২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

নির্বাচন ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্য কিভাবে দেখছে বিএনপি-জামায়াত?

সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান - ছবি : রয়টার্স

বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, নির্বাচন যাতে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে হতে পারে সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করতে ‘পরিস্থিতি যাই হোক না কেন’ তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবেন।

‘আমি তার পাশে থাকবো। যা-ই হোক না কেন। যাতে করে তিনি তার কর্মসূচি সম্পন্ন করতে পারেন,’ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন তিনি।

তার মতে, দেড় বছরের মধ্যেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ হওয়া উচিত এবং সেনাবাহিনী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।

একইসাথে তার এ সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য এবং সশস্ত্র বাহিনীকে প্রেসিডেন্টের অধীনে নেয়ার ধারণা উঠে এসেছে।

বাংলাদেশে তীব্র গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের বিদায়ের পর সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেন ড. ইউনূস। তারপর থেকে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি দ্রুততর সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করে আসছে।

তবে সরকারের দিক থেকে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, পুলিশসহ ছয়টি বিষয়ে সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। এসব কমিশন পহেলা অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার কথা।

সেনাপ্রধান ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে যে মন্তব্য করেছেন সে বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তারা মনে করেন নির্বাচন যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই হওয়া উচিত।

‘নির্বাচন যত দ্রুত হবে ততই জাতির জন্য মঙ্গল হবে। সংস্কার প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি। সেজন্যই নির্বাচনের দরকার,’ বলেন মির্জা ফখরুল।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর একটি সূত্র জানিয়েছে, সেনাপ্রধানের বক্তব্য দলের এক সভায় আজ পর্যালোচনা করা হবে।

তবে দলটির মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘সেনাপ্রধান সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে তার বক্তব্য দিয়েছেন। নির্বাচন বিষয়ে আমাদের আমির দলের অবস্থান আগেই তুলে ধরেছেন। তিনি জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচনের কথা বলেছেন। আপাতত এটুকুই এ বিষয়ে দলের বক্তব্য।’

সেনাপ্রধান আরো যা বললেন
রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই হওয়া উচিত। তবে তিনি ধৈর্য ধারণের ওপরও জোর দেন।

‘আপনি যদি জিজ্ঞেস করেন তাহলে সেটাই একটা টাইম ফ্রেম (সময়সীমা) হওয়া উচিত, যার মধ্যে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করতে পারি,’ বলেন তিনি।

ওয়াকার-উজ-জামান জানান, প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধান প্রতি সপ্তাহে সাক্ষাৎ করছেন এবং তাদের মধ্যে ‘অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক’ বিদ্যমান। দেশকে স্থিতিশীল করতে সরকারের প্রচেষ্টায় সামরিক বাহিনী সমর্থন দিচ্ছে।

‘আমি নিশ্চিত, আমরা একযোগে কাজ করলে ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে জুলাই মাসে গড়ে ওঠা আন্দোলন সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়ার পর সহিংসতায় এক হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়।

রাজধানী ঢাকা ছিল এ বিক্ষোভের কেন্দ্র। ঢাকার রাস্তায় এখন শান্তি ফিরে এসেছে। তবে শেখ হাসিনা প্রশাসনের নাটকীয় পতনের পর সিভিল সার্ভিসের একটি অংশ এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়ে ওঠেনি।

এক লাখ ৯০ হাজার সদস্যের পুলিশ বাহিনী এখনো গুছিয়ে উঠতে পারেনি। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

সেনাপ্রধান বলেন, তার নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না।

‘আমি এমন কিছু করবো না যা আমার বাহিনীর জন্য ক্ষতিকর হয়। আমি পেশাদার সৈনিক। আমি আর্মিকে পেশাদার রাখতে চাই।’

তিনি জানান, ক্ষমতা থেকে হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে তার আলোকে সেনাবাহিনীতেও কেউ কোনো অনিয়ম করেছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং এর মধ্যে কয়েকজনকে শাস্তি দেয়া হয়েছে।

তবে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।

তিনি বলেন, ‘কর্মরত কেউ যদি দোষী প্রমাণিত হন তাহলে অবশ্যই আমি ব্যবস্থা নিবো।’ তিনি এটাও বলেন যে কিছু সামরিক কর্মকর্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থায় কাজ করার সময় কর্মপরিধির বাইরে গিয়ে কিছু করে থাকতে পারেন।

অন্তর্বর্তী সরকার হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক একজন বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করেছে। তারা ২০০৯ থেকে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর দ্বারা ৬০০ ব্যক্তিকে গুমের ঘটনা তদন্ত করবেন।

তবে দীর্ঘমেয়াদে সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক কাঠামো থেকে দূরে রাখতে চান ওয়াকার-উজ-জামান। বাংলাদেশ আর্মির সদস্য সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি এবং জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণ অনেক বড়।

‘এটা হতে পারে যদি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য থাকে, যেখানে সশস্ত্র বাহিনী সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে দেয়া যায়।’

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে, যা মূলত প্রধানমন্ত্রী নিয়ন্ত্রণ করেন। সেনাপ্রধান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়ায় এ বিষয়টি দেখা যেতে পারে।

‘প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামরিক বাহিনীকে কখনোই রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা উচিত নয়। সৈনিকের কখনো রাজনীতিতে জড়ানো উচিত না,’ বলেন তিনি।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
নাইক্ষ‍্যংছড়ি সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার অভ‍্যন্তর থেকে মাইন বিস্ফোরণের বিকট শব্দ অং সান সু চিকে ভ্যাটিকানে আশ্রয়ের প্রস্তাব পোপের ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশনের কথা বলছি হালুয়াঘাটে কৃষকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার গবেষণা প্রকল্পে রাবির সাথে হেইফার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের চুক্তি কারিগরি শিক্ষা-সংস্কার অপরিহার্য ছাত্ররাজনীতির সংস্কার প্রয়োজন : ছাত্রদল সভাপতি রাকিব গাজীপুরে প্রেমিক-প্রেমিকার আত্মহত্যা দুর্নীতি নির্মূল হলে বৈষম্য দূর হবে : মুনীর চৌধুরী বাংলাদেশের যেসব সরকারপ্রধান আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের সাথে বৈঠক করেছেন নোয়াখালীতে ইসলামী ব্যাংকের মতবিনিময় সভা

সকল