২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

মাওলানা আবদুল খালেক মণ্ডলের মৃত্যুদণ্ডে জামায়াত আমিরের উদ্বেগ

ডা. শফিকুর রহমান - ছবি : নয়া দিগন্ত

সাতক্ষীরা অঞ্চলের গণ-মানুষের প্রিয় নেতা ও সাবেক এমপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সাবেক সদস্য, সাতক্ষীরা জেলার সাবেক আমীর, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেক মণ্ডলকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনিসহ আটক সকল জামায়াত নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বৃহস্পতিবার নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “সরকার ষড়যন্ত্র করে পরিকল্পিতভাবে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে একের পর এক হত্যা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় সরকারি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন সাতক্ষীরা জেলার জনপ্রিয় নেতা ও সাবেক এমপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সাবেক সদস্য, সাতক্ষীরা জেলার সাবেক আমীর, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেক মণ্ডল। সরকার মিথ্যা, বায়বীয় ও কাল্পনিক অভিযোগে অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে নিজেদের দলীয় লোকদের দ্বারা আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। মাননীয় আদালত সরকারের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় সাজানো সাক্ষীর ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ২৪ মার্চ মৃত্যুদণ্ডের যে রায় ঘোষণা করেছেন তা একটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়। এ রায়ে অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেক মণ্ডল ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে আপীল করবেন। উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলে তিনি খালাস পাবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।'

তিনি বলেন, 'সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে আনীত সরকারের অভিযোগের সাথে তাঁর ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতাও নেই। অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেক মণ্ডল সাতক্ষীরা অঞ্চলের একজন অবিসংবাদিত নেতা। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ছাত্র জীবনের সকল পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অর্জন করেন। কারাগারের বন্দী জীবনে তিনি কুরআন হিফজ করেন। সাতক্ষীরার মানুষ তাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। সরকার তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। সরকার পক্ষ আদালতে তার বিরুদ্ধে গঠিত অভিযোগের পক্ষে যেসব ডকুমেন্ট দাখিল করেছেন তা সত্য নয়। তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা। সরকার তার বিরুদ্ধে কল্পকাহিনী তৈরি করে, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায়ে সাজানো মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার ব্যবস্থা করেছে। আমরা অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেক মণ্ডলকে হত্যার সরকারি ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছি।”

ঢাকা মহানগরী উত্তরের বিক্ষোভ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, সরকার নিজেদের সীমাহীন ব্যর্থতা ঢাকতে এবং জনগণের দৃষ্টিতে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যই কথিত যুদ্ধাপরাধকে নতুন করে ইস্যু বানিয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় সাতক্ষীরা থেকে দুই বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক মণ্ডলকে সাজানো মামলা, মিথ্যা ও যোগসাজসী সাক্ষীর মাধ্যমে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। কিন্তু আত্মসচেতন জনতা সরকারের সাজানো ও পাতানো রায় কখনোই মেনে নেবে না। তিনি সরকারকে প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে অবিলম্বে আব্দুল খালেকের দ-াদেশ বাতিল করে তিনি সহ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন, এটিএম আজহারুল ইসলামসহ সকল নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার আহবান জানান। অন্যথায় দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে জনতার নেতাদের জনতাই মুক্ত করে ছাড়বে ইনশাআল্লাহ।

তিনি আজ রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক ম-লের মৃত্যুদ-াদেশের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে ন্যায়ভ্রষ্ঠ দ-াদেশ বাতিলের দাবিতে এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি বাড্ডা ব্রিজ থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে লিংক রোডে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি ডাঃ ফখরুদ্দীন মানিক, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জিয়াউল হাসান, জামাল উদ্দীন ও মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য মু. আতাউর রহমান সরকার, মেসবাহ উদ্দীন নাঈম ও এইচ এম আতিকুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, পশ্চিম সভাপতি সাব্বির আহমেদ ও সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমূখ।
ডঃ রেজাউল করিম বলেন, সরকারের অপশাসন-দুঃশাসনের কারণেই দেশ এখন আন্তর্জাতিকভাবে বন্ধুহীন রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে। ব্যাপকভিত্তিক মানবাধিকার লংঘনের কারণে সরকারের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড একশন ব্যাটলিয়নের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার দেশে সুশাসন উপহার দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে মূল্যস্ফীতি এখন সকল সময়ের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এসব অপকর্মের সাথে সরকার সংশ্লিষ্টদের যোগসাজস রয়েছে। মূলত, দ্রব্যমূল্য লাগামহীন বৃদ্ধির দেশে এখন দুর্ভিক্ষাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চরমে উঠেছে জনদুর্ভোগ। আর সরকার এসব ব্যর্থতার প্রতিবাদের জনগণ যখন রাজপথে নেমে আসতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই গণআন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার জন্য সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাদ্দিস আব্দুল খালেককে যোগসাজসী দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। তিনি এলাকার জনপ্রিয় ব্যক্তি। তিনি নির্বাচিত ইপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়াও তিনি কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি যুদ্ধাপরাধী বা কোন অপরাধের সাথে যুক্ত থাকলে জনগণ ভোট দিয়ে তাকে বারবার নির্বাচিত করতেন না। মূলত, সরকারকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই তাকে ন্যায়ভ্রষ্ঠ দ-াদেশ দিয়েছে। তাই জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে এই জুলুমবাজার সরকারের পতনের কোন বিকল্প নেই। তিনি অগণতান্ত্রিক সরকারের পতনের লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের প্রতিবাদ

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) অধ্যক্ষ আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে ন্যায়ভ্রষ্ট ফাঁসির রায় ঘোষণার প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ।

কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহা. দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী কামাল হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য এস এম আহসান উল্লাহ, কামরুল আহসান হাসান, মতিউর রহমান, মোতাছিম বিল্লাহ সহ জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

মুহা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, দেশের জনগণ লক্ষ্য করেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার আদালতকে ব্যবহার করে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মানবতাবিরোধী কথিত অপরাধের মামলায় সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ফাঁসির রায় দিয়ে হত্যা করেছে। তাদের উদ্দেশ্য একটাই জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি দেশপ্রেমিক আদর্শিক সংগঠনকে নেতৃত্ব শূন্য করা। দেশের মানুষ এখন পরিস্কারভাবে তা বুঝে গেছে। এটা দেশের বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ। ফলে সরকারের ফরমায়েশি ও ন্যায়ভ্রষ্ট রায় জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।

দেলোয়ার হোসেন আরো বলেন, আমরা ক্ষমতাসীন সরকারকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, অবিলম্বে এইসব মিথ্যা প্রহসনের মামলা প্রত্যাহার করে অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, এটিএম আজহারুল ইসলাম সহ সকল নিরাপরাধ রাজবন্দী জামায়াত নেতৃবৃন্দের মুক্তি প্রদান করুন। সেইসাথে দেশের মানুষের বাক স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়ে সকল প্রকার অন্যায় কর্মকান্ড বন্ধ করুন অন্যথায় দেশের জনগণ আপনাদেরকে চূড়ান্তভাবে বিদায় করতে রাজপথে নেমে আসবে। দেশপ্রেমিক জনগণ এই জুলুমের অবসান ঘটিয়েই ঘরে ফিরবে ইনশাআল্লাহ।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement
রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বিদেশী অস্ত্র ও গুলিসহ আরসার কমান্ডার আটক বান্দরবানে অস্ত্র, গুলি ও ড্রোন সিগন্যাল জ্যামারসহ বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার পোকায় খেলো ভর্তির সময় জমা দেয়া রাবি শিক্ষার্থীদের মার্কশিট কুষ্টিয়ায় বিলের পানিতে ডুবে ফুফু-ভাতিজির মৃত্যু জ্বালাপোড়া আর যন্ত্রণায় এখনো কাতরান রেজাউল মুন্সি চীনের নতুন ৬টি স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণ দ্রুত উইকেট হারানোর চাপ নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে বাংলাদেশ সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগে উত্তাল দীঘিনালা : নিহত ৩ আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা : পুলিশ সদর দফতর আজ বিকেল থেকে চলবে মেট্রোরেল, খুলছে কাজীপাড়া স্টেশনও আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য হুমকি : মিয়া গোলাম পরওয়ার

সকল