সাপের কামড় : 'মনে হচ্ছিল আমার হাতটা যেন হাতুড়ির আঘাতে চুরমার হয়ে যাচ্ছে'
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৬ মে ২০১৯, ১৯:০০
ডেভিড উইলিয়ামসকে সাপে কামড়িয়েছে পাঁ-চ-বা-র।
"প্রথমবার খুবই ভয়ংকর ছিল কারণ আমি জানতাম না ঠিক কী হতে পারে। মনে হচ্ছিল আমার হাতটা হাতুড়ির আঘাতে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে," বলেন তিনি।
"শেষবারের কামড়টি প্রাণঘাতী হতে পারতো। কিন্তু আমি যেহেতু কিছু ওষুধ বহন করছিলাম তাই আমার জীবনটা বেঁচে গেছে।"
ড. উইলিয়াম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন কর্মকর্তা। সর্প-দংশনের বিষয়ে গবেষণা করেন তিনি।
তার উদ্দেশ্য সাপের কামড়ের চিকিৎসার ওষুধ উদ্ভাবন করা।
চার মিনিটে একজনের মৃত্যু
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সাপের কামড় একটি মারাত্মক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা। কিন্তু এবিষয়ে কেউ গুরুত্ব না দেওয়ায় এনিয়ে তেমন আলোচনা হয় না।
তাদের হিসেবে সারা বিশ্বে প্রতি চার মিনিটে একজন সাপের কামড়ে মারা যাচ্ছেন।
হাজার হাজার মানুষ সাপের কামড় খাওয়ার পরেও হয়তো বেঁচে আছেন। কিন্তু তাদের শরীর বিকৃত হয়ে গেছে কিম্বা শরীরের কোন একটি অঙ্গ কেটে ফেলে দিতে হয়েছে।
সাধারণত দরিদ্র মানুষেরা সর্প-দংশনের শিকার হন সবচেয়ে বেশি। এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি প্রকট আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার দরিদ্র দেশগুলোর দরিদ্র এলাকাগুলোতে।
কৃষকরা যখন প্রতিদিন তাদের ফসল ফলাতে মাঠে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই তারা সর্প-দংশনের শিকার হচ্ছেন। শিশুদের সাপে-কাটার হারও খুব বেশি।
এই পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে এসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাজ্যের ওয়েলকাম ট্রাস্ট।
সাপের বিষের চিকিৎসায় ওষুধ আবিষ্কারের লক্ষ্যে ওয়েলকাম ট্রাস্ট আট কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ করেছে।
আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে নতুন একটি পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করতে যাচ্ছে।
সাপে কামড়ালে যা হয়
ড. উইলিয়ামস বলেছেন, "যাদেরকে সাপে কাটে তারা এমনিতেই দরিদ্র এলাকার মানুষ। আর সাপে কাটার পর, যদি তারা বেঁচে থাকার মতো সৌভাগ্যবান হন, তাদের অবস্থা হয় আরো শোচনীয়।"
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ২৭ লাখ মানুষ সাপের বিষে আক্রান্ত হন।
এই বিষ সাপের কামড়ের কারণে রক্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে, আবার সাপ কারো চোখেও তার বিষ মুখ থেকে নিক্ষেপ করতে পারে।
সর্প-দংশনে প্রতি বছর ৮১ হাজার থেকে এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
এছাড়াও সাপের কামড়ের কারণে চার লাখের মতো মানুষ স্থায়ীভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে।
সাপের বিষের কারণে মানুষ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে, কিডনি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে, প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে পারে অথবা শরীরের কোন একটি অঙ্গও হয়তো কেটে ফেলতে হতে পারে।
