২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ শাবান ১৪৪৬
`

বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকবে প্রভু নয় : অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার

- ছবি : সংগৃহীত

ভারতকে রাষ্ট্র হিসেবে আমরা শত্রু মনে করি না উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘ভারতের জনগণের সাথে আমাদের আগামীতেও বন্ধুত্ব হবে। বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকবে প্রভু নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেটা আমাদের জনগণ ঠিক করবে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এদেশে এসে সেটি ঠিক করে দেয়ার কোনো অধিকার নাই। ভারত যদি মনে করে আওয়ামী লীগের পতনের পর তারা অন্য কোনো দলকে সমর্থন দিয়ে সরকারে বসিয়ে এদেশে আবারো তাবেদারি করবে তবে এদেশের ছাত্র-জনতা সেই সরকারকেও উৎখাত করে ভারতে পাঠিয়ে দিবে।‘

তিনি ১৯৫২, ১৯৭১, ১৯৯০ ও ২০২৪ একসূত্রে গাঁথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের সকল আন্দোলন সংগ্রাম ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে।‘

তিনটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনটি শাসক গোষ্ঠীর পতন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের আইয়ুব খান, ৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের এরশাদ এবং সবশেষে ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার খুনি হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পতন হয়। এই পতনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্তি লাভ করে।‘

আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলরুমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ভাষা আন্দোলন থেকে গণ-অভ্যুত্থান অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ‘-শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে বিপ্লব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ মানে হচ্ছে যাকে বাধা দেয়া যায় না। বাংলাদেশের জনগণ ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে সেটি বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে। দুই হাজারের অধিক মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছে। হাজার হাজার আহত-পঙ্গত্ব বরণ করেছে। তবুও ছাত্র-জনতাকে দাবিয়ে রাখা যায়নি। এই গণ-অভ্যুত্থান কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, এদেশের ছাত্র-জনতার।‘

অনেক সত্য ইতিহাস কেন লেখা হয় না প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টার মাইন্ড করা?-এটাও কেউ কেউ ছিনতাই করার চেষ্টা করছে। অনেক বড় দল দাবি করা দলের নেতারা বলে, এই আন্দোলনে আমরা সম্পৃক্ত নয়। আর তাদের ছাত্র সংগঠন দাবি করে তাদের নেতৃত্বে বিপ্লব হয়েছে! অথচ যারা বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছে সেই ইসলামি ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, এই গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টার মাইন্ড শহীদ ও আহত-পঙ্গত্ব বরণকারী সকলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাক্ষী এই গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টার মাইন্ড কারা। রামদা দলের হাত থেকে ইতিহাস বিকৃত করা বন্ধ করতে এদেশের ছাত্র-জনতা আবারো অপ্রতিরোধ্য হয়ে দাঁড়াবে।‘

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ভারতের ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার বাংলাদেশের জনগণের দুশমন পরিচয় দিয়েছে। তারা আমাদের ভূখণ্ডকে আসামের সাথে যুক্ত করে মানচিত্র প্রকাশ করে সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে। আমাদের বিজয় দিবসকে ভারতের বিজয় দিবস দাবি করে নরেন্দ্র মোদি পোস্ট করার মাধ্যমে মোদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনতাই করতে চেয়েছে।‘

