২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
আইনজ্ঞদের অভিমত

খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসার আবেদন করতে পারবেন

খালেদা জিয়া
বেগম খালেদা জিয়া - সংগৃহীত

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) ধারায় প্রশাসনিক আদেশে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা দু’টি মামলার দণ্ড স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এ দু’টি মামলা হলো, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা। এই দু’টি মামলায় খালেদা জিয়ার আপিল উচ্চ আদালতে বিচারাধীন আছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অন্য ৩৫ মামলায় তিনি জামিনে আছেন। তাই এখন আর কোনো মামলায় জামিন নেয়ার প্রয়োজন হবে না বলে আইনজীবীরা মনে করেন। তারা জানান, দণ্ড স্থগিত হওয়ায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় থাকবে। আর যেহেতু বয়স বিবেচনায় এবং মানবিক কারণে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে তাই ভবিষ্যতে জীবন রক্ষার জন্য তার বিদেশে যাওয়া প্রয়োজন হলে সরকারের কাছে আবেদন করা যাবে এবং সরকার তা বিবেচনা করতে পারে। আইনজীবীরা প্রত্যাশা করেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি যেন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সরকার যেন অন্তরায় না হয়।

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ওই ধারা মোতাবেক প্রশাসনিক আদেশে সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন নেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এটা সম্পূর্ণ প্রশাসনিক আদেশ। তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১-এর তিনটি উপধারা রয়েছে। প্রথম ধারা সম্পূর্ণভাবেই প্রসাসনিক আদেশ। যেহেতু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সে জন্য তার অনুমোদন নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, একটি কথা আইনমন্ত্রী বলেছেনÑ মানবিক কারণে বয়সের জন্য তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জীবন রক্ষার জন্য যদি তাকে বিদেশে যেতে হয় বা আরো কিছু করতে হয় সেটিও আমার মনে হয় সরকারের কাছে আবেদন করলে সরকার বিবেচনা করবে। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, যে শর্তে খালেদা জিয়ার সাজা সরকার ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে সেই শর্ত ভঙ্গ করলে তা বাতিল হয়ে যাবে। বেগম খালেদা জিয়া বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না, এই শর্তে ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করেছে সরকার।

এ বিষয়ে বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা ৩৭টি মামলার মধ্যে দু’টি বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ওই দু’টি মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার দণ্ড স্থগিত করেছে সরকার। সে ক্ষেত্রে এই দু’টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে বা যেভাবে ছিল সেভাবে থাকবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রত্যাশা তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যেন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সরকার যেন অন্তরায় না হয়।
যে আইনে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছে সেই ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় বলা হয়েছে : ‘(১) কোনো ব্যক্তি কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হইলে সরকার যে কোনো সময় বিনা শর্তে বা দণ্ডিত ব্যক্তি যাহা মানিয়া নেয় সেই শর্তে তাহার দণ্ড স্থগিত রাখিতে বা সম্পূর্ণ দণ্ড বা দণ্ডের অংশবিশেষ মওকুফ করিতে পারিবেন’।
আইনের এই ধারায় প্রশাসনিক আদেশে সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে।

৪০১ (২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘যখন কোনো দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করিবার জন্য সরকারের নিকট আবেদন করা হয়, তখন যে আদালত উক্ত দণ্ড দিয়েছিলেন বা অনুমোদন দিয়েছিলেন সেই আদালতের প্রিজাইডিং জজকে সরকার উক্ত আবেদন মঞ্জুর করা উচিত কিংবা মঞ্জুর করিতে অস্বীকার করা উচিত কি না সে সম্পর্কে তাহার মতামত ও মতামতের কারণ বিবৃত করিতে এবং বিবৃতির সহিত বিচারের নকল অথবা যে নথি বর্তমানে আছে সেই নথির সহিত নকল প্রেরণ করিবার নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবেন।’
‘(৩) যে সকল শর্তে কোনো দণ্ড স্থগিত রাখা বা মওকুফ করা হইয়াছে তাহার কোনটি পালন করা হয় নাই বলে মনে করিলে সরকার স্থগিত বা মওকুফের আদেশ বাতিল করিবেন এবং অতঃপর যে ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত রাখা বা মওকুফ করা হইয়াছিল সে মুক্ত থাকিলে যে কোনো পুলিশ অফিসার তাহাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করিতে পারিবেন এবং তাহার দণ্ডের অনতিবাহিত অংশ ভোগ করিবার জন্য তাহাকে জেলে প্রেরণ করা যাইবে।’

‘(৪) যেই শর্তে এই ধারার অধীন দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করা হয় যাহা, যে ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করা হয় সেই ব্যক্তি পূরণ করিবে অথবা শর্ত এমন হইবে যে যাহা পূরণে সে স্বাধীন থাকিবে।’
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে গত মঙ্গলবার ২৪ মার্চ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, বয়স বিবেচনায় ও মানবিক কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এই সময়ে নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে তাকে। এমনকি বিদেশেও যেতে পারবেন না। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১/১ ধারার বিধান অনুসারে খালেদা জিয়ার পরিবারের করা আবেদন বিবেচনায় নেয়া হয়েছে বলে জানান আইনমন্ত্রী।


আরো সংবাদ



premium cement