২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

অধিকার আদায়ে কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে : অধ্যাপক হারুনুর রশিদ

বাংলাদেশ কৃষিজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের বিশেষ সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান বলেছেন, এদেশের কৃষকরা তাদের সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত। অধিকার আদায়ে কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

শনিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষিজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের বিশেষ সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম রব্বানীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন রাজুর সঞ্চালনায় এতে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো: আলী আফজাল, বাংলাদেশ দর্জি শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসাইন, ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ রিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো: মহিব্বুল্লাহ, বাংলাদেশ ফার্নিচার শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল মতিন ও বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আক্তারুজ্জামান প্রমুখ।

অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান বলেন, কৃষিজীবী শ্রমিক ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এদেশের কৃষক শ্রমিকের অধিকার আদায় করার জন্য। এদেশে কৃষকরা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত-লাঞ্চিত। কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব ছিল সরকারের। কিন্তু এদেশে যে সরকার আসে তারা মানবরচিত বিধান দিয়ে দেশ পরিচালনা করে। ফলে কৃষকরা তাদের মর্যাদা ও অধিকার পায় না। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের সময় সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত ও নিস্পেষিত ছিল এদেশের কৃষকরা। কোরআন-সুন্নাহর বিধান বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কৃষকের মুক্তি আসবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কৃষকের দায়িত্ব নিজ ব্যবস্থাপনায় নিয়েছেন। আমাদের প্রিয় রাসূল সা: কৃষকদের অনেক বেশি ভালোবাসতেন। আল্লাহর নবী বলেছেন, তিনি মিসকিন কৃষক-শ্রমিকদের সাথে জান্নাতে যেতে চান। কেননা তারা ৫০০ বছর আগে জান্নাতে যাবে।

তিনি আরো বলেন, এদেশের কৃষকরা সহজ-সরল প্রকৃতির। তারা মানুষকে ধোঁকা দিতে পারে না। এরা ধর্মভীরু। এদের সম্পর্ক আল্লাহর সাথে। অথচ এদেশের কৃষকদের দায়িত্ব যাদেরকে দেয়া হয়েছে তারা এদেশের সবচেয়ে বড়ো ডাকাত ও চোর। আমাদের দুর্ভাগ্য এই ডাকাতদের স্যার, মন্ত্রী বলতে হয়। এই ডাকাতরা কৃষকদের জমি-ফসল চুরি লাখ কোটি কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে। এক ভূমিমন্ত্রী লন্ডনে ৩৬০টি বাড়ি কিনেছেন। এদেরকে চোর উপাধী দিতে হবে। এসব চোরদের এদেশে আর স্থান দেয়া যাবে না।

অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান বলেন, এদেশের কৃষকদের অধিকার আদায়ে আমাদেরকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমাদেরকে কৃষকদের সমস্যা শুনতে হবে। তাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে হবে। কৃষকের সেবায় আল্লাহ রাসূল সা: যেভাবে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন আমাদের তা পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে হবে।

অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ কৃষি সেক্টর যতটা গুরুত্বপূর্ণ ততটা আলোচনা এই সেক্টর নিয়ে হয় না। দেশের আড়াই কোটি মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। এত বিশাল সংখ্যক মানুষ বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত। তারা সুসংগঠিত না। তারা অধিকার আদায়ের ব্যাপারে সচেতন ও সজাগ না। স্বাধীনতার পর এদেশে কার্যকর কৃষি আন্দোলন গড়ে উঠেনি। ফলে কৃষকরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হলেও তার সুফল পাচ্ছে না। আগামী দিনে কৃষকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে কৃষিজীবী শ্রমিক ইউনিয়নকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, করোনা মহামারীর সময় কৃষকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাদ্য উৎপাদন স্বাভাবিক রেখেছে। ফলে বাংলাদেশ দুই বছরের সঙ্কট সময় গেলেও খাদ্য সঙ্কটে পড়তে হয়নি। বাংলাদেশের জিডিপির সাড়ে এগারো ভাগ আসে কৃষি থেকে। দেশের মোট শ্রমিকের ৪৫ ভাগ কৃষি শ্রমিক। যারা দেশের মৌলিক খাদ্য চাহিদা পূরণে পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

ড. মো: আলী আফজাল বলেন, বাংলাদেশে সকল ব্যবসা-বাণিজ্যের ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থা আছে। শুধু কৃষকের ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থা নেই। কৃষকের ফসল বা খামারের কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে তা ক্ষতিপূরণের কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে হলে ইন্সুরেন্স প্রথার বিকল্প নেই। কৃষিতে ভর্তুকি সারা পৃথিবীতে আছে। আমাদের দেশে প্রতি বছর বাজেটে ১৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তকি দেয়া হয়। বিগত ১৭ বছরে এসব ভুর্তকি পেয়েছে এমন লোকেরা যাদের সাথে কৃষির কোনো সম্পর্ক নেই। দলীয় লোকেরা এসব টাকা লুটপাট করে খেয়েছে। এখন সময় এসেছে এসব টাকার হিসাব নেয়ার। গত বছর ৪ হাজার কোটি টাকা কৃষি যন্ত্রপাতি ও মেশিনের যন্ত্র কেনার কাজে ব্যয় দেখানো হয়েছে। অথচ খোঁজ নিলে দেখা যায় এসব মেশিন যন্ত্র কেনাই হয়নি। চীন থেকে সস্তায় ক্রয় করে দাম দেখানো হয় ৫০ লাখ। এসব মেশিন কাকে কবে কোথায় দেয়া হয়েছে তার খোঁজ নিতে হবে। কৃষি সেক্টরের সকল দুর্নীতির উৎখাত করে কৃষকের আস্থায় পরিণত হতে কৃষিজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের ভূমিকা রাখতে হবে।

সম্মেলনে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা গৃহীত হয়েছে
১. আজকের বিশেষ সাধারণ সভা মনে করে, গত ১৫ বছর ধরে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার কৃষকদের ওপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়েছে। কৃষকদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে।

২. আজকের বিশেষ সাধারণ সভা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ছাত্র-জনতার রূহের মাগফিরাত কামনা করছে ও শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। আহত ও চিকিৎসাধীন ছাত্র-জনতার সুচিকিৎসা ও শহিদ পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে।

৩. আজকের বিশেষ সাধারণ সভা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যাকারীদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং অপরাধীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরুর জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে। যারা এই খুনিদের রক্ষার জন্য চেষ্টা করছে তাদের গ্রেফতার দাবি জানাচ্ছে।

৪. আজকের বিশেষ সাধারণ সভা চাল ডাল তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানাচ্ছে। সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার দাবি জানাচ্ছে।

৫. আজকের বিশেষ সাধারণ সভা মনে করে কৃষকরা দেশের সম্পদ। কিন্তু তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। এখনো দেশে কৃষি ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। পচনশীল পণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা কৃষকদের বঞ্চিত করছে। এই সকল সমস্যা আশু সমাধানের জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে।

৬. আজকের বিশেষ সাধারণ সভা কৃষকদের সুদ মুক্ত কৃষি ঋণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছে। সার বীজ ও কিটনাশকের মূল্য হ্রাস করে কৃষকের ব্যয়ভার কমানোর দাবি করছে।

৭. আজকের বিশেষ সাধারণ সভা ভূমিহীন কৃষকদের নামে সরকারি খাস জমি দলিল পূর্বক বরাদ্ধ দেয়ার দাবি করছে। কৃষকের সন্তানের বিনা বেতনে অধ্যয়ন ও কৃষকের চিকিৎসা ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করার দাবি জানাচ্ছে।

৮. আজকের বিশেষ সাধারণ সভা কৃষকদের কৃষি প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছে।

৯. আজকের বিশেষ সাধারণ সভা কৃষক-শ্রমিকদের আর্সেনিক মুক্ত পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।

১০. আজকের বিশেষ সাধারণ সভা দীর্ঘ মেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব কৃষি ব্যবস্থা প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement
২ দিনে ভারতে গেল ৯৯ টন ইলিশ যেকোনো মুহূর্তে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে তিস্তার পানি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ কাজ চালু হচ্ছে দুর্নীতিবাজ প্রকাশকদের শ্বেতপত্র প্রকাশ ও তাদের বিচারের দাবি সৃজনশীল প্রকাশক ওয়ার্কিং কমিটির সংস্কারের পর কী কী পরিবর্তন আসতে পারে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায়? অর্ন্তবর্তী সরকারের ভেতরে সুবিধাভোগীরা ডুকে গেছে : নুর যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে বাকৃবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চাঁদপুরে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু বিচার বিভাগ সংস্কারে নাগরিক চিন্তা সংস্কার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন শরিয়াহ কমিটির কাছে প্রত্যাশা

সকল