২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

দি ব স: বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস আজ

-

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর। বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। এই রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর দিবসটি পালন করা হয়। পৃথিবীর মাত্র তিনটি দেশ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ব্রিটেন ছাড়া বাদবাকি বিশ্বে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ ও পশুর মৃত্যু হয়। আমাদের দেশেও অনেকে জলাতঙ্ক হয়ে মারা যায়। তবে একটু সচেতন হলে এ রোগের প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেহেতু এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই, তাই প্রতিষেধকই একমাত্র উপায় এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার। প্রাণঘাতী রেবিস বা জলাতঙ্ক বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও এ রোগটিকে নির্মূলের লক্ষ্যে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কারক লুইস পাস্তরের মৃত্যুর দিনটিকে (২৮ সেপ্টেম্বর লুইস পাস্তর মৃত্যুবরণ করেন) স্মরণীয় করে রাখতে ২০০৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘জলাতঙ্ক রোগ ব্যবস্থাপনায় বাধা দূর করা’। এবারের জলাতঙ্ক দিবসে আন্তঃবিভাগীয় সহযোগিতা বাড়ানো, বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন উৎসাহিত এবং জনসচেতনতা বাড়িয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে জলাতঙ্ক রোগ নির্মূলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্বুদ্ধের বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে। সেই সাথে সুফলভোগী এবং বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে নিবিড় যোগাযোগে সম্মিলিতভাবে বিশ্ব থেকে জলাতঙ্ক নির্মূলের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে দিবসটি পালন করা হবে।

জলাতঙ্ক হলো অতি তীব্র ভাইরাস সংক্রমণজনিত একটি রোগ; যাতে মস্তিষ্ককোষের প্রদাহ হয়। মস্তিষ্ক ফুলে যায়। ভাইরাসটি র্যা বডোভিরিডি পরিবারের অন্তর্গত লাইসা গোত্রের ভাইরাস। মানুষসহ গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, শূকর ও ঘোড়া এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত প্রাণীর কামড়ে সুস্থ প্রাণীতে রোগটি ছড়ায়। আবার চামড়ার ক্ষতস্থানে রেবিড প্রাণীর সদ্য নিঃসৃত লালা লাগলেও জলাতঙ্ক হতে পারে। রেবিড প্রাণীর লালা সংবেদনশীল প্রাণীর চোখ, নাক ও মুখের সংস্পর্শে এলেও জলাতঙ্ক হতে পারে। কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি এবং এক ধরনের রক্তচোষা বাদুর এ রোগ ছড়ায়। আমাদের দেশে গৃহপালিত গবাদিপশুও পোষক হিসেবে কাজ করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানুষের জলাতঙ্কের জন্য কুকুর ৯ শতাংশ, বিড়াল ২ শতাংশ, বাদুর ২ শতাংশ এবং অন্যন্য প্রাণী ৩ শতাংশ দায়ী। বাংলাদেশে এ রোগে প্রতি বছর ২১০০ থেকে ২৩০০ মানুষ মারা যায়। আর প্রতি বছর ৫ থেকে ৬ হাজার গবাদিপশু জলাতঙ্কে আক্রন্ত হয়ে মারা যায়। জলাতঙ্কের সুপ্তিকাল নির্ভর করে কী পরিমাণ ভাইরাস শরীরে ঢুকেছে এবং মাথার কত কাছাকাছি রেবিড প্রাণী কামড় দিয়েছে তার ওপর। জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর থেকে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার মধ্যবর্তী সময়কে সুপ্তিকাল বলা হয়। সাধারণত সুপ্তিকাল ৩ সপ্তাহ। তবে সুপ্তিকাল ২ সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত হতে পারে।

এ রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অথবা ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয়ে অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত তিন ধরনের ক্লিনিক্যাল লক্ষণ প্রকাশ পায় : প্রোডারমাল, এক্সোটেটিভ এবং প্যারালাইটিক ।

ক্লিনিক্যাল লক্ষণ প্রকাশ পেলে এ রোগের আর কোনো চিকিৎসা নেই। তবে রেবিড প্রাণী কামড় দেয়ার সাথে সাথে ক্ষতস্থান সাবান পানি, পভিডন আয়োডিন অথবা ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে পোস্টবাইট রেবিস ভ্যাকসিন নিলে রোগটি আর হয় না। যেহেতু এ রোগের চিকিৎসা নেই। লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে গেলে মৃত্যু একমাত্র পরিণতি। তাই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এ রোগের প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিরোধে ভেটেরিনারিয়ানসহ জনস্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত সবশেষ সবাইকে প্রিবাইট রেবিস ভ্যাকসিন সরকারিভাবে নিশ্চিত করতে হবে। গৃহপালিত কুকুর, বিড়ালসহ বেওয়ারিশ কুকুরকেও প্রিবাইট রেবিস ভ্যাকসিন দিতে হবে।
লেখক : জেলা ভেটেরিনারি অফিসার, বরগুনা


আরো সংবাদ



premium cement