সীমান্ত ইস্যু এক দিনে সমাধান সম্ভব নয় : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:১১
সীমান্তের সমস্যা এবারই প্রথম নয় উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন বলেছেন, সীমান্তের সমস্যা আমরা মোকাবেলার চেষ্টা করব। সীমান্ত ইস্যু এক দিনে সমাধান করতে পারব না।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের সমস্যা উদ্ভব হতেই থাকবে- আমরা তা মোকাবেলার চেষ্টা করব। এটাই প্রথম নয় আগেও হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে। সীমান্ত ইস্যু এক দিনে সমাধান করতে পারব না। এটি আর কখনো হবে না- এটিও নিশ্চিত করতে পারব না।’
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সচিবালয়ে আসন্ন চীন সফর নিয়ে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
সীমান্ত বেড়া নিয়ে ভারতের বক্তব্য প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি ব্যাখ্যার বিষয়। আমরা বলছি এটি আমাদের বুঝাপড়ার বাইরে যাচ্ছে। তখন আমরা বুঝিয়ে বলছি। তখন এটি সমঝোতার প্রশ্ন আছে। আমরা সেই সমঝোতায় যাব।’
তিনি আরো বলেন, ‘সাধারণ সমঝোতা হলো শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজ দূরে হতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে সচেতনভাবে সেগুলোর কিছু ব্যত্যয় করা হয়েছে। যেমন- তামাবিল সীমান্তে পর্যাপ্ত জায়গা নেই, অথচ সেখানে একটি ঘর তোলা প্রয়োজন। এ ধরনের যেখানে প্রয়োজন, সেখানে কিছু ব্যত্যয় তো করা যেতেই পারে। তবে সাধারণভাবে আমরা সেই নীতিতেই অবিচল আছি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আমরা নিজেরাই আলোচনা করব। মিয়ানমারে চীনের যথেষ্ট প্রভাব আছে, চীন আমাদের সহায়তা করুক। সেখানে যে অন্যান্য অথরিটি বা বাহিনী আছে- তাদের সাথে চীনের যোগাযোগ আছে। আমরাই চাইব চীন যেন আমাদের সহায়তা করে। এটি এক দিনে সমাধান করার বিষয় নয়। রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘ মেয়াদের।
তিনি বলেন, এখন মিয়ানমারে বিরাজমান নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে এখন প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না। একটা সঙ্ঘাতময় পরিবেশে তারা যেতে আগ্রহী হবে না- এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। তাদেরকে জোর করে পাঠানো যাবে না। পরিবেশটা এমন সৃষ্টি করতে হবে, যাতে তারা সেখানে ফিরে যায়। সেই পরিবেশ সৃষ্টিতে আমরা চীনের সহায়তা চাইব। আমরা চাই বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা ও নিশ্চিন্তে ফিরে যেতে পারে। রাখাইনে সেরকম একটি স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হোক।
তিস্তা প্রকল্প নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, নদী নিয়ে যে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) আছে সেটার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সেটি নবায়ন করার সিদ্ধান্ত আছে।
তিস্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে। কতটুকু এগুনো যাবে তা এখনো আমি জানি না। তাদের ও আমাদের আগ্রহ- সবমিলিয়ে জিনিসটি হবে। তবে সমঝোতা চুক্তির অধীনে হবে সেটা করে আসি। তারপরে প্রকল্প নিয়ে সমঝোতা পরের বিষয়। সমস্যা সমাধানে আমরা ইতিবাচক- এতে কোনো সন্দেহ নেই। অগ্রগতি হতে পারে কিছু, প্রাথমিক কথাবার্তাও হতে পারে। সমঝোতা সই হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন উপদেষ্টা তৌহিদ।
পানিসম্পদ সহযোগিতার বিষয়ে ভারতের বাধার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, নিদের্শনামূলক সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এটি আমরা নবায়ন করব। এটি আমাদের প্রথম কাজ। এরপর নির্দিষ্ট প্রকল্পের বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা লাগবে। তবে বাংলাদেশ অবশ্যই তার নিজের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেবে। এই সফরেই নবায়ন হতে পারে বলে আশাও প্রকাশ করেন তিনি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক সরকারনির্ভর নয়। ইস্যুগুলো অনেক দিনের। বিগত সরকারের সময়েও অনেক ইস্যুতে অগ্রগতি হয়েছে সেগুলোও বাদ দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা দেখব সেগুলোতে দেশের স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে কিনা। বৈদেশিক সম্পর্ক চলমান। পরবর্তী সরকার এসেও আমাদের কাজগুলো বাদ দেবে, তা কিন্ত হবে না। অন্য অনেক দেশ আছে যেখানে কোনো পরিবর্তন হয় না। আমাদের এখানে কিছু ক্ষেত্রে হয়, সরকারের চরিত্রের কারণে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদ যেহেতু নির্দিষ্ট নয়। এই সরকার দীর্ঘদিন থাকবে এমন কোনো পরিকল্পনাও নেই। চীনের সাথে হোক বা অন্যান্য দেশের সাথে হোক সেটা কিন্ত আমাদের বাদ দিলে চলবে না। আমাদের যেটুকু সম্ভব করব। পরে যারা আসবেন তা তারা অনুসরণ করবেন।
জেডিআই নিয়ে উপদেষ্টা তৌহিদ বলেন, এটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনি সমঝোতা স্মারক হবে কিনা তা বলতে পারছি না।
আগামী ২১ থেকে ২৩ জানুয়ারি চীন সফরকালে বেইজিংয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন। এসময় বেইজিং ও সাংহাইয়ে পৃথক গবেষণা সংগঠনে বক্তব্য দেবেন তিনি। এছাড়া কয়েকটি প্রযুক্তি কারখানাও পরিদর্শন করার কথা রয়েছে তার।
সূত্র : ইউএনবি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা