০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে শিক্ষাব্যবস্থার বৈষম্য দূর করা হবে : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বিশ্ব শিক্ষক দিবসের আলোচনা সভা - সংগৃহীত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যমান সকল বৈষম্য দূর করা হবে। স্কুল, কলেজ, মাদরাসার সকল বিভাগের শিক্ষাকে জাতীয়করণ করার প্রচেষ্টা থাকবে।’

তিনি বলেছেন, ‘মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা: ঘোষিত কুরআন ও হাদিস অনুসরণ করলেই কেবল উন্নত জাতি গঠন করা সম্ভব।’

শনিবার (৫ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন আয়োজিত বিশ্ব শিক্ষক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘চরিত্র ও শিক্ষা একসাথে না থাকলে শিক্ষার সুফল পাওয়া যায় না। একজন শিক্ষক যখন জাল সনদ লিখতে পারে, ভোট চুরিতে সহায়তা করতে পারে, পাঁচ ভাগ ভোটকে ৬০ ভাগ ভোট দেখাতে পারে তখন শিক্ষার কোনো মান-মর্যাদা থাকে না। নৈতিকতাহীন এই শিক্ষা দিয়ে জাতি গঠন করা যায় না। এটি জাতির জন্য খুবই লজ্জার।’

শিক্ষিত ব্যক্তি যদি চরিত্রহীন হয় তবে সে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে যায় মন্তব্য করে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রচিত শিক্ষানীতিতে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয় থাকলেও পরীক্ষা ছিল না। পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা ও জ্ঞানের মূল্যায়ন হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ বলছে, বিষয় থাকুক কিন্তু পরীক্ষা হবে না। দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের তামাশা দেখতে দেখতে অসহ্য হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘শিক্ষানীতি যদি এক ব্যক্তি বা এক দলের স্বার্থ হাসিলের জন্য রচিত হয় তবে সেই শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড হতে পারে না। জাতিকে ধ্বংস করতে পারে। আওয়ামী লীগের রচিত শিক্ষানীতি মানুষের নীতি-নৈতিকতা নষ্ট করার শিক্ষানীতি। এই শিক্ষা দিয়ে আদর্শ মানুষ গঠন করা সম্ভব নয়। আর আদর্শ মানুষ গঠন করতে না পারলে আদর্শ ও কল্যাণরাষ্ট্র গঠন করা যাবে না। এই শিক্ষাব্যবস্থা বহাল থাকলে নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন পূরণ হবে না। নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য কুরআন ও সুন্নাহ্ অনুসারে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে।’

জামায়াতে ইসলামী কোনো আবু জাহেল সৃষ্টি হোক চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে, স্কুল-কলেজে, পাড়া-মহল্লা, ঘরে-ঘরে ওমর সৃষ্টি হোক। শেয়ার বাজার, ব্যাংক, বীমা যারা লুট করেছে তারা কেউই অশিক্ষিত নয়, তারা নৈতিকতাহীন, চরিত্রহীন অমানুষ। আওয়ামী লীগের আমলারা দুর্নীতি করতে করতে সীমাহীন পর্যায়ে চলে গেছে, প্রশাসন দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের সেই দুর্বল প্রশাসনকে দেশপ্রেমিক মানুষ সবল ও জনবান্ধব করে তুলতে কাজ করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সকল শ্রেণিপেশার মানুষ সহযোগিতা করছে।’

জুলাই-আগস্টের চেতনা ধারণ করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া হবে না বরং সফল হতে জামায়াতে ইসলামী সার্বিক সহযোগিতা করবে বলেও জানান ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।

