১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

বিশ্ব মিডিয়া যেভাবে দেখছে কাশ্মির পরিস্থিতি

-

কাশ্মিরে ভারত সরকারের নতুন পদক্ষেপকে অঞ্চলটিতে সঙ্ঘাত উস্কে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্বের জনপ্রিয় গণমাধ্যমগুলো। বিজেপি সরকার কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বা স্বায়ত্বশাসন তুলে নেয়ার পর বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যম। এই ঘটনা উপমহাদেশের রাজনীতিতে নতুন সঙ্কট তৈরি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, কাশ্মিরের মর্যাদার বিষয়ে ভারতের যে কোন সরকারের সবচেয়ে বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত। রিপোর্টে কাশ্মিরকে ভেঙে দুই ভাগ করার ঘটনাকে ‘নাটকীয় পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, এতে পাকিস্তানের সাথে উত্তেজনা বাড়বে এবং জম্মু ও কাশ্মিরীদের কাছ থেকে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়বে নরেন্দ্র মোদির সরকার।

আল জাজিরা অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, ভারত রাষ্ট্রপতির এক ডিক্রির মাধ্যমে কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে। গত সাত দশকেরর মধ্যে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলটির জন্য এটি সবচেয়ে বিতর্কীত সিদ্ধান্ত। আল জাজিরা আরো লিখেছে, এই পদক্ষেপের সমালোচকরা বলছেন, সরকার আশা করছেন আর্টিকেল-৩৭০ বাতিলের মাধ্যমে হিন্দুদের কাশ্মিরে জমি কিনে বসবাসের ধারা তৈরি করে তারা মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মিরের জনসংখ্যার চিত্র পাল্টে দিতে পারবেন।

বিবিসি ওয়ার্ল্ডের খবরে ভারত সরকারের পদক্ষেপকে ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা’ হিসেবে দেখা হয়েছে। এর ফলে কাশ্মিরে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। আঞ্চলিক উত্তেজনা চরমে উঠেছে বলেও জানিয়েছে বিবিসি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম সিএনএন লিখেছে, কাশ্মিরের শাসন পদ্ধিতিকে বিতর্কীত এক পরিবর্তন এনেছে মোদি সরকার। সিএনএন অনলাইন তাদের রিপোর্টে লিখেছে, কাশ্মির কার্যত স্তব্ধ এখন। একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এই পদক্ষেপকে কাশ্মিরবাসীর জন্য ‘মানসিক আঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।

আরেক মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, মোদি সরকারের এই পদক্ষেপ সেখানে নতুন করে সঙ্ঘাতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে। এতে বলা হয়েছে, নয়া দিল্লির সাথে জম্মু ও কাশ্মির সম্পর্ক আরো খারাপ হয়েছে এর ফলে।

পাকিস্তানের দ্য ডন নিউজ বলেছে, কাশ্মিরকে মুসলিম প্রধান এলাকা থেকে হিন্দুপ্রধান এলাকা করে তোলার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভারত বিপজ্জনক খেলা খেলছে : পাকিস্তান
এদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ভারতের নেয়া এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে ভারত সরকারের নেয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়েছে, অধিকৃত কাশ্মির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি বিতর্কিত অঞ্চল। ভারত সরকারের একতরফা কোনো পদক্ষেপই বিতর্কিত অঞ্চলের স্ট্যাটাসকে পরিবর্তন করতে পারে না। কারণ এটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনার অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ভারত অধিকৃত কাশ্মির ও পাকিস্তানের জনগণ মেনে নেবে না।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক এই বিবাদের একটি পক্ষ হিসেবে ভারতের নেয়া অবৈধ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পাকিস্তান।’ কাশ্মীরি জনগণের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থনের কথা ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেছেন, ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) যদি মনে করে যে, তাদের সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ, তাহলে তারা প্রেসিডেন্টের আদেশের মাধ্যমে গভর্নর শাসিত আইন জারি কিংবা এটি নিয়ে রাজনীতি করতো না।

‘যদি তারা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির ও লাদাখকে পৃথক দুটি অঞ্চল করে, তাহলে এতে প্রমাণিত হয় যে, তারা আশা হারিয়েছে... আজ ভারত আবারও আন্তর্জাতিক বিশ্বের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একটি বিতর্কিত ইস্যুকে পুনরুজ্জীবিত করলো। এতে সমস্যার সমাধান হবে না, বরং উত্তেজনা বাড়বে। তারা এটিকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। সময়ই বলবে, ভারত এটি নিয়ে কী ধরনের বিপজ্জনক খেলা খেললো।’


আরো সংবাদ



premium cement