বিরোধিতা করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে : জিএম কাদের
- আশরাফ আলী
- ০৫ মে ২০১৯, ১৯:২২
নতুন দায়িত্ব পেয়েই দলকে আগের মতো সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছেন জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের। দলকে সংগঠিত করে এগিয়ে নিতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তিনি। এসব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল আয়োজন, তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নয়া মেলবন্ধন তৈরীর মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টিকে আরো সক্রিয় এবং শক্তিশালী করা।
মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলায় সম্মেলন, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করা, নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে দলকে ঢেলে সাজানো এবং গণমুখী কর্মসূচি দিয়ে সংসদ ও রাজপথে সরব থাকা।
রোববার জিএম কাদের জাতীয় পার্টিকে নিয়ে তার নয়া এই পরিকল্পনার কথা জানান। শনিবার রাতে দলটির চেয়ারম্যান, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সংবাদ সম্মেলন করে অনুজ জিএম কাদেরের হাতে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব তুলে দেন।
এরশাদের এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে দলটির বেশিরভাগ নেতা-কর্মীই বেজায় খুশী। তাদের মতে, পার্টি চেয়ারম্যানের অসুস্থতার কারণে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছিল। তাছাড়া বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদও অনেকটা অসুস্থ। এ অবস্থায় দলের ঐক্য বজায় রাখার পাশাপাশি জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নিতে জিএম কাদেরই শেষ ভরসা। তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়ে এরশাদ ঠিক কাজটিই করেছেন। চেয়ারম্যানের এ সিদ্ধান্তে দলে হতাশা দূর হয়েছে বলে দাবি করেন জাতীয় পার্টির সকলস্তরের নেতা-কর্মীরা।
রাজনীতিতে ‘ক্লিনম্যান’ হিসেবে পরিচিত জিএম কাদেরকে বিভিন্ন সময়ে নিজের এবং দলের উত্তরসূরী বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন বড় ভাই এইচএম এরশাদ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই তিনি বিবৃতি দিয়ে জানান, ছোটভাই জিএম কাদেরই তার রাজনৈতিক উত্তরসূরি। এর অংশ হিসেবে তাকে সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতাও নির্বাচিত করেন।
পরে তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে যান। সেখান থেকে ফিরে গত ২২ মার্চ দলে ‘বিভেদ’ তৈরি ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে ‘ব্যর্থতার’ অভিযোগ তুলে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেন। পরদিন সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকেও তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। সংসদের উপনেতা করা হয় স্ত্রী ও পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদকে।
বিষয়টি সহজভাবে মেনে নেননি জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা। তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ এবং দাবির মুখে জিএম কাদেরকে ৪ এপ্রিল জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহাল করেন এরশাদ।
এরপর হঠাৎ করে শনিবার মধ্যরাতে সাংবাদিকদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় ডেকে নিয়ে ছোট ভাই জিএম কাদেরকে দলের ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে তার অসুস্থতাকালীন সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন তিনি। দলের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করায় জাতীয় পার্টিতে যে স্থবিরতা চলছে, তা কেটে যাবে। পাশাপাশি দলটি নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, জিএম কাদেরের মতো পরিচ্ছন্ন মানুষকে জাতীয় পার্টির সর্বোচ্চ দায়িত্বে দেয়ায় দল উপকৃত হবে। দলের দুঃসময়ে এরশাদ জেলে গেলে কাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে নেতাকর্মীদের পাশে এসে দাঁড়ান। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার মহাজোট আমলে মন্ত্রী হয়েও তিনি অতি সাধারণ জীবনযাপন করেছেন।
এদিকে নতুন দায়িত্ব নিয়ে জিএম কাদের বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদই আমাদের নেতা। তিনি যতদিন বেঁচে আছেন, তার নির্দেশনা অনুযায়ীই জাতীয় পার্টি চলবে। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। এ কারণে তিনি পার্টির কাজ-কর্ম করতে পারছেন না। এতে পার্টির স্বাভাবিক গতিতে স্থবিরতা এসেছে। তাই তিনি আমাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছেন। যাতে তার অবর্তমানে দলের মধ্যে কোনো বিভ্রান্তি না আসে। এতে নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশাও পূরণ হয়েছে।
জিএম কাদের আরো বলেন, কাউন্সিল আয়োজন করাটাই এখন আমাদের মূল কাজ। আর এ কারণেই আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। দলকে আরো শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ করতেই আমরা সবাই এক সঙ্গে কাজ করবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান তার ক্ষমতা বলে পার্টি পরিচালনায় নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এটা বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
যারা সমালোচনা করেন, তারা সমালোচনার জন্যই নানা কথা বলতে পারেন। সিনিয়র নেতাদের অনেকেই ফোন করে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং সবাই তার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন বলেও জানিয়েছেন। ফলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যে ঘোষণা দিয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার তেমন সুযোগ নেই।
তাকে এই দায়িত্ব দেয়া নিয়ে জাতীয় পার্টিতে ‘অস্থিরতার’ কথা স্বীকারও করেছেন জিএম কাদের। তবে তা ততোটা গুরুতর নয় বলেই মনে করছেন তিনি।
জিএম কাদের বলেন, যারা আমাদের দলের অস্থিরতার কথা বলছেন, তাদের আমি একেবারে নাকচ করে দেব না। অস্থিরতা সব দলেরই থাকে। তবে আমাদের দলে তা অস্বাভাবিক ব্যাপার বা অস্বাভাবিক পর্যায়ে গেছে বলে আমি মনে করি না। কেউ দলের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের পার্টির নিয়মনীতি অনুযায়ী যেমন ব্যবস্থা নেয়া দরকার তেমন ব্যবস্থা নেয়া হবে, পার্টির শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কোনো আপোষ করবো না।