তিনি আরো বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচার হাসিনা সরকার আদর্শ শিক্ষকদের হামলা-মামলা, জেল-জুলুম করে নানা রকমের নির্যাতন চালিয়েছে। তারা প্রথমে শিক্ষকদের দমিয়ে রাখার পথ অবলম্বন করেছে। তারপরে শিক্ষানীতি গঠন করেছে নিজেদের পোষা দলীয় শিক্ষক নামের চরিত্রহীন, নৈতিকতাহীন অমানুষদের দিয়ে। কারণ, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে পারলেই আগামীর প্রজন্ম থেকে নেতৃত্ব দেয়ার মতো কেউ থাকবে না। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরাশক্তি ভারত আমাদের শাসন করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সেই স্বপ্ন বাংলার মানুষ কখনো পূরণ হতে দেবে না। সে জন্যই ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগকে দেখিয়ে দিয়েছে, আমাদের নেতৃত্ব আমরা দিতে পারি এবং দেবো। তোমরা ভারতের দালালেরা ভারতে চলে যাও। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী খুনি হাসিনাসহ যতগুলো ভারতে পালিয়ে গেছে এরা সবাই ভারতের গুপ্তচর দালাল ছিল।’ এদের চিনে রাখতে এবং আগামী দিনের জন্য সজাগ থাকতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি অধ্যক্ষ নুর নবী মানিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রবিউল ইসলামের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল আজিজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ইসলামিক অ্যাডুকেশন সোসাইটির সভাপতি অধ্যক্ষ ইকবাল ভূইয়া প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ নুর নবী মানিক বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হলো- শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ করে বিদ্যমান সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূর করতে হবে, জাতীয়করণ করার আগ পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের শতভাগ বোনাস ৫০ ভাগ বাড়ি ভাড়া ভাতা বিধি অনুযায়ী চিকিৎসা ভাতাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে, বিগত ২০০৯ সাল থেকে বঞ্চিত শিক্ষক-কর্মচারী যাদেরকে দীর্ঘদিন ধরে অন্যায় ও অবৈধভাবে তাদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা পরিশোধের প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে, বরখাস্ত করা শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে বয়সজনিত কারণে অবসর নিয়েছেন তাদেরকে ক্ষতিপূরণসহ সব পাওনা পরিশোধ করতে হবে, পতিত স্বৈরাচারী সরকার কর্তৃক গঠিত দুর্নীতিগ্রস্ত অবসর সুবিধাবোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের কমিটি অবিলম্বে বাতিল করে সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও নৈতিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে, বিতাড়িত স্বৈরাচারী সরকারের চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ দলীয় অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষা প্রশাসনের সকল স্তরে কর্মরত দলীয় ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা এখনো পদত্যাগ করেনি অবিলম্বে তাদেরকে নির্বাহী আদেশে বহিষ্কার করতে হবে, বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের আট বছর পূর্ণ হওয়ার পর সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া, পর্যায়ক্রমে সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ন্যায় সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের চাকুরীর বয়স সীমা ৬৫ বছর করতে হবে, কিন্ডারগার্টেন ও ইবতেদায়ি মাদরাসার নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন সমন্বয় কমিটি অবিলম্বে পুনরায় গঠন করতে হবে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement
রংপুরে মুক্তিযোদ্ধার নাতির ভুয়া পরিচয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রুকনদের কাঙ্ক্ষিত মানে উত্তীর্ণ হতে হবে : ইজ্জতউল্লাহ তেঁতুলিয়ার দেবনগর থেকে অজগর সাপ উদ্ধার ফরিদপুরেও শিক্ষার্থীদের বাসে হাফ ভাড়া নেয়ার সিদ্ধান্ত ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের আহ্বান ম্যাক্রোঁর সাবেক মন্ত্রী মান্নান কারাগারে অসুস্থ : সিলেটে স্থানান্তর মামলা হলেই গ্রেফতার নয়, তদন্তে দোষী হলেই ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মিরসরাইয়ে সাপের কামড়ে গৃহবধূর মৃত্যু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা অপরিকল্পিত : শিক্ষা উপদেষ্টা ‘কুরআন-হাদিস আমাদেরকে বিশ্বজনীন বিধিব্যবস্থা দিয়েছে’ সাউথ পয়েন্ট স্কুলে কারাতে বেল্ট বিতরণ

সকল