অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত : আওয়ামী লীগে নিহত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:১৯
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘাত এখন সবচেয়ে বেশি হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের৷ আর এইসব অভ্যন্তরীণ সংঘাত-সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যায়ও শীর্ষে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মীরা৷
রক্তক্ষয়ী অভ্যন্তরীণ সংঘাত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে৷ আর এতে জড়িয়ে পড়ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপগুলো৷ গ্রুপের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও পদ-পদবীর জন্য যেমন সংঘাত হচ্ছে তেমিন স্থানীয় পর্যায়ে টেন্ডার, দখল ও জমিজমা নিয়ে সংঘাত হচ্ছে৷
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে ২০১৮ সালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাত-সংঘর্ষের ৮৬টি ঘটনায় ২৩ জন নিহত এবং এক হাজার ৪৫৩ জন আহত হয়েছেন৷ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে তারা এই হিসেব তৈরি করেছে৷ একই সময়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ১৬টি৷ তাতে একজন নিহত এবং ১৫১ জন আহত হয়েছেন৷ বিএনপির সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ হয়েছে তিনটি৷ এতে আহত হয়েছেন ৬৩ জন৷ নিহত একজন৷
আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের বা ওই সংগঠনগুলোর নিজেদের মধ্যে এই সংঘাত-সংঘর্ষের হিসাব ধরলে সেটা আরো অনেক বেশি ৷ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ, যুবলীগ ও যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও ছাত্রলীগ এভাবে ধরলে ওই এক বছরে আরো অতিরিক্ত ৪৯টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ আর এতে আহত হয়েছেন ৪২৫ জন, নিহত হয়েছেন পাঁচ জন৷ তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষই বেশি হয়েছে, ২৪টি এবং তাতে আহত হয়েছেন দুইশ এবং নিহত হয়েছেন একজন৷
আসকের চলতি বছরের প্রথম সাত মাসের (জানুয়ারি-জুলাই) হিসেবে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ হয়েছে ৩৩টি৷ আর এতে আহত হয়েছেন ৪৭১ জন এবং নিহত ছয় জন৷ এই সময়ে বিএনপির সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ হয়েছে তিনটি৷ এতে আহত হয়েছেন ২৭ জন৷ কেউ নিহত হননি৷
এই সাত মাসে দেশে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ১৩৮টি৷ তাতে আহত হয়েছেন এক হাজার ৫৬৮ জন৷ নিহত হয়েছেন ৩০ জন৷ এর মধ্যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১৮ জন৷ আহত হয়েছেন ৯২৮ জন৷ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ৮২টি৷
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়৷ নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ছয়টি৷ এতে আহত হয়েছেন ৪৭ জন৷ কেউ নিহত হননি৷ ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৪২৩টি সংঘাতের ঘটনা ঘটে৷ তাতে আহত হন তিন হাজার ৪৪১জন৷ নিহত ১৪ হন জন৷ আর সংসদ নির্বাচনে ৪০টি সংঘর্ষের ঘটনায় ৬২১ জন আহত এবং ১৯ জন নিহত হয়েছেন৷
সংবাদমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপগুলোর সংঘাতের খবর ছাপা হচ্ছে৷ এই মাসে চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরাসহ আরো কয়েকটি এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে৷ আগস্টে একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে৷ এরমধ্যে জয়পুরহাটে একজন নিহত হয়েছে৷ ‘আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ-২০১৯' লিখে গুগলে সার্চ দিলে দেশের প্রায় সব এলাকায়ই সংঘর্ষের প্রকাশিত খবরের লিংক পাওয়া যায়৷
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের ভেতরে যে কোন্দল ও সংঘাতের কথা বলা হচ্ছে এর কোনোটিই রাজনৈতিক কারণে হয়নি৷ ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের কারণে এসব সংঘাত বা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে৷ বিএনপি সংঘাত করছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে৷ তারা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ লালন করে৷ তার তাপতো চারদিকে ছড়াবেই৷ আমরা আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ, আওয়ামী লীগের ভেতরে কোনো বিভক্তি নেই৷''
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি সন্ত্রাস থেকে সরে যায়নি তার প্রমাণ রংপুর-৩ উপ নির্বাচনে তারা বঙ্গবন্ধুর খুনির সহধর্মিনীকে মনোনয়ন দিয়েছে৷ বিএনপিরই লোকজন হয়তো বিভিন্ন ব্যক্তির হাত ধরে আওয়ামী লীগের মধ্যে ঢুকে এইসব সংঘাতের ঘটনা ঘটাচ্ছে৷ কিন্তু আমরা তাদের প্রশ্রয় দেব না৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর আছে৷''
এসব অভিযোগের জবাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগে কোনো ভালো লোক যাবে না৷ তারা কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে৷ বিএনপি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য কাজ করছে৷ তাই বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগের গিয়ে সংঘাত- সংঘর্ষের ঘটনা ঘটাচ্ছে এই দাবী অসাড়, এর কোনো ভিত্তি নেই৷‘‘
দুদু বলেন, ‘‘দেশে আইনের শাসন নেই, শেয়ার বাজারের অবস্থা খারাপ, ব্যাংকের টাকা লুট হচ্ছে৷ আর আওয়ামী লীগ এখন নিজেরাই নিজের মধ্যে সংঘাত সংঘর্ষ, হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে৷ এটা কর্তৃত্ববাদী শাসনের ফল৷''
সূত্র : ডয়চে ভেলে