অনেক সময় সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু হয়। আবার কেউ প্রাণে বেঁচে গেলেও এই অভিজ্ঞতা ভয়াবহ।
ওয়েলকাম ট্রাস্টের পরিচালক ও বিজ্ঞানী অধ্যাপক মাইক টার্নার বলছেন, "বিষ-নিরোধী সঠিক ওষুধটি থাকলে জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনাও বেশি থাকে। ফলে এতো এতো মানুষের মৃত্যুর পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ নেই।"
এই চিকিৎসা ব্যয়বহুল। যাদের এটা দরকার তারা এটা সময়মতো পায় না। সাপের কামড় খাওয়ার পর লোকজন দ্রুত হাসপাতালেও যেতে পারে না।
কখনও কখনও তারা যদি হাসপাতালে পৌঁছাতেও পারে, সেখানে প্রশিক্ষিত ডাক্তার থাকে না, আবার কখনো কখনো সেখানে দরকারি ওষুধ কিম্বা জিনিসপত্র থাকে না।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় সাপের কামড় খাওয়ার পর লোকজন ওঝার মতো স্থানীয় বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে হাজির হয়।
সর্প-দংশনের চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের আধুনিক কোনো ধারণা নেই।
কীভাবে তৈরি হয় ওষুধ
সর্পবিষ-নিরোধী চিকিৎসা গত এক শ' বছর ধরে প্রায় একই রকমের।
এই ওষুধ তৈরি করা ব্যয়সাপেক্ষ। ঘোড়ার রক্ত থেকে সংগৃহীত এন্টিবডি থেকে এই ওষুধ তৈরি করা হয়।
সারা বিশ্বে এধরনের ওষুধ যত প্রয়োজন তার মাত্র এক তৃতীয়াংশ তৈরি করা হয়ে থাকে।
ঘোড়ার শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে অল্প অল্প পরিমাণে সাপের বিষ দেওয়া হয়। ফলে ঘোড়ার তেমন কোন ক্ষতি হয় না।
ওয়েলকাম ট্রাস্টের বিজ্ঞানী ড. ফিলিপ প্রাইস বলেন, "পরে ঘোড়ার শরীর থেকে রক্ত নেওয়া হয়। সেখান থেকে সংগৃহীত এন্টিবডিকে বিশুদ্ধ করা হয়। ওই এন্টিবডি সাপের বিষকে নির্বিষ করে দেয়।"
তিনি বলেন, কোনো মানুষের শরীরে এটা সরাসরি ঢুকিয়ে দেওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
এই ঝুঁকির অর্থ হলো যে ব্যক্তিকে সাপে কেটেছে তাকে হাসপাতালে গিয়ে এই চিকিৎসা নিতে হবে। এজন্যে হয়তো অনেক সময় লেগে যেতে পারে। আর তখন মানুষের জীবন কিম্বা শরীরের কোন অঙ্গ রক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
আরেকটি বড় সমস্যা হলো এসব ওষুধের অনেকগুলো কার্যকর নাও হতে পারে।
কারণ একেক ধরনের সাপের জন্য কাজ করে একেক ধরনের এন্টি-ভেনম ওষুধ।
যেমন আফ্রিকাতে যেসব ওষুধ পাওয়া যায় সেগুলোর ৯০ শতাংশই অকার্যকর বলে ধারণা করা হয়।
সাপের কামড়ের চিকিৎসার জন্যে কী কী ওষুধ কার্যকর আছে তার কোন আন্তর্জাতিক ও স্বীকৃত তালিকাও নেই কোথাও।
কিন্তু তারপরেও ড. উইলিয়ামস মনে করেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাপের কামড় মোকাবেলায় যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সেটা পূরণ করা খুব কঠিন কাজ নয়।
তিনি নিজেও এনিয়ে পাপুয়া নিউগিনিতে বহু বছর কাজ করেছেন।
"পাপুয়া নিউগিনিতে ২০০৩ সালে প্রত্যেক চারটি শিশুর একটি শিশু সাপের কামড়ে মারা যেত। আর এখন প্রত্যেক ৫০ জনের মধ্যে একজনেরও কম মারা যায়।"
ড. উইলিয়ামস বলেন, প্রচুর মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায় ঠিকই, কিন্তু এটা ঠেকানো রকেট বিজ্ঞানের মতো কঠিন কিছু নয়।
"এজন্যে দরকার নিরাপদ ও কার্যকরী এন্টি-ভেনম, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী।"
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা