অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডির অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন খালেদা জিয়া
- অনলাইন প্রতিবেদক
- ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:০৪, আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:১৫
উন্নত চিকিৎসার জন্য ‘লন্ডন ক্লিনিক’-এ ভর্তি করা হয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। এখানে তিনি অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডির অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডির অধীনে বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন।’
পরে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি করার পর খালেদা জিয়ার বেশ কিছু টেস্ট করা হয়েছে। ডাক্তাররা তাদের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকে তার যথাযথ চিকিৎসা শুরু করবেন তারা।’
এর আগে, বুধবার (৮ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টার দিকে) খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
ওই সময় বিমানবন্দরে মা বেগম জিয়াকে দেখেই জড়িয়ে ধরেন আবেগাপ্লুত ছেলে তারেক রহমান। দেশনেত্রী পরিচয় কিছু সময়ের জন্য পেছনে ফেলে বেগম জিয়া হয়ে ওঠেন মমতাময়ী মা। এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত লোকজন বলতে শুরু করেন, ‘এ মিলন কত আকাঙ্ক্ষার, কত প্রত্যাশার তা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। এ মিলনের উষ্ণতায় মাইনাস তাপমাত্রার লন্ডন হয়ে ওঠে উষ্ণ।’
এরও আগে, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন খালেদা জিয়া। বিমানবন্দরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা তাকে বিদায় জানান।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও তাদের মেয়ে জাইমা রহমান। আর ২০১৭ সাল থেকে লন্ডনে আছেন ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও তার দু’ মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান।
১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি খালেদা জিয়া দলে প্রাথমিক সদস্যপদ নিয়ে গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৮৩ সালে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, ১৯৮৪ সালে ১২ জানুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও একই বছরে ১ মে চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পান। এরপর থেকে ‘স্বৈরাচারের সাথে কোনো আপস নয়’ এই নীতিতে অটুট থেকে ৯ বছর এরশাদবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান। এরশাদের অধীনে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে যাননি তিনি। ওই নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘একতরফা’ নির্বাচন করে বিএনপি আবারো ক্ষমতায় আসে। বেশি দিন টিকতে পারেননি তারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়। পরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর ২০০১ সালের আবারো ক্ষমতায় আসে বিএনপি। ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দলটি। ২০০৭ সালে ২২ জানুয়ারির নির্বাচন আওয়ামী লীগ বয়কট করলে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেশজুড়ে শুরু হয় তুমুল আন্দোলন। এর প্রভাবে ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন ১১/১ সরকার আবির্ভাব ঘটে। দুর্নীতির দায়ে সপরিবারে খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হয়। পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পান । দু’ ছেলেকে বিদেশে চলে যেতে হয়। বড় ছেলে তারেক রহমান এখনো দেশে ফিরতে পারেননি। আরেক ছেলে আরাফাত রহমান কোকো বিদেশের মাটিতেই মারা গেছেন।