খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করছে সরকার : জয়নুল
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:০০, আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:২৫
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে বর্তমান সরকার রাজনীতির মাঠ থেকে এবং জনগণ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সাতজন সংসদ সদস্য জেলখানায় খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন। তারা এসে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়া পূর্বের চেয়ে অনেক অসুস্থ। আমরা লক্ষ্য করছি, ইতিমধ্যে খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্যারোল সংক্রান্ত বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণমানুষের নেত্রী, তিনি একজন আপসহীন নেত্রী।
আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১/১১’র সরকারও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার জন্য প্যারোলের নাম করে বিদেশ পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। যা জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। খালেদা জিয়া তখনি জানিয়েছিলেন, তার বিদেশে কোনো বাড়িঘর নেই। বিদেশে কোনো ঠিকানা নেই। তিনি এ দেশের মানুষ। এ দেশেই থাকতে চান।
জয়নুল আবেদীন আরো বলেন, বর্তমান সরকারও খালেদা জিয়াকে তদ্রুপভাবে আটকিয়ে রাজনীতির মাঠ থেকে এবং জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করছে। ইতিমধ্যে তিনি সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে পরিষ্কার করেছেন, যে মামলায় তাকে আটকিয়ে রাখা হয়েছে সেই মামলায় তিনি নির্দোষ। এই মুহূর্তেই তিনি জামিন পাওয়ার হকদার। আমরা আইনজীবীরা তাই মনে করি।
সরকার একদিকে বলছে যে, আদালত জামিন দিলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। এটা কয়েকদিন ধরে বলে যাচ্ছে। আগেও বলেছে। অথচ আমরা যখন আদালতে জামিন আবেদন শুনানি করি তখন সরকার পক্ষ থেকে জোরালোভাবে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। যদিও এই ধরণের মামলায় আমরা কখনো সরকার পক্ষ থেকে এইভাবে জোরালো আপত্তি করতে দেখি নাই। কিন্তু খালেদা জিয়ার মামলায় জোরালো আপত্তি করার ফলে বার বার আমরা জামিন আবেদন শুনানি করা সত্ত্বেও তিনি জামিন পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, সরকারের এ ধরণের বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে যে, সরকার জামিন আবেদনে আপত্তি করেন না। জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে যে, সরকার তো কোনো আপত্তি করে না। কিন্তু জনগণ জানে না, সরকার পক্ষ থেকে দেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা কিভাবে আদালতে জোরালো ভাবে আপত্তি উত্থাপন করেন। বাস্তবিক পক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেয়া হয় তা একেবারে অসত্য।
অতি সম্প্রতি আমরা কয়েকবার জামিন আবেদন নিয়ে আদালতে গিয়েছিলাম। প্রতিবারেই সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো আপত্তি করা হয়েছে। আমরা পুনরায় জামিনের জন্য আদালতে যাবো। আমরা আশা করি সরকার যে কথা বলছেন যে, আদালত জামিন দিলে তাদের কোনো আপত্তি নাই। তাদের এ কথাটি সরকারি আইন কর্মকর্তার মাধ্যমে আদালতে জোরালোভাবে জানাবেন, এটাই আমরা আশা করি।
জয়নুল বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি আইনগতভাবে জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন। আশা করি সরকার ভবিষ্যতে এ আইনগত অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন এবং কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন না। যদি সরকার হস্তক্ষেপ না করে ইনশাআল্লাহ তিনি এ আদালত থেকে জামিন পাবেন।
৩৭ মামলা রয়েছে। এর মধ্যে অরফানেজ ট্রাস্টেরটা আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আর চ্যারিটেবল হাইকোর্ট বিভাগে। প্রথমে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পরে আপিল বিভাগে আবেদন করবো। সরকার হস্তক্ষেপ না করলে আশা করি এই দুই মামলা জামিন পেলে তার মুক্তিতে কোনো বাধা নেই।
যখনি জামিন আবেদন নিয়ে সোচ্চার হই তখনই একটা খবর এসে যায় খালেদা জিয়া প্যারোলে চলে যাচ্ছেন। এই যে প্যারোল প্যারোল রাজনীতি, যে গুঞ্জন এতে করে খালেদা জিয়ার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
প্যারোলে ও জামিনে মুক্তির প্রশ্নে জয়নুল আবেদীন বলেন, সরকারের কাছে অনুকম্পা চাওয়া, এ জন্য সরকার বার বার বলে আমাদের কাছে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চান। খালেদা জিয়া নির্দোষ, তিনি কেন দোষ স্বীকার করবেন।
প্যারোলের বিষয়ে আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, গতকাল আমাদের একজন সংসদ সদস্য বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। তিনি বলেছেন, ম্যাডামকে প্যারোলের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছেন, আমি প্যারোলের কোনো আবেদন করবো না এবং করি নাই। এবং আমি জামিন পাওয়ার হকদার।