সেন্টমার্টিন নিয়ে সরকারের নীরবতা দাসসুলভ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ : মির্জা ফখরুল
- অনলাইন প্রতিবেদক
- ১৫ জুন ২০২৪, ১৫:১০, আপডেট: ১৫ জুন ২০২৪, ১৯:৫৮
সেন্টমার্টিন ইস্যুতে সরকারের নিরবতা দাসসুলভ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়ার পথে মিয়ানমার থেকে গুলি করা হচ্ছে, সেখানে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। কিন্তু সরকার এখনো নীরব। সরকারের নতজানু নীতির কারণেই এমন হচ্ছে। বাংলাদশকে পরনির্ভরশীল রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলেছে সরকার। সীমান্তে হত্যা করলেও, পানি না দিলেও সরকার কথা বলে না।
তিনি বলেন, বেনজীর, আজিজ ও আনারের ভয়াবহ অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য গণমাধ্যমে উঠে আসতে শুরু করেছে।
ভাইদের পাসপোর্ট জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠা সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের বিচার দাবি করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি আরো বলেন, সাবেক পুলিশ প্রধান ডাকাতের মতো সম্পদ অর্জন করেছেন। বর্তমান সরকারের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। ডান-বাম সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
সরকার পতনের আন্দোলনে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, ‘আগে সাংবাদিকরা কিছু বললে মান্য করা হতো, সম্মান ছিল অনেক। এখন সেই সম্মান হারিয়ে যাচ্ছে।’ এ সময় তিনি সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
বিএফইউজের সভাপতি রহুল আমিন গাজী বলেন, ‘আগে সবাই এ দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করতেন। এখন অনেকে তা সাদা দিবস বলতে চান। একদলীয় সংসদ। ১৯৭৫ সালে যে অবস্থা ছিল, এখনো সেই অবস্থা। এখন প্রতিদিনই ১৬ জুন চলছে। ন্যায়বিচার, স্বাধীন সাংবাদিকতা, গণতন্ত্র এখন স্বপ্নের মতো।’
বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সংবাদপত্রসেবীদের বেতন-ভাতা নির্ধারণে ওয়েজবোর্ড গঠন করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি বেতন বোর্ড পুনরুজ্জীবিত করেন এবং ১৯৭৭ সালের পয়লা মে ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণা করা হয়। একইসাথে ঘোষিত বেতন স্কেল বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ইমপ্লিমেন্টেশন সেলও গঠন করে দেন। তিনি সাংবাদিক, মালিক, সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠন করেন প্রেস কনসালটেটিভ কমিটি। এ কমিটির কাজ ছিল স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায়গুলো দূর করা। সাংবাদিকদের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করার লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান প্রেস কাউন্সিল গঠন করেন।’
‘সাংবাদিকদের পেশাগত মান উন্নয়ন ও তাদের সুষ্ঠুভাবে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য তিনি বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) প্রতিষ্ঠা করেন নিজে উদ্যোগী হয়ে। পেশায় বিজ্ঞ ও বিদগ্ধ ব্যক্তিদের মাধ্যমে এমনকি বিদেশ থেকে প্রশিক্ষক এনে তিনি সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। সে সময় আবাসন সঙ্কটে সাংবাদিকরা ভীষণভাবে কষ্ট পাচ্ছিলেন। স্বল্প আয়ের সাংবাদিকদের আবাসন সমস্যা ও দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে তিনি মিরপুরে ২২ বিঘা জমি সাংবাদিক সমবায় সমিতির নামে বরাদ্দ করেছিলেন। দেড় শতাধিক সাংবাদিকের সেখানে আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছিল।’
কাদের গণি আরো বলেন, ‘১৯৭৬ সালে প্রেস ক্লাব ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের তোড়জোড় চলছিল। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত ব্যবসায়ী প্রিন্স করিম আগা খান প্রেস ক্লাব ভবন নির্মাণের ব্যয় বহনের ঘোষণা দেন। জিয়াউর রহমান বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি। সাংবাদিক নেতাদের ডেকে তিনি বলেন, প্রেস ক্লাব হচ্ছে একটি জাতীয় ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। এর উন্নয়ন মানে গণতন্ত্রের উন্নয়ন, সাংবাদিকতার প্রসার। অতএব, বিদেশী কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অর্থানুকূল্যে এ প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মিত হওয়া উচিত নয়। তাহলে সাংবাদিকদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে। তিনি ঘোষণা করলেন, প্রেস ক্লাব ভবন নির্মাণের সব ব্যয়ভার গ্রহণ করবে তার সরকার। তিনি প্রেস ক্লাব ভবন নির্মাণের জন্য অনুদান প্রদান করেন।’
‘গণমাধ্যমের বর্তমান পরিস্থিতি গণমাধ্যমে আবার ’৭২-৭৫ এর অবস্থা ফিরে এসেছে। ওই সময়ের মতো সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে বলতে পারছে না। গত ১৫ বছরে জনপ্রিয় সংবাদপত্র, বেসরকারি টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে কয়েক হাজার সাংবাদিককে বেকারত্বের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে ৬০ জন সাংবাদিককে। বাস্তবতা হচ্ছে ১৯৭৫ সাল আর বর্তমান শাসনামলের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। অগণতান্ত্রিক সরকারের কালো থাবায় সংবাদমাধ্যম পুরোপুরি শৃঙ্খলিত। সরকারের রক্তচক্ষুর সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে। বস্তুনিষ্ঠ ও সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অকল্পনীয় হুমকির মুখে পড়েছে সাংবাদিকদের জীবন ও জীবিকা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দল, মত, পথ নির্বিশেষে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে,’ বলেন কাদের গনি।
বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, এম এ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, বাকের হোসাইন, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ইলিয়াস খান, কায়কোবাদ মিলন প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা