১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ইসলামবিদ্বেষী বিতর্কিত পাঠ্যপুস্তক : কওমি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের ১০ দাবি

অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মিজানুর রহমান চৌধুরী - ফাইল ছবি

ইসলামবিদ্বেষী বিতর্কিত শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বাতিলের দাবি জানিয়েছে কওমি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ।

বুধবার সংগঠনের সভাপতি দেওনার পীর অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মিজানুর রহমান চৌধুরী এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান।

তিনি বলেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ অনুযায়ী ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রণীত ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষামূলক সংস্করণে বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কুরআন-সুন্নাহবিরোধী ও মুসলমানদের ঈমান আকিদাবিধ্বংসী বিতর্কিত অনেকগুলো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশেষকরে বাংলা, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুশীলন বই ও অনুসন্ধানী পাঠ) বইতে মুসলমানদের পর্দার মতো ফরজ বিধানকে কটাক্ষ করে ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন, দাড়িকে ভাল্লুকের সাথে তুলনা, ইতিহাসের নামে মুসলিম শাসকদেরকে নেতিবাচক ও শোষক হিসেবে উপস্থাপন, মূর্তির নগ্ন ছবিসহ আপত্তিকর অনেক বিষয়কে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী মুসলমানদের সামাজিক রীতিনীতির সাথে সাংঘর্ষিক করে উপস্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি বিজ্ঞান (অনুশীলন বই ও অনুসন্ধানী পাঠ) বইতে বৈজ্ঞানিকভাবে চরম বিতর্কিত ডারউইনের বিবর্তন মতবাদ বারবার যুক্ত করে মানব সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক থিওরিকে যেমন বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হয়েছে তেমনি কুরআনে বর্ণিত আল্লাহ পাকের আয়াত সমূহকে অস্বীকার করা মতো ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা নামে আরো একটি বইতে যৌন শিক্ষার নামে সমকামিতা, কোমলমতি অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক শিক্ষার্থীদের অযাচিতভাবে যৌনকর্মে উৎসাহিত হওয়ার মতো আপত্তিকর বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে জোরালো প্রতিবাদ ও দাবি জানানো হলেও এখন পর্যন্ত দায়িত্বশীল মহল থেকে আশ্বস্ত হওয়ার মতো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে দেশবাসীর সাথে আমরাও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত। আমরা মনে করছি সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা স্বার্থন্বেষী গুটি কয়েক লোক এ ধরনের বিতর্কিত বিষয়গুলো সন্নিবেশ করে এর দায়ভার সরকারের ওপর চাপিয়ে গণরোষ সৃষ্টি করে দেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করে সাম্প্রদায়িকতা উসকে দিয়ে দাঙ্গা- হাঙ্গামা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। বিষয়টি দ্রুত বিবেচনায় না নিলে একসময় তা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়তে পারে বলে আমরা মনে করছি। এমন বিতর্কিত বিষয় পাঠ্যপুস্তকে বারবার অন্তর্ভুক্ত করে একদিকে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে উসকে দেয়া হচ্ছে এবং অন্য দিকে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থও নষ্ট করে দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করছে।

তিনি ১০টি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো-
১. বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, ২. দেশকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচানোর লক্ষ্যে বারবার পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন বন্ধ করা এবং চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত করার আগে ইসলামী চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে পাঠ্যপুস্তক যাচাই করে শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা, ৩.দেশে সংবিধান সমুন্নত রেখে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে ও বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যকে মাথায় রেখে কওমি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ প্রণীত ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বয়ে ১ম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত জন্য শিক্ষা সিলেবাসকে জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা, ৪. ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ধৃষ্টতা আর কেউ দেখাতে না পারে সেই জন্য সর্বমহলে গ্রহনযোগ্য দ্বীনদার আলেম, ইসলামী লেখক, বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে বিতর্কমুক্ত একটি নতুন শিক্ষা সিলেবাস প্রণয়ন করা, ৫. শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও সব পরীক্ষায় আবশ্যিক করা, ৬. ইসলাম ধর্ম শিক্ষার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ‘কুরআন মাজিদের’ শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্ত করা, ৭. পাঠ্যপুস্তকের সব বিষয় হতে অনৈসলামিক ও ইসলামী বিশ্বাসবিরোধী বিষয় ও শব্দ বাদ দেয়া, ৮. বাংলা, ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইসহ সব বই হতে বিতর্কিত ও ইসলামী আকিদাবিরোধী প্রবন্ধ বাদ দেয়া, ৯. স্কুল ও মাদরাসার সব পাঠ্যপুস্তক অপ্রয়োজনীয় এবং অশ্লীল চিত্রমুক্ত রাখা এবং ১০. ইসলামের ইতিহাস বিকৃতি রোধ করা।

-প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement