০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`

সব সেক্টরে আওয়ামী সিন্ডিকেট এখনো বসে আছে : জামায়াত আমির

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান - ছবি : নয়া দিগন্ত

সব সেক্টরে ‘আওয়ামী সিন্ডিকেট’ এখনো বসে আছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা জামায়াতের আয়োজনে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে কর্মী সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

জামায়াত আমির বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকার সাড়ে ১৫ বছরে দেশ থেকে ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে, যা দেশের জাতীয় বাজেটের পাঁচ গুণ। শুধুমাত্র রুপপুর পারমানবিক প্রকল্প থেকে শেখ রেহানা ৫৭ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে পাচার করেছে। দেশে যত মেগা প্রকল্প হয়েছে তত মেগা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাট করেছে। আর এসব অর্থ দিয়ে বেগমপাড়ার মত জায়গায় পুঁজি খাটিয়েছে। তারা দেশ প্রেমিক হলে দেশের সম্পদ লুট করে পালিয়ে যেত না। দেশ প্রেমিকরা কখনো পালাতে পারে না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দেশকে মেধা শূণ্য ও অর্থ শূণ্য করা।’

তিনি আরো বলেন, ‘জামায়াতের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম, অপহরণ, বাড়িঘর অফিস আদালত লুট করে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। শুধু জামায়াত নয়, দেশপ্রেমিক প্রতিটি দল ও সাধারণ মানুষের উপরেও এমন নির্যাতন করেছে, যা নজিরবিহীন। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছে। দেশের হাজারো আলেম ওলামাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে টেঁনেহিচড়ে জেলে নিয়ে গেছে।’

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাই, অতি জরুরি সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে বর্তমান সরকার একটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেবে। এই নির্বাচনে জনগণ যাঁকে ভালোবাসেন, যাঁদের ওপরে আস্থা রাখতে পারবেন, তাদেরই নির্বাচিত করবেন। জামায়াত দেশের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে চাই আর এজন্য আপনাদের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আশা করি আপনারা জামায়াতের সকল কাজের সাথে থাকবেন এবং সহযোগিতা করবেন। জামায়াতের নেতাকর্মীরা জীবনের বদলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কাজ করে যাবে।’

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব সেক্টরে ‘আওয়ামী সিন্ডিকেট এখনো বসে আছে। আবার নতুন সিন্ডিকেটও তাদের স্থানে জায়গা করে নিয়েছে। তবে আমরা জামায়াতে ইসলামী নতুন-পুরাতন সিন্ডিকেট দেখতে চাই না। আমরা সর্বশক্তি দিয়ে সিন্ডিকেট ধ্বংসে সরকারকে সাহায্য করতে চাই।’

জামায়াত আমির বলেন, ‘ইজ্জত সম্মান দেয়ার মালিক সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সম্মান দেন আবার প্রয়োজনে কেড়ে নেন। আওয়ামী লীগ এই দেশের ১৮ কোটি মানুষকে প্রতিপক্ষ ভেবে নির্যাতন করেছে। মানুষের জন্য তাদের মায়া ভালোবাসা ছিল না বলেই আন্দোলনের সময় নির্বিচারে ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালিয়েছে। শত শত মায়ের বুক খালি করেছে হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। জাতি এই জঘন্য অপরাধের কথা কখনো ভুলবে না।’

ডা.শফিকুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক বেশি, অধিক সংখ্যক জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে প্রকৃত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে জনশক্তিতে রুপান্তিত করা হবে। যোগ্য কর্মের ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার শেষে সনদের সাথে সাথে চাকুরীর ব্যবস্থা করা হবে। দেশে জনসংখ্যার মত রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ। এই দুইয়ের সমন্বয় সাধনে আমাদের দেশের গুরুত্ব অনেক বেশি। কিন্তু আমরা দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বেড়াজালে পড়ে দেশের মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে পড়েছি। দুর্নীতি ও দুঃশাসন একে অপরের সম্পুরক ছিল। সর্বশেষ দুঃশাসনের কঠিন অধ্যায় এদেশের মানুষের জানা রয়েছে।’

কনকনে ও তীব্র শীত উপেক্ষা করে জেলা কর্মী সম্মেলনে অংশ নিতে হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা ভোর থেকেই কলেজ মাঠে আসতে থাকে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে সম্মেলনস্থল থেকে শহরের সর্বত্র মানুষে কানায় কানায় পরিপুর্ণ ছিল।

জামায়াতের স্বেচ্ছাসেবকদের কঠোর নজদারীতায় শহরের সড়ক গুলোতে যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। জনগণের সুবিধার্থে শহরের বিভিন্ন সড়কের প্রবেশ মুখ বন্ধ রাখা হয়। শহরের কেন্দীয় ঈদগাহ ময়দান, সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস, মীর মশাররফ হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে টিভি স্ক্রীনে বক্তব্য শোনার ও দেখার ব্যবস্থা রাখা হয়।

জেলা জামায়াতের আমিরর অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে সম্মেলন সঞ্চালনা করেন জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক সুজাউদ্দিন জোয়ার্দার। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর অঞ্চল পরিচালক মো: মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ মো: শাহাবুদ্দিন, অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যক্ষ খন্দকার একেএম আলী মুহসিন, আব্দুল মতিন।

এছাড়া আলমগীর বিশ্বাস, জামায়াতের রাজবাড়ি আমিরর অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা জেলা আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমীন, মাগুরা জেলা আমির এবিএম বাকের, মেহেরেপুর জেলা আমীর তাজউদ্দিন, পাবনা জেলা আমীর আবু তালেব মন্ডল, ঝিনাইদহ জেলা আমির আলী আজম মোহাম্মদ আবুবক্কর, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হুসাইন, কুষ্টিয়া জেলা নায়েবে আমির আব্দুল গফুর, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মাজারুল হক, সহকারী সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম রবীন, সহকারী সেক্রটারি সোহরাবউদ্দিন, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইমরান খান, শহর সভাপতি হাফেজ সেলিম রেজা, ইবি সভাপতি আবু মুসা প্রমুখ।


কুষ্টিয়ায় কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান

 

 


আরো সংবাদ



premium cement