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেসের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল আজিজ।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন আমাদের স্বাধীনতার বীজ বুনেছে। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু দেশের জনগণ স্বাধীনতা লাভ না করায় ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণ দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করে। প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতের তাঁবেদারি করছে। ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো লিখেছে, আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে। এটা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। ৫২ সালে আওয়ামী লীগ নামক কোনো দলই ছিল না।‘ তিনি ইতিহাস বিকৃত না করে জন-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে এবং ভারতের তাঁবেদারি ছেড়ে আসতে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের প্রতি আহ্বান জানান।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘৫২-এর ভাষা আন্দোলন ছিল অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা। বাংলাদেশে শুধু ভাষার অধিকার, ভোটের অধিকার আর ভাতের অধিকারের জন্য লড়াই নয়। কেউ আমাদের ওপর জুলুম নির্যাতন আর ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চাইলে শহীদ সালাম, বরকতদের উত্তরসূরীরা রুখে দাঁড়াবে। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সেনা নায়ক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির প্রফেসর গোলাম আজমের নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুছে দিয়ে ভাষা আন্দোলনকেই অস্বীকার করছে। ভাষা আন্দোলনের আলোচনা সভায় গোলাম আজমের নাম উল্লেখ করা হয় না শুধুমাত্র তিনি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এটাই তার অপরাধ। যারা ভাষা আন্দোলনের নায়কদের অস্বীকার করছে তারাই ২৪-এর গণ-অভ্যত্থান অস্বীকার করে দাবি করছে ছাত্ররা কিছুই করেনি সব তারাই করেছে। ৫৩ বছর পর ভারত জানতে চায় আমাদের পররাষ্ট্র নীতি কি?-স্পষ্ট বলতে চাই, আমাদের পররাষ্ট্র নীতি হবে ভারতের সাথে প্রতিবেশী অন্য রাষ্ট্রের যেই সম্পর্ক আমাদেরও একই সম্পর্ক হবে।‘

ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান, ভাষা আন্দোলনের চেতানায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুক্তের চেতনায় ১৯৯০ ও ২০২৪ গণ-অভ্যুত্থান। এই চেতনা ধারন করে আগামীতেও সকল অপশক্তিকে রুখে দিতে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ৫ আগস্ট পর থেকে যারা নিজেদেরকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকার ভাবতে শুরু করেছে তাদেরকে পালিয়ে যেতে হতে পারে। তাই তিনি বাংলাদেশে থাকতে হলে জনগণের মত বিরুদ্ধে রাজনীতি পরিহার করার আহ্বান জানান।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২৪ গণ-অভ্যুত্থানে সকল আত্মদানকারী ও বীর সৈনিকদের জাতীয় সম্পদ হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। কিন্তু দেখা গেছে, যারা যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়েছে তারা আমাদের বীরদের বিভাজন করেছে। দলীয় সম্পদে রূপান্তর করেছে।‘ তিনি সকল আন্দোলন সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ করে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশকে নতুনরূপে সাজিয়ে তুলতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। কিন্তু পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে এটাই বৈষম্য। মানুষ সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাস্তা নেমে আসে। মুখের ভাষা, মায়ের ভাষা চিনিয়ে নিতে দেয়নি। সেই থেকে শুরু হয় মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। পরবর্তী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এই স্বাধীনতায় এ দেশের জনগণ শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ড আর পতাকা পেয়েছে। নাগরিক হিসেবে মানুষ স্বাধীনতা পায়নি। তাই নাগরিক স্বাধীনতার জন্য ছাত্র-জনতা ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করে। ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মানুষ মুক্তি লাভ করে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। প্রতিটি আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃত করার ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং হচ্ছে। যতদিন এদেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ থাকবে ততদিন বাংলাদেশ নিয়ে কোনো চক্রান্ত সফল হবে না।‘

উল্লেখ্য, সেমিনারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের অফিস সম্পাদক কামরুল আহসান হাসান, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম, কর্মপরিষদের সদস্য শাহন আহমেদ খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সহকারী সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমনসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement
অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেফতার আরো ৫৮৯ নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় : আমীর খসরু শুরুর ধাক্কা সামলে এগিয়ে যাচ্ছে নিউজিল্যান্ড মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশীসহ ৪২০ অভিবাসী আটক ড. ইউনূসকে আলজেরিয়া সফরের আমন্ত্রণ বৈষম্যবিরোধীদের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ শুক্রবার হাসিনা নাগরিক সমাজ দমনে বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে : জাতিসঙ্ঘ হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে : মিজা ফখরুল বিএনপি ছাড়া জনগণের হাতে কোনো বিকল্প নেই : খন্দকার মোশাররফ চাঁদাবাজি বন্ধে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধে যান চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা সরকারের সকল দফতরে ই-ফাইলিং চালুর সিদ্ধান্ত

সকল