২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
আল জাজিরার তদন্ত প্রতিবেদন

বিলাসবহুল আবাসনে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান - ছবি : আল জাজিরা

বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী লন্ডন, দুবাই এবং নিউইয়র্কে বিলাসবহুল রিয়েল এস্টেটের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছেন। অথচ তিনি তার বাংলাদেশের ট্যাক্স রিটার্নে বৈদেশিক সম্পদের কথা উল্লেখই করেনি।

দীর্ঘ তদন্তের মাধ্যমে আল জাজিরার তদন্তকারী ইউনিট (আই-ইউনিট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আই-ইউনিট যুক্তরাজ্যে তদন্ত করেছেন, দেশের মুদ্রা আইনের অংশ হিসেবে ১২ হাজার মিলিয়ন ডলার বার্ষিক সীমা থাকা সত্ত্বেও কিভাবে চৌধুরী সম্পত্তির এ বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক আল জাজিরাকে বলেছেন, দেশের সংবিধান স্পষ্টভাবে বলা আছে যে রাজনীতিবিদদের অবশ্যই তাদের বিদেশী সম্পদ ঘোষণা করতে হবে।

বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ চৌধুরীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। এখন চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগটি তদন্ত করছে।

চৌধুরী ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। হাসিনার প্রস্থানের পর বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তার সরকারের ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় উঠে আসে চৌধুরীর দুর্নীতির চিত্র।

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন যখন থেকে চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ‘হাজার কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে, তখন থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ও তার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে।

আই-ইউনিটের তদন্তে জানা গেছে যে চৌধুরী ২০১৬ সাল থেকে একাই যুক্তরাজ্যে ৩৬০টি বাড়ি কিনেছিলেন।

মানি লন্ডারিংবিরোধী আইনে উচ্চ-পদস্থ রাজনীতিবিদ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের একটি উচ্চ দুর্নীতির ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করে। কারণ তাদের সম্পদের স্ফীতি হয়তো রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে আত্মসাতের কারণে হয় অথবা সরকারি চুক্তি প্রাপ্তির জন্য তাদের ঘুষ দেয়ার কারণে হয়।

লন্ডনের এস্টেট এজেন্ট রিপন মাহমুদ আল জাজিরার আই ইউনিটের সাংবাদিকদেরকে লন্ডনে চৌধুরীর উপদেষ্টাদের একটি নেটওয়ার্কের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। যারা চৌধুরীর সম্পদের এই বিশাল পাহাড় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছিল। ওই নেটওয়ার্কে রয়েছে চার্লস ডগলাস সলিসিটরস এলএলপি, যেটি শতাধিক সম্পত্তি ঋণ পুনঃঅর্থায়নে তার জন্য কাজ করেছিল। পরেশ রাজা, যিনি তার কোম্পানি মার্কেট ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশন এবং তার অন্যান্য ব্যবসার মাধ্যমে শত শত ঋণ গ্রহণ করেছেন। সিঙ্গাপুরের ব্যাংক ডিবিএস-এর রাহুল মারদে, যেটি মন্ত্রীকে টাকাও ধার দিয়েছে।

একজন উচ্চ-পদস্থ রাজনীতিবিদ হিসেবে তাকে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (পিইপি) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হতো। যুক্তরাজ্যে এস্টেট এজেন্ট, ব্যাংক, ঋণদাতা এবং আইনজীবীদের সাথে কাজ করার সময় অতিরিক্ত যাচাই-বাছাই এবং কঠোর চেকের প্রয়োজন হতো।

অনুসন্ধানের প্রতিক্রিয়ায় চৌধুরী আল জাজিরাকে বলেছিলেন, তার বিদেশী সম্পত্তি কেনার জন্য ব্যবহৃত তহবিল বাংলাদেশের বাইরে বৈধ ব্যবসা থেকে আসে।

চৌধুরী আগস্টে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান। তিনি দাবি করেন যে তিনি পূর্ববর্তী সরকারের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হেনস্থার শিকার।

চার্লস ডগলাস সলিসিটর এলএলপি, মার্কেট ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশন, পরেশ রেজা, ডিবিএস ব্যাংক এবং রিপন মাহমুদ আল জাজিরাকে বলেছেন, তারা চৌধুরীর উপর শক্তিশালী অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং চেক চালিয়েছে। তারা আরো বলেছে যে তার তহবিল বাংলাদেশ নয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বৈধ এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যবসা থেকে এসেছে।

উপদেষ্টারা বলছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি ঐতিহাসিক অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং বা আপনার গ্রাহককে জানুন চেক পরিচালনাকারী কারো কাছে তথ্য উপলব্ধ ছিল না, যা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আদর্শ পদ্ধতি।

আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট দ্য মিনিস্টার মিলিয়নস-এর পথ ধরে তা খুঁজে বের করে যে কিভাবে চৌধুরী তার অর্ধ বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন।

সূত্র : আল জাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement