১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ইসরাইলের নিধনযজ্ঞ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জামায়াতের

ইসরাইলের নিধনযজ্ঞ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জামায়াতের - ছবি : নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এক বৈঠক সংগঠনের আমির ডা: শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ফিলিস্তিনি মুসলিম জাতিগত নিধনযজ্ঞ বন্ধে বিশ্ববাসীর প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে গৃহীত প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার (৩১ মে) এ বৈঠকে ফিলিস্তিনে বিশেষ করে অতি সম্প্রতি রাফায় দখলদার ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং কার্যকর পদক্ষেপ প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে ‘দখলদার ইসরাইলি বাহিনী ১৯৪৮ সাল থেকেই ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ঘরবাড়ি ও ভূমি জবরদখল করে দখলদারিত্ব চালিয়ে আসছে। দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনে বর্বর গণহত্যা চালিয়ে ফিলিস্তিনে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে।

গত বছর ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৭ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে এবং ৮২ হাজারের অধিক মানুষকে আহত করা হয়েছে, যাদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। নিখোঁজ রয়েছে শত শত ফিলিস্তিনি। এমনকি জাতিসঙ্ঘের কর্মী, ফিলিস্তিনি ও বিদেশী সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। এইসব বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই নিয়েছিল। কিন্তু ইসরাইলি বাহিনী আশ্রয় শিবিরগুলোতেও হামলা করে গণহত্যা চালাচ্ছে। বর্বর ইসরাইলিদের হাত থেকে হাসপাতাল, মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল, কলেজ ও আশ্রয় কেন্দ্র কোনো কিছুই রেহাই পায়নি। গাজায় এ পর্যন্ত সাতটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে এবং এসব গণকবর থেকে কয়েক শত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

হাসপাতালে হামলা করে চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত করা হয়েছে। চিকিৎসা সামগ্রী এবং ওষুধের অভাবে আহতদের ন্যূনতম চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। ব্যথানাশক ওষুধ ছাড়াই চিকিৎসকদের আহত ব্যক্তিদের দেহে অস্ত্রোপচার করতে হচ্ছে। ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে শিশুরা মাটির কচু-কন্দ ও লতাপাতা জোগাড় করে খাচ্ছে। গবাদি পশুর খাদ্য দিয়ে তারা রুটি বানিয়ে খেতে বাধ্য হচ্ছে। বিবেকবান বিশ্ববাসীর প্রশ্ন ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর চালানো এই গণহত্যা যদি ইতোমধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি না করে থাকে, তাহলে আর কী কী হলে সেই পরিস্থিতিকে নিকৃষ্টতম বিপর্যয় বলা যাবে? ফিলিস্তিনের নির্যাতিত-নিপীড়িত মুসলমানদের ওপর অবৈধ ইসরাইলি বাহিনীর এসব আগ্রাসী হামলার নিন্দা জানানোর কোনো ভাষা আমাদের জানা নেই। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা ফিলিস্তিনে গণহত্যা ও মুসলিম জাতিসত্তা নির্মূলের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, ফিলিস্তিনে হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখের অধিক বাস্তুচ্যুত সাধারণ ফিলিস্তিনি রাফাহর শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা সেখানে খাদ্য ও পানির অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এই অমানবিক সঙ্কটের মধ্যেও বর্বর ইসরাইলি বাহিনী রাফায় স্থল অভিযান পরিচালনা করে গণহত্যা চালাচ্ছে। তারা যুদ্ধের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে নিষিদ্ধ কার্পেট বোমা নিক্ষেপ করছে। গত ২৬ মে রবিবার রাফাহর একটি তাঁবুতে বর্বর ইসরাইলি বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ৪৫ জন ফিলিস্তিনিসহ এ পর্যন্ত ৬৬ জনকে জীবন্ত দগ্ধ করে হত্যা করেছে। জাতিসঙ্ঘ জানিয়েছে, ইসরাইলি অভিযানের মুখে গত দুই সপ্তাহে রাফাহ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে ১০ লাখের মতো মানুষ। এর আগে জাতিসঙ্ঘ বলেছে, ‘রাফায় স্থল অভিযান ‘নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়’ সৃষ্টি করবে। জাতিসঙ্ঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই নাগাদ পুরো ফিলিস্তিনে দুর্ভিক্ষ ব্যাপক রূপ নিতে পারে।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা আরো লক্ষ্য করছে যে, গাজায় খাদ্য সামগ্রী প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অভুক্ত গাজাবাসীর জন্য খাদ্য বহনকারী ট্রাকে হামলা করে উগ্র ইসরাইলিরা পদদলিত করে খাবার নষ্ট করেছে এবং গাজায় প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অভিমত হচ্ছে স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ফিলিস্তিন সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। অতি সম্প্রতি ইউরোপের তিনটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর আগে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে ১৪৩টি সদস্য রাষ্ট্র ভোট দিয়েছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা শান্তিকামী বিশ্ববাসীর এই প্রস্তাবকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জাতিসঙ্ঘ, ওআইসিসহ শান্তিকামী গণতান্ত্রিক বিশ্ব ও মুসলিম উম্মাহর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে। একইসাথে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের শাহাদাত কবুল করার এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করছে এবং নিহতদের শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও আহতদের প্রতি এবং ফিলিস্তিনি সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাছে।’

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement