চলতি সপ্তাহে অনুমোদন হতে পারে ছাত্রদলের আংশিক কমিটি
- অসীম আল ইমরান
- ০১ জুন ২০২৪, ২০:১২
চলতি সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের আংশিক কমিটি অনুমোদন হতে পারে বলে জানা গেছে। একইসাথে সংগঠনটির ঢাকা মহানগরের কমিটি অনুমোদন দেয়া হবে বলে একটি সূত্র থেকে জানা যায়। তবে এই কমিটি যেন গ্রুপের আদলে না হয়, ত্যাগের মূল্যায়ন হবে- এমনটাই প্রত্যাশা ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশীদের।
যেকোনো আন্দোলনে বিএনপির ‘ভ্যানগার্ড’খ্যাত ছাত্রদল কার্যত ৯০ দশকের পর কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চলতি বছরের ১ মার্চ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের নেতৃত্বাধীন বিদ্যমান কমিটি বিলুপ্ত করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাত সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে। নবগঠিত এ আংশিক কমিটিতে রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সভাপতি এবং নাসির উদ্দীন নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, দফতর সম্পাদক (সহ-সভাপতি পদমর্যাদা) মোহা. জাহাঙ্গীর আলম এবং প্রচার সম্পাদক (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদা) শরিফ প্রধান শুভ।
নতুন আংশিক কমিটি চলতি মাসে ৫ তারিখে ঘোষণা হতে পারে বলে জানা গেছে। সূত্রটি জানায়, ছাত্রদলের ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কেন্দ্রীয় ও ছাত্রদলের শেষ হওয়া কমিটিগুলোতে সিন্ডিকেটের কারণে তেমন কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি এমন অভিযোগ থাকলেও এবারের কমিটি গ্রুপের আদলে নয়, ত্যাগের মূল্যায়ন করে নেতৃত্ব বাছাই করবে বলে প্রত্যাশা ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশীদের।
সূত্র জানায়, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শক্তিমত্তায় ভর করেই বিএনপি বরাবর প্রতিরোধ কর্মসূচি দিয়ে এসেছে। ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি আত্মপ্রকাশের পর থেকে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ নানা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সংগঠনটি নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় থেকেছে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে দেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রসংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। এ অবস্থার জন্য মূলত দলটির নেতাদের ব্যর্থতাই দায়ী। সংকট উত্তরণ এবং জনগণের স্বার্থে যথাসময়ের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে ছাত্রদল। অতীতে ছাত্রদলের কমিটি দেয়ার ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট-আঞ্চলিকতা প্রভাব ছিল বলে অভিযোগ ছিল। যে কারণে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা সিটকে পড়েন। তবে এবারের কমিটি ‘মাইম্যান’ থেকে বের হতে না পারলে আগের থেকে খারাপ অবস্থায় পড়বে ছাত্রদল এমন আশঙ্কা অনেকের।
ইডেন কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেহেনা আক্তার শিরিন নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল একটি বড় সংগঠন, সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশের। যারা রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামের সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে, অতীতেও যারা করছে বা সামনে করতে পারবে। যাকে সংগঠন যোগ্য মনে করবে তাকে রাখবে। ওই দিক থেকে মনে করি, অতীতেও ছিলাম, বর্তমানে থাকব। আমার সেশনের ওপর ভিত্তি করে এই কমিটিতে আমাকে ভালো জায়গায় রাখবে।’
ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুর রহমান আউয়াল নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘ছাত্রদলের কর্মী হিসেবে সর্বদা মাঠে ছিলাম, আছি, থাকবো। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যে ত্যাগ, সেটির মূল্যায়ন করবে দল এতটুকু বিশ্বাস আছে আমার প্রাণপ্রিয় সংগঠনের ওপরে।’
ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সালেহ আদনান নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে আমি আমার সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করেছি।’
‘ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ঘোষিত আংশিক কমিটিতেই পদপ্রত্যাশী ছিলাম। তারপরও পার্টি সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গ্রহণ করি। আমি বিশ্বাস করি, দলের এই দুঃসময়ে আমার ডেডিকেশন, যোগ্যতা ও পরিশ্রম বিবেচনা করে ঘোষণা-পরবর্তী সর্বোচ্চ পদে আমাকে দল মূল্যায়ন করবে। আদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতি করি সুতরাং দল যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটি মেনে কাজ করব।’
ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জকির উদ্দিন আবির নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমি ২০০৮ সাল থেকে ছাত্রদলের রাজনীতি সাথে জড়িত। শুরু থেকেই সকল আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত ছিলাম। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও ২৮ অক্টোবর থেকে প্রতিটি পর্যায়ে মাঠে ছিলাম, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা বিক্ষোভ মিছিল করেছি। কমিটিতে আমার ত্যাগের মূল্যায়ন হবে বলে বিশ্বাস করি।’
ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আবু জাফর নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যেসব সহযোদ্ধা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যারা রাজপথে মিছিল-মিটিং, আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল সেসব সহযোদ্ধাকে যেন মূল্যায়ন করা হয়। সেটাই আমাদের চাওয়া, সর্বোপরি দেশনায়ক তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, সেটাকে মেনেই আমরা রাজপথে থাকবো।’
ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক হায়াত মাহমুদ জুয়েল নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আমরা ক্ষমতার বাইরে আছি। পদ-পদবী আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়। আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় হলো, যেকোনো উপায়ে এই স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটানো। আমাদের অভিভাবক দেশনায়ক তারেক রহমান যখনই আন্দোলন-সংগ্রামে ডাক দিয়েছিলেন তখনি নেমে পড়েছি। আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম চলমান। সংগঠন যদি আমাদেরকে কোনো পদে আসীন করে তবে সর্বোচ্চ কাজ করার চেষ্টা করব, আর যদি কর্মী হয়ে কাজ করতে হয় তারপরও আমরা জাতীয়তাবাদী আদর্শের জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতে পিছপা হবো না।’
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির নয়া দিগন্তকে বলেন, যারা আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন, বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের ত্যাগকেই কমিটিতে মূল্যায়ন করা হবে, এর বাইরে নয়। আমরা সেভাবে কাজ করছি।’
‘পদপ্রত্যাশীদের ব্যাপারে এখন যাচাই-বাছাই চলছে, সবার মতামত নেয়া হচ্ছে।’
অনুমোদনের সময়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সময় বলা সম্ভব হচ্ছে না, দল যখন সিদ্ধান্ত নিবে, তখনি ঘোষণা করা হবে।’
এ বিষয়ে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব নয়া দিগন্তকে বলেন, নিঃসন্দেহে এবারের কমিটিতে ত্যাগের মূল্যায়ন হবে। কোনো সিন্ডিকেট বা বলয়ে কমিটি হবে না। কমিটি হলে সবাই দেখবেন, এইটুকু বলতে পারি।
কমিটির কাজ চলছে, আংশিক হোক আর পূর্ণাঙ্গ হোক অতিশিগগিরই কমিটি অনুমোদন দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা