‘দিনকালের প্রকাশনা বন্ধে ফের প্রমাণিত হলো সরকার ভিন্নমত সহ্য করে না’
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯:০৮
দিনকালের প্রকাশনা বন্ধে ফের প্রমাণিত হলো ক্ষীণ ভিন্নমতও সরকার সহ্য করে না বলে দাবি করেছেন শীর্ষ সাংবাদিক নেতারা।
এ সময় সরকারকে সংবাদমাধ্যমের শত্রু উল্লেখ করে তারা বলেন, আইন মেনে সকল কাগজপত্র জমা দেয়ার পরও অন্যায়ভাবে জাতীয় দৈনিক দিনকালের ডিক্লেয়ারেশন বাতিলের মাধ্যমে ফের প্রমাণিত হলো, এ সরকার ভিন্নমতের ক্ষীণ কণ্ঠও সহ্য করতে পারে না।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দৈনিক দিনকাল পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে দিনকালের প্রকাশনা খুলে দেয়ার দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে শীর্ষ সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন।
এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল তোপখানা রোড প্রদক্ষিণ করে কদম ফোয়ারা মোড় হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এসে শেষ হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ।
বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও শওকত মাহমুদ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালিন নোমানী, বিএফইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোদাব্বের হোসেন, ডিইউজের সহ-সভাপতি শাহীন হাসনাত, বাছির জামাল ও রাশেদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ প্রমুখ।
সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও দৈনিক দিনকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাবেক ছাত্রনেতা ফজলুল হক মিলন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক শাহজাহান সাজুর সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ খায়রুল বাশার, সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশীদ আলম, ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ গাজী আনোয়ার, প্রচার সম্পাদক খন্দকার আলমগীর হোসাইন, দফতর সম্পাদক ডি এম আমিরুল ইসলাম অমর, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য আব্দুস সেলিম, এ কে এম মহসীন, জাকির হোসেন, ডিইউজের নির্বাহী সদস্য রফিক লিটন প্রমুখ।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে অনেক মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার দিনকাল বন্ধ করেছে। দিনকাল বন্ধের এ প্রতিবাদ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। এই সরকারের বিদায় ছাড়া গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। এজন্য সরকার পতন আন্দোলনে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
শওকত মাহমুদ বলেন, ‘এই সরকারের কাছে চাওয়ার কিছু নেই। এখন কেড়ে নেয়ার সময় এসেছে। সকল বন্ধ মিডিয়া খুলে দিতে হবে। সকল কালা-কানুন বাতিল করতে হবে। যারা এসবের সাথে জড়িত, তাদের শাস্তি দিতে হবে। জনগণের সাথে মিলিত হয়ে চূড়ান্ত আন্দোলন করে এ সরকারকে বিদায় করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই সরকার ১৯ ফেব্রুয়ারি দিনকাল বন্ধ করে আরেকটি কালো দিন উপহার দিয়েছে। এর আগে আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ান, সিএসবিসহ অনেক সংবাদমাধ্যম বন্ধ করেছে। এবার দলবাজ আমলাদের পরামর্শে সরকার দিনকাল নয়, মানুষের কণ্ঠস্বর, গণতন্ত্রের পক্ষের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিয়েছে। এই সরকার বারবার গণমাধ্যমের শত্রু হিসেবে প্রমাণ দিয়েছে। দিনকাল বন্ধ করে আবারো প্রমাণ দিলো। নিত্যপণ্যের সীমাহীন দাম বাড়ায় মানুষের দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অথচ গণভবনে মাছ ধরে, সিমের সাথে ছবি তুলে পত্রিকায় ছবি ছাপাতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতেই বুঝা যায়, এই সরকারের জনপ্রিয়তায় কী পরিমাণ ধস নেমেছে।’
এম এ আজিজ বলেন, ‘দিনকাল পত্রিকা বন্ধ সরকারের সর্বশেষ আক্রমণ। এর আগেও অসংখ্য পত্রিকা সরকার বন্ধ করেছে। বর্তমানে কেউ বলে না, দেশে গণতন্ত্র আছে। এই সরকার কতৃত্ববাদী সরকার। এই সরকারের পতনই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে।’
নুরুল আমিন রোকন বলেন, ‘এই সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই মিডিয়া বন্ধ করে বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। এখনো ওই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। এরই অংশ হিসেবে দিনকাল বন্ধ করেছে। দিনকালসহ সব মিডিয়া খুলে না দিলে সরকারের পরিণাম ভালো হবে না।’
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘৩৬ বছরের একটি পুরাতন পত্রিকা ফ্যাসিবাদী সরকার বন্ধ করে দিয়ে অনেক সাংবাদিককে বেকার করে দিয়েছে। দিনকালের মতো অনেক মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অবিলম্বে দিনকাল পত্রিকা খুলে দিন। তা না হলে সাংবাদিক সমাজ কঠোর জবাব দেবে।’
মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দিনকাল বন্ধ করে সরকার আবারো ফ্যাসিবাদের প্রমাণ দিলো। অবিলম্বে দিনকাল পত্রিকা খুলে দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
প্রেস বিজ্ঞপ্তি