২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ইসলামী শ্রমনীতি ছাড়া বৈষম্য দূর হবে না : হারুনুর রশিদ খান

বক্তব্য রাখছেন ধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান বলেছেন, ইসলামী শ্রমনীতির বাস্তবায়ন ব্যতীত শ্রমিকদের বৈষম্য দূর হবে না। শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বপ্রথম ইসলামী শ্রমনীতির প্রয়োগ ঘটাতে হবে।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ স্থল বন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মজিবুর রহমান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল হাশেম বাদলের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী, লস্কর মো: তসলিম, কবির আহমেদ, ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম ও কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নুরুল আমিন প্রমুখ।

অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান বলেন, আমরা এই দেশে কোরআন-সুন্নাহর বিধান কায়েম করতে চাই। যে বিধান কায়েম হলে কোনো ধরনের বৈষম্য সমাজ রাষ্ট্রে থাকবে না। শ্রমিক যে চেয়ারে বসবে মালিকও একই চেয়ারে বসবে। এটাই ইসলামী শ্রমনীতি। বৈষম্যহীন সমাজ কায়েম করতে হলে আমাদেরকে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পতাকাতলে সমবেত হতে হবে। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন এদেশের একমাত্র সুশৃঙ্খল শ্রমিক সংগঠন। এই সংগঠন শ্রমিকের অধিকার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে। তারা শ্রমিকদের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য কাজ করে।

তিনি বলেন, স্থল বন্দর সমূহ বিগত সময়ে চাঁদাবাজদের দখলে ছিল। আমরা এই নতুন স্বাধীনতার পর কোনো সেক্টরে চাঁদাবাজদের দেখতে চাই না। আমরা মালিকদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিক-মালিক বিরোধ দূর করতে চাই। আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, দু’জন মানুষের মাঝে মিলমিশ করে দেয়া সবচেয়ে বড়ো ইবাদাত। শ্রমিক কল্যাণ এই কাজটি করে যাচ্ছে। শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে নিজেদের কল্যাণের জন্য। দেশের কল্যাণের জন্য। তাহলেই এদেশে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার পাবে। তাদের ওপর যুগ যুগ ধরা চলা বৈষম্য ও নির্যাতনের অবসান হবে।

গোলাম রব্বানী বলেন, শ্রমিকদের অধিকার আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তারা এখনো কাঁদে। তাদের ব্যাথা অনেক বেশি। তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাদের সন্তানরা শিক্ষার অধিকার পায় না। শ্রমিকরা তাদের পরিবারের চিকিৎসা করাতে পারে না। আমি সরকারের কাছে স্পষ্টভাষায় বলছি, শ্রমিকরা জাতীয় সম্পদ। তারা পরিশ্রম করে। শরীরের শক্তি ব্যয় করে। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আপনারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করুন।

লস্কর মো: তসলিম বলেন, রাসূল সা: সব সময় শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। আজকের দিনেও শ্রমিকদের সকল অধিকার আদায়ে আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে। এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে শ্রমিকদের রেশনিং, চিকিৎসা, বার্ধক্য ভাতা আদায়ের জন্য। আমরা রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানাচ্ছি ন্যায্য অধিকারসহ সকল অধিকার দিতে হবে। বিশেষ করে স্থল বন্দর শ্রমিকদের ভূমিকা স্মরণ করে তাদের অধিকার দিতে হবে।

কবির আহমেদ বলেন, স্থল বন্দর শ্রমিকদের অধিকার বিগত দিনে স্বৈরাচারের দোসররা কেড়ে নিয়েছিল। আজকের এই সম্মেলন থেকে আমরা ঘোষণা করছি আগামী দিনে স্থল বন্দর শ্রমিকদের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে চাইলে আমরা সেই কালো হাত ভেঙে দিবো। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে অপশক্তিদের মোকাবেলা করবো। স্থল বন্দর শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে এই সংগঠনকে সংগঠিত ও মজবুত করতে হবে।

অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান বলেন, স্বৈরাচার সরকারের সময়ে শ্রমিক সংগঠন হিসাবে আমাদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি। আমাদেরকে ঘর থেকে গ্রেফতার করেছে। সে সময় ফ্যাসিবাদের দোসর শ্রমিক লীগ শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ না করে শ্রমিকদের ওপর শোষণ করেছে। লুটপাট করেছে। চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করেছে। আজকে সেই শ্রমিক লীগ হারিয়ে গেছে। আমরা এই শোষণকারীদের আর দেখতে চাই না।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি বৃদ্ধি করা হয়নি। আমরা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি বৃদ্ধির জন্য মালিকদের কাছে দাবি জানাচ্ছি। আমরা মালিকদের চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষা করবো। কিন্তু মালিকদের শ্রমিকদের স্বার্থ দেখতে হবে। স্থল বন্দর শ্রমিকরা বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি দেশের সাড়ে সাত কোটি শ্রমিকদের সমস্যা চিহ্নিত করতে কমিশন গঠন করুন। শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করুন। শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন করুন। শ্রমিকদের অবহেলা করে দেশ এগিয়ে যেতে পারে না।

সভাপতির বক্তব্যে মজিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আজকের এই সম্মেলন থেকে ঘোষণা করছি, বাংলাদেশ স্থল বন্দরগুলোতে আজকের পর কোনো অপশক্তির জায়গা হবে না। সকল চাঁদাবাজ ও লুটপাটকারীদের গ্রেফতার দাবি করছি। স্থল বন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে মেহনতি শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে আমরা সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখবো।

সম্মেলনে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা গৃহীত হয়েছে
১.স্থল-বন্দর শ্রমিকদের উপর সকল প্রকার নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
২.সকল আমদানি-রফতানিকৃত মালামালের লোড-আনলোড বাংলাদেশী শ্রমিকদেরকে দিয়ে করতে হবে।
৩.স্থল-বন্দরের শ্রমিকদের মজুরির ওপর কোনো প্রকার চাঁদা ধার্য করা যাবে না।
৪.প্রত্যেকটি বন্দরে শ্রমিকদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র তৈরি করতে হবে।
৫.প্রত্যেকটি বন্দরে শ্রমিকদের জন্য মসজিদ নির্মাণ করতে হবে।
৬.বন্দর শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণ করতে হবে।
৭.নিবন্ধনবিহীন শ্রমিক সংগঠনকে অবৈধভাবে কাজ দেয়া বন্ধ করতে হবে।
৮.স্থল-বন্দর শ্রমিকদেরকে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯.সকল বন্দরে অবৈধ চাঁদা বন্ধ করতে হবে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement