জুলাইয়ের ইতিহাস বিকৃত হতে দিবে না জামায়াত : ডা: শফিকুর রহমান
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:১৮, আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:১৯
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমাদের জাতির ইহিতাস বিকৃত করা হয়েছে। ৪৭, ৫২, ৬৯, ৭১সহ বাংলাদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের কোনো দলিল বাংলাদেশে কেন নেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কারণ এক ব্যক্তির মিথ্যাচারকে টিকিয়ে রাখতে প্রকৃত শহীদদের কোনো দলিলপত্র করা হয়নি। জুলাইয়ের ইতিহাস যাতে কখনো কেউ বিকৃত করতে না পারে কিংবা মুছে দিতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সর্বপ্রথম জুলাই বিপ্লবের শহীদ স্মারক প্রকাশ করেছে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ‘জুলাই বিপ্লবের শহীদ স্মারক’ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের বীরত্ব তুলে ধরতে ভূমিকা রাখবে জুলাই বিপ্লবের শহীদ স্মারক। এসময় তিনি জুলাই বিপ্লবের শহীদ স্মারক পৃথিবীর সব ভাষায় পর্যায়ক্রমে প্রকাশ ও সংরক্ষণ করার ঘোষণা দেন। ১০ খণ্ডে প্রকাশিত এই শহীদ স্মারকে ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়তে যারা আত্মদান করেছেন সব বীর শহীদদের তথ্য সংরক্ষণ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
৫ আগস্ট তথা ৩৬ জুলাইকে জাতীয় ছুটির তালিকায় অন্তভূক্ত করার দাবিও জানান জামায়াত আমির । এ বিষয়ে তিনি বলেন, ৩৬ জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। এদিন হাজার-হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবকের জীবন ও রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। এই ফ্যাসিবাদ ছিলো স্বাধীন দেশে ভিনদেশী সরকারের আওয়ামী পুতুল সরকার।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিমের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, দ্বিতীয় স্বাধীনতা জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস যাতে কখনো কেউ মুছে দিতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উদ্যোগ নিয়ে এই স্মারক প্রকাশ করছে। জাতীয় প্রেস ক্লাব ছাড়াও নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, চট্রগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল প্রেস ক্লাবে একযোগে ‘জুলাই বিপ্লবের শহীদ স্মারক’ মোড়ক উম্মোচন করা হচ্ছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি এইচ. এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী এদেশে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের মাধ্যমে সব নাগরিকের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করছে। জামায়াতে ইসলামী ইতিহাস রচনা করে, ইতিহাস মুছে দিতে দেয় না, দিবে না।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, জামায়াতে ইসলামী জুলাই বিপ্লবের শহীদ স্মারক প্রকাশের মাধ্যমে এক মহান দায়িত্ব ও দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি রাষ্ট্র করার কথা থাকলেও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের সেদিকে মনোযোগ দেখা যায়নি।
দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছাড়াই জামায়াতে ইসলামী বরাবরই রাষ্ট্রের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে। জুলাই বিপ্লবের শহীদ স্মারক প্রকাশ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল কিন্তু রাষ্ট্র সেটি করতে পারেনি। সেটি করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের সক্ষমতা রাখে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
১২ দলীয় ঐক্য জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, জুলাই বিপ্লবের শহীদ স্মারক প্রকাশের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী ইতিহাসের পাতায় এক প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, জামায়াতে ইসলামী এদেশের জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সব আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আগামীতেও ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৬ মাসে একটি গণহত্যারও বিচার করতে পারেনি। রাষ্ট্র পরিচালনার এই দায়িত্ব জামায়াতে ইসলামীর হাতে দেয়া হলে, সব গণহত্যার বিচার সম্পন্ন হতো বলে আমরা বিশ্বাস করি। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে আগামী দিনের যে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে তার দল থাকবে বলেও তিনি প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর একুশে পদক প্রাপ্ত ডক্টর সুকোমল বড়ুয়া বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে বিগত সময় নানামূখী অপপ্রচার চালানো হয়েছে। বাস্তবে জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম দেখে বুঝতে পারছি এই সংগঠনে দক্ষ ও সৎ নেতৃত্ব রয়েছে। এদের হাতে বাংলাদেশ নিরাপদ বলে আমি বিশ্বাস করি।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রমাণিক বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নিদের্শে জামায়াতে ইসলামীর বহু নেতাকে হাসিনা সরকার হত্যা করেছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার হওয়া দরকার।
বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামী শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণে ১০ খণ্ড স্মারক তৈরি করেছে। জুলাই বিপ্লবের শহীদদেরকে ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিরাপদ এটার প্রমাণ জামায়াতে ইসলামী তাদের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বারবার দিয়ে আসছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী জামায়াতে ইসলামী ব্যতিত আর কোনো দল বা সংগঠন শহীদদের তালিকা করে খুঁজে খুঁজে তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ায়নি।
ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম শহীদ স্মারক প্রকাশিত হয়েছে এটি সত্যি প্রশংসনীয়। অথচ এটি করার কথা ছিলো রাষ্ট্রের। কিন্তু রাষ্ট্র সেদিকে মনোযোগী বলে মনে হচ্ছে না। আমরা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনকে বদর যুদ্ধের ইতিহাস স্মরণ করে প্রেরণা যোগাতে সক্ষম হয়েছি। প্রেস বিজ্ঞপ্তি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা