এবার টিউলিপের চাচি ও চাচাতো বোনকে নিয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের চাঞ্চল্যকর তথ্য
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:৪৯
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার কথা ভাবছেন যুক্তরাজ্য সরকার। এরই মধ্যে তার চাচি ও চাচাতো বোনকে নিয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে ইউরোপের দেশ মাল্টার পাসপোর্ট নেয়ার আবেদন করেছিলেন টিউলিপে চাচি শাহীন সিদ্দিক ও তার চাচাতো বোন বুশরা সিদ্দিক। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে ‘অর্থপাচার, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও ঘুষ লেনদেনের’ অভিযোগ থাকায় পাসপোর্ট প্রত্যাখ্যান করা হয়।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী শাহীন সিদ্দিক। একই সাথে তিনি টিউলিপের চাচা।
পাসপোর্ট আবেদনের নথিতে তারিকের পরিবার কিভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল তার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে মাল্টার নাগরিকত্ব–বিনিয়োগ প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্বে থাকা হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স নামে একটি সংস্থা শাহীন সিদ্দিকের আবেদন ফিরিয়ে দেয়। এই সংস্থাটি ওই সময় বিদেশী নাগরিকদের মাল্টার নাগরিকত্ব দেয়ার বিষয়ে কাজ করত।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সংগৃহীত নথির তথ্য অনুযায়ী, শাহীন সিদ্দিক ঢাকায় ‘প্রচ্ছায়া’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারপারসন ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘অবৈধভাবে সরকারি জমি দখলের’ অভিযোগ ছিল।
এতে আরো বলা হয়, শাহীন সিদ্দিক ২০১৫ সালেও মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন। দ্বিতীয়বার তিনি তার মেয়ে বুশরা সিদ্দিকের জন্যও আবেদন করেন। বুশরা সিদ্দিক টিউলিপ সিদ্দিকের আপন চাচাতো বোন। দ্বিতীয়বার আবেদনে তাকে ইংল্যান্ডের নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তিনি লন্ডনে স্টুডেন্ট ভিসায় পড়াশোনা করছিলেন। বুশরা ‘প্রচ্ছায়া’–এর পরিচালক হিসেবেও কাজ করতেন।
নথি থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের মার্চে শাহীন সিদ্দিক নিজের ও মেয়ের জন্য মাল্টার নাগরিকত্বের আবেদন করেন। এই যৌথ আবেদনের নথি অনুযায়ী, শাহীন সিদ্দিকের মাল্টার নাগরিকত্বের আবেদনের খরচ ছিল ৬ লাখ ৫০ হাজার ইউরো এবং তার মেয়ের জন্য ২৫ হাজার ইউরো। পাশাপাশি, হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সকে ৭০ হাজার পাউন্ড ফি দিতে হতো।
যাচাই-বাছাই শেষে ওই বছরের শেষ দিকে শাহীন সিদ্দিকের দ্বিতীয় আবেদনও বাতিল করা হয়েছে। মাল্টা সরকারের একটি গেজেটে নিশ্চিত করা হয়, শাহীন সিদ্দিক ও তার মেয়ে বুশরা কেউই নাগরিকত্ব পাননি।
এদিকে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দি টাইমস জানিয়েছে, বাংলাদেশের পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও টিউলিপ সিদ্দিকীর খালা শেখ হাসিনার সাথে সম্পর্কের কারণে যদি তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়, তবে মন্ত্রী হিসেবে কাকে নিয়োগ দেয়া হবে, ওই বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সম্ভাব্য ব্যক্তিদের শর্টলিস্টও করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, যদিও টিউলিপ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর নীতিশাস্ত্র পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার কাছে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন; তবু যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীনরা তাকে নিয়ে বিব্রত। সেজন্য ডাউনিং স্ট্রিট টিউলিপ সিদ্দিকের বিকল্প খুঁজছে।
অবশ্য বাংলাদেশে আর্থিক দুর্নীতির মামলার তদন্তে যুক্তরাজ্যের অর্থ ও নগরবিষয়ক এই মন্ত্রীর ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়লেও অতীতে তার পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার। তিনি টিউলিপের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। স্টারমারের এ অবস্থানের কারণে দ্য টাইমস কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পায়নি। বরং ডাউনিং স্ট্রিটের মুখপাত্র বলেছেন, দলটি টিউলিপের বিকল্প প্রার্থীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেছে বলে যে ধারণা করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অসত্য।
তবে টাইমসকে এ-ও বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে কেউ কেউ অন্তত অনানুষ্ঠানিকভাবে কে কে টিউলিপের উত্তরসূরী হতে পারেন তা বিবেচনা করছেন।
স্টারমারের পক্ষাবলম্বন নিয়েও যুক্তরাজ্যের রাজনীতি সরগরম। এর পেছনের কারণ খুঁজে বের করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ।
সূত্র : ফিন্যান্সিয়াল টাইমস
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা