সরকার গণহত্যার দায় এড়াতে শিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে : ছাত্রশিবির
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৫ জুলাই ২০২৪, ২০:১৩
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘটিত গণহত্যার দায় এড়াতে এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সরকার ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
বৃহ্স্পতিবার ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম এক যৌথ বিবৃতিতে এ অভিযোগ করেন করেন।
তারা বলেন, ‘সরকার কোটা আন্দোলন দমন করতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গণহত্যা চালিয়ে ধামাচাপা দেয়ার জন্য ছাত্রশিবিরসহ বিরোধী দলের ওপর যে ধ্বংসযজ্ঞের অভিযোগ দেয়া হচ্ছে তা আওয়ামী প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের মিথ্যা গালগল্পের প্রথাগত চরিত্র জনগণের সামনে পরিষ্কার। দেশের অরাজক পরিস্থিতির দায়ভার বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে দিয়ে এ গণহত্যা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। মিথ্যা দিয়ে সত্যকে চাপা দেয়া যায় না।’
নেতারা চলমান ঘটনাপ্রবাহ উল্লেখ করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়াকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের পরিবর্তে গণহত্যায় অভ্যস্ত সরকার বল প্রয়োগ, হত্যা ও নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিদাওয়াকে অগ্রাহ্য করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে। তার ওই বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের জবাব দিতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত বলে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর লেলিয়ে দেয়। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও ভাড়াটিয়া গুন্ডদের তাণ্ডবে মেধাবীদের রক্তে ক্যাম্পাস রঞ্জিত হয়।’
বিবৃতিতে তারা জানান, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের অবাধে হামলা চালানোর সুযোগ করে দেয়। শুধু তাই নয়, রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক বুক পেতে দাঁড়ানো আবু সাঈদকে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। সেদিন ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে অন্তত ছয় শিক্ষার্থী শহীদ হন। পরদিন নিহতদের স্বরণে শিক্ষার্থীদের গায়েবানা জানাজার মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ, র্যাব, বিজিব ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ মিলে নৃশংস হামলা চালায়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা দেশব্যাপী সর্বাত্মক কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দিলে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশ-র্যাব ও বিজিবি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি গুলি চালায়।’
তারা আরো বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে তাদের বুকে গুলি চালালে সহপাঠী, অভিভাবকসহ সর্বস্তরের জনগণ রাস্তায় নেমে আসেন। তখন আপামর জনতার ওপর ইতিহাসের নির্মম গণহত্যা চালায় অবৈধ সরকার। অসংখ্য মানুষকে গুলি করে হত্যা করে আবার অনেক লাশের ওপর গাড়িচাপা দেয়া, হত্যা করে সাঁজোয়া যানের ওপরে তুলে আবারো নিচে ফেলা, হেলিকপ্টর থেকে ও বাসা-বাড়ির ছাদ থেকে গুলি চালিয়ে হত্যা করাসহ এমন কোনো বর্বরতা নেয় যা তারা চালায়নি। শিশু থেকে বৃদ্ধ- কেউ রেহায় পায়নি বর্বরতা থেকে। বিভিন্নভাবে পাওয়া তথ্যানুসারে, পাঁচ শতাধিক শহীদ, প্রায় এক হাজার পঙ্গুত্ববরণ ও প্রায় ১০ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। অপরদিকে এই গণতহ্যার ঘটনা দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীর নজর এড়াতে পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে এবং মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে সকল হত্যাকাণ্ডকে গোপন করার অপচেষ্টা করে সরকার।’
নেতারা বলেন, ‘একদিকে শত শত সন্তান হারানো মায়ের আহাজারি, স্বজন হারানো মানুষের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে, অপরদিকে সরকার ও তার সেবাদাসরা লাশের সাথে উপহাস করছে। ছাত্রসমাজের সাথে এ কেমন উপহাস! মানবিকতার সাথে এ কেমন নির্মমতা!’
শিবির নেতারা বলেন, “এদিকে সরকার গণহত্যাকে জায়েজ করতে দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলার দায় বরাবরের মতো ছাত্রশিবিরসহ বিরোধী দলের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জ্বালাওপোড়াও কারা করে, এর বেনিফিশিয়ারি কারা- সেটা দেশের সকল মানুষই জানে। আজ জাতীয় পত্রিকা প্রথম আলোর রিপোর্ট ‘চট্টগ্রামে বাসে আগুন দিতে ৪ লাখ টাকায় চুক্তি, শ্রমিকলীগ নেতা গ্রেফতার’- এ ঘটনাই প্রমাণ করে সারাদেশে নৈরাজ্য কারা ঘটিয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী জনমনে এটা স্পষ্ট, আন্দোলনকারীদের ভেতরে ঢুকে আওয়ামী গুন্ডারাই জ্বালাওপোড়াও করেছে। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সরকার পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্য ঘটিয়ে বিরোধীদের ওপর এর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। তাদের এই মিথ্যা প্রোপাগান্ডা দেশবাসী আর বিশ্বাস করে না।”
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারি বলেন, ‘আমরা আলো লক্ষ্য করছি যে সরকারি প্রোপাগান্ডার সাথে সুর মিলিয়ে কতিপয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে, যা কোনো পেশাদার রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। ইতোমধ্যে মিথ্যা অযুহাতে মামলা দিয়ে হাজার হাজার নেতাকার্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে জনগণের নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে দেশের মধ্যে ভয়ের রাজ্য কায়েম করেছে। আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, সারাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর যে দায় ছাত্রশিবিরের ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা সম্পুর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। ছাত্রশিবির নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মকাণ্ডের সাথে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। এসব ঘটনার সাথে প্রকৃতপক্ষে কারা জড়িত, বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধম্যে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
নেতারা হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি করে গণহত্যার দায় স্বীকার করে অনতিবিলম্বে সরকারকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। অন্যথায় ছাত্রসমাজ ও গণতন্ত্রকামী জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে অধিকার আদায়ে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলে জানান।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা