্বার্ট ওয়াকার বুশ, উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন, জর্জ ওয়াকার বুশ, বারাক ওবামা, ডোনাল্ড ট্রাম্প, জোসেফ বাইডেন।

এ কথা সবারই জানা, বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি রচনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তথা সে দেশের প্রেসিডেন্টের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আজ গোটা বিশ্ব যে অশান্ত হয়ে উঠেছে, বিরাজমান স্নায়ুযুদ্ধ যাতে বারুদের যুদ্ধে উপনীত না হয়- সেখানে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখতে হবে। তা না হলে, মানবসভ্যতার যেকোনো ক্ষতির দায় তাকে নিতে হবে। শুধু মার্কিন স্বার্থ নয়, বিশ্বের স্বার্থও তার বিবেচনায় থাকতে হবে।

[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement