১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ডিসি-ইউএনওদের দামি গাড়ি দেয়ার সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় : অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন

- ছবি - ইউএনবি

ডিসি-ইউএনওদের দামি গাড়ি দেয়ার সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেছেন, বর্তমানে আশঙ্কাজনকভাবে ঋণ নির্ভরতা বাড়ছে। দেশে রিজার্ভের পরিমাণ যেভাবে কমে যাচ্ছে, তা শঙ্কার কারণ হতে পারে। আর্থিক খাতে সুশাসনে আমরা অনেকটা এগিয়ে ছিলাম, কিন্তু বর্তমানে কিভাবে পিছিয়ে গেলাম সেটাই বিস্ময়কর।’

শনিবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) অর্থনৈতিক সুরক্ষায় আগামী বাজেটের কৌশল নিয়ে ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, ‘কর ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, বৈষম্য, দুনীর্তি ও অন্যায্যতা বহাল রেখে আসন্ন বাজেটে করারোপ করা হলে সেটি রাজস্ব আহরণে ভালো ফল দেবে না। রাজনীতিবিদ বা প্রভাবশালীদের চাপের কারণে রাজস্ব আহরণ যাতে বিঘ্নিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

‘৮০ শতাংশ বিত্তবান কর ফাঁকি দিচ্ছে। ব্যবসায়ীদের বড় একটা অংশ ভ্যাট দেয় না। এত কম রাজস্ব আয় দিয়ে যেখানে সরকারি কর্মচারীদের বেতন চালানোই যাচ্ছে না, সেখানে উন্নয়ন ব্যয় মেটাবে কিভাবে?’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে আইএমএফ খুব বেশি জানে- এটি বিশ্বাস করার কারণ নেই। আইএমএফের পরামর্শ দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে গ্রহণ করতে হবে।

‘বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তি দুবাই-সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে নাম লিখিয়ে ফেলেছে। তারা কোন দেশের নাগরিক সেটাও স্পষ্ট নয়। তারা কিভাবে টাকা আনা-নেয়া করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সে বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারছে না।’

অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক সুরক্ষায় আসন্ন বাজেটের কৌশল নিধার্রণে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান ১০ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন।

সেগুলো হলো-

১) খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে কৃষিবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করা।

২) পোশাকসহ অন্যান্য রফতানিখাতে অপ্রয়োজনীয় প্রণোদনা কমিয়ে আনা।

৩) নতুন কোনো প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা।

৪) শেয়ার বাজারে ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ট্যাক্স আরোপ করা।

৫) যারা কর প্রদান করছে তাদের ওপর অযৌক্তিকভাবে করের বোঝা না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানো।

৬) প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা ২.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা।

৭) শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বর্তমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বরাদ্দ বাড়িয়ে এর আকার বৃদ্ধি করা।

৮) আসন্ন বাজেটকে সামনে রেখে জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিতের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে গণমাধ্যমকমীর্দের প্রবেশ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তা নিরসন করা।

৯) এনবিআরকে কর আহরণে কঠোর অবস্থান নিতে রাজনৈতিক সুরক্ষা প্রদান করা।

১০) বাংলাদেশ রেলওয়ে, বিআরটিসি ও বিমানসহ লোকসানী খাতে বরাদ্দ দিতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা।

‘অর্থনৈতিক সুরক্ষায় রাজস্ব আয় বৃদ্ধি আগামী বাজেটের প্রধান কৌশল হওয়া উচিৎ’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকদের হারিয়ে ইডেন মহিলা কলেজে বিতার্কিকরা জয়লাভ করে।

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, বিআইডিএসের রিসার্চ ফেলো তাহরিন তাহরীমা চৌধুরী, প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টেন্ট আবুল বশির খান, সাংবাদিক শাহ আলম খান প্রমুখ।

প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেয়া হয়।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement