‘গণমাধ্যম এক ভয়ঙ্কর সময় পার করছে’
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১:৫৪
গণমাধ্যম এক ভয়ঙ্কর সময় পার করছে বলে দাবি করে সাংবাদিক নেতারা বলেন, সরকার আইন ও আদালতকে গণমাধ্যমমের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। ক্ষমতার জোরে সরকার দেশে এমন কিছু আইন তৈরি করেছে যেগুলো মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ণ করছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে তারা গোটা দেশের সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে ফেলেছে। গণমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে ফেলা হচ্ছে। ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ডিজিটাল অপরাধের থেকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কয়েক গুণ বেশি অপব্যবহার করা হয়েছে। আদালতের রায় পাওয়ার আগেই এই আইনে সাংবাদিকদের শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে।
দৈনিক দিনকাল বন্ধের নিন্দা জানিয়ে সাংবাদিক নেতারা বলেন, আদালতকে ব্যবহার করে ঠুনকো অজুহারে ৩২ বছরের পুরনো জাতীয় দৈনিক দিনকাল তারা বন্ধ করে দিয়েছে। দিনকাল বন্ধ করে পার পাওয়া যাবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন সাংবাদিক নেতারা।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন (বিআরজেএ)-এর আয়োজনে দৈনিক দিনকাল পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন সাংবাদিক নেতারা।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, আমরা বারবার কর্মসূচি দেয়ার পরেও এই সরকার কানে পানি দিচ্ছে না। কোনো ঠুনকো অভিযোগ দিয়ে দিনকাল বন্ধ করে পার পাওয়া যাবে না। গণতন্ত্র ফিরে আনার লক্ষ্যে স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে দৈনিক দিনকাল খুলে দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে সাংবাদিকদেরকে নির্যাতন হয়রানি করে যাচ্ছে। এ সরকার নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য বিভিন্ন কালা কানুন আইন বাস্তবায়ন করছে। গণতন্ত্র স্বাধীনতা এবং আওয়ামী লীগ একসাথে চলতে পারে না। যতদিন পর্যন্ত দৈনিক দিনকাল, আমার দেশ খুলে দেয়া না হবে না, সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ করা না হবে, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা না হবে, ততদিন পর্যন্ত সরকার পতনের আন্দোলন চলতেই থাকবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ বলেন, দৈনিক দিনকাল পত্রিকা বন্ধ হয়েছে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের ইঙ্গিতে। এই সরকার গণমাধ্যমের খুনি সরকার। গণমাধ্যমকে খুন করে গণমাধ্যমের হাজারো কর্মীকে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছে। এই সরকারের হাতে খুনের শিকার হয়েছে দৈনিক দিনকাল। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই দৈনিক দিনকাল বন্ধ করা হয়েছে। সরকারের গণমাধ্যম ধ্বংসের পরিকল্পনার নীল নকশার অংশই দৈনিক দিনকাল বন্ধ।
দৈনিক দিনকাল পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, যখনই ফ্যাসিবাদী পতন সন্নিকটে আসে তখনই যখন তারা অপরাধ-দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়। শেখ হাসিনা এখন অপরাধ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। ৭২ সালে মুজিব দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করেছে তারাই নির্যাতিত হয়েছেন, সে কথা আমরা ভুলে যাইনি। ঠিক ৭২ সালের মতো নির্যাতিত হচ্ছে এখনো দেশের মানুষ। এই দৈনিক দিনকাল পত্রিকা বন্ধই হবে হাসিনার পতনের মূল কারণ। ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক চাপে হাসিনার মাথা নত হয়েছে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, দেশের গণমাধ্যম এক ভয়ংকর সময় পার করছে। সাংবাদিক হত্যা, সাংবাদিকদের জেলে আটকানো, কথায় কথায় গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়ে এক ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে। আজ এটি সুস্পষ্ট যে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আর আওয়ামী লীগ একসাথে হয় না। এই গণবিরোধী সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই অবিলম্বে বন্ধ মিডিয়াসহ সকল মিডিয়া খুলে দেয়া হোক। যেসব সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে তাদের বিচার করুন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিন, তা না হলে সাংবাদিকরা বাধ্য হয়ে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করবে।
কবি আব্দুল হাই সিকদার বলেন, অন্যায়, অত্যাচার-অবিচার থেকে দেশকে বাঁচানোর সময় এসেছে। আওয়ামী লীগ মানে হত্যাকারী, দেশকে ধ্বংস করা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারকে হত্যা করা, দেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করা। এই দুঃসময়ের চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করেছে, দিগন্ত টিভি বন্ধ করেছে, একুশে টিভি বন্ধ করেছে। এই গণবিরোধী শত্রুরা মাহমুদুর রহমানের মত নেতাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে। ৪০ থেকে ৫০ জন সাংবাদিক হত্যা করেছে। এখন এই দেশদ্রোহী সন্ত্রাসী আত্মঘাতী সরকারকে উৎখাত করার সময় এসেছে। এখন সময় হয়েছে এই সরকারকে উৎখাত করার। শেখ মুজিবুর বাকশাল কায়েম করে মাত্র চারটি পত্রিকা রেখে সমস্ত পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। এই গণবিরোধী শত্রু, অবৈধ অগণতান্ত্রিক সরকারকে আর সময় দেয়া ঠিক হবে না।
সংগঠনের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন ইবনে মইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, এম এ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, রাশেদুল হক, আমিরুল ইসলাম কাগজী, দিদারুল আলম প্রমুখ।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি