১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

হেফাজতের সাথে দূরত্ব ঘোচাতে চায় আ’লীগ!

হেফাজতের সাথে দূরত্ব ঘোচাতে চায় আ’লীগ! - ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি রাজধানীর দোলাইরপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্কের বেশ টানাপড়েন চলছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ অক্ষুণœ এবং একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে ইসলামী ভাবধারার এই গোষ্ঠীকে বাগে আনতে চাইছে আওয়ামী লীগ। তারই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার রাতে হেফাজত সমর্থিত আলেম-ওলামাদের সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। যদিও ওই বৈঠকে ভাস্কর্য ইস্যুতে এখনো কোনো সমঝোতা হয়নি বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

দলটির নেতারা মনে করছেন, প্রথমত, বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে বড় ধরনের কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিল বিএনপি জোট। ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকারের সাথে হেফাজতের একটি সুসম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু সম্প্রতি আল্লামা আহমদ শফীর ইন্তেকালের পর হেফাজতের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বর্তমান কমিটিকে হাত করে বিএনপি জোট তাদের স্বার্থে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে পারেÑ এমন আশঙ্কা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ চায়, মুসলমান-হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানসহ দলমত নির্বিশেষে সব ধর্মের মানুষকে সাথে নিয়ে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি এগিয়ে নিয়ে যেতে। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে ইসলামী ভাবধারার এই গোষ্ঠীকে অবহেলিত রেখে উন্নয়ন সম্ভব নয়। ফলে আওয়ামী লীগ চায় হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও তাদের সাথে সরকার বা আওয়ামী লীগের একটি সামাজিক সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। যাতে তারা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতেও ভূমিকা রাখতে পারবে। দেশের কল্যাণে তারা নিয়োজিত থাকতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা-৫ আসনের এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু নয়া দিগন্তকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য যে জায়গায় স্থাপন করা হচ্ছে এটা আমার আসনের দক্ষিণের শেষ সীমানায়। শুরুতে কিছু আলেম ওলামা আন্দোলন করে বাধা দিয়েছে। কিন্তু এখন তারা কিছুটা নীরব রয়েছে। তিনি বলেন, যাত্রাবাড়ী এলাকায় আড়াই শ’র মতো মাদরাসা রয়েছে। তারা আমাদের এ সমাজেরই মানুষ। তাদের সাথে সামাজিকভাবে উঠাবসা করতে হয়। তাদেরকে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুলে ধরেছি, বলেছি ভাস্কর্য ও মূর্তি এক নয়। বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামী ও মুসলিম দেশেও ভাস্কর্য রয়েছে- এটা আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। আশা করি, তারা বিষয়টা বুঝবেন এবং একটি সুন্দর সমাধান হবে।

হেফাজতে ইসলামের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা প্রসঙ্গে আওয়ামী ওলামা লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যসচিব মুফতি মাসুম বিল্লাহ নাফেয়ী নয়া দিগন্তকে বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে ঘটনার পর সরকারের সাথে হেফাজতে ইসলামের একটি সুসম্পর্ক তৈরি হয়। এখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ ইস্যুতে সরকারের সাথে সম্পর্কের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতীতে তার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে হেফাজতের সাথে সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আলেম-ওলামারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের পরিবর্তে মিনার স্থাপনসহ পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছেন।

ওই বৈঠকে সমঝোতা না হওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের বিষয়টিও তুলে ধরেন। এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে দলটির হাইকমান্ডের মধ্যে। কিভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় সেই বিষয়টি নিয়েও কাজ চলছে। সূত্র বলছে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী হেফাজতের দাবির সাথে একমত পোষণ করতে হলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ থেকে আওয়ামী লীগকে সরে আসতে হবে- যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। আবার ভাস্কর্য নির্মাণ করতে গেলে হেফাজতে ইসলামের সাথে সরকারের স্থায়ী দূরত্ব তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে সরকার ও হেফাজতের মধ্যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আওয়ামী লীগকে ইসলামবিরোধী হিসেবে প্রমাণ করাও সহজ হবে- এই ইস্যুও তুলে দিতে চায় না দলটি।

বৈঠক প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে আলেম-ওলামাদের সাথে তাদের পাঁচ দফা প্রস্তাব অনুযায়ী আলোচনা চলছে। তারা ভাস্কর্যের পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর নামে মিনার স্থাপনের প্রস্তাব করছেন। কী করা হবে, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা সংবিধানের বাইরে যাবো না। আবার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেও কিছু করব না।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা নয়া দিগন্তকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিকভাবে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের সাথে আলাপ আলোচনা চলছে।


আরো সংবাদ



premium cement
রিজার্ভের শর্ত শিথিল করল আইএমএফ ‘জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারীদের ওপর টার্গেট কিলিং চালাচ্ছে আ’লীগ’ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা নতুন করে তদন্তের অভিমত হাইকোর্টের হামজা চৌধুরী এখন বাংলাদেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার বিএনপির আ.লীগের নির্বাচন নিয়ে বদিউল আলমের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান বৈষম্যবিরোধীদের চলতি বছর পোল্ট্রি ব্রিডার শিল্পে ক্ষতি ৭৫০ কোটি টাকা কর ছাড় নিয়ে আদানির শর্ত লঙ্ঘন, চুক্তি পর্যালোচনা করতে চায় বাংলাদেশ হজ প্যাকেজের বাকি টাকা ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে হবে দেশ গঠনে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে : তারেক রহমান পুতিন যেকোনো সময় ট্রাম্পের সাথে দেখা করতে প্রস্তুত

সকল