১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

‘পঞ্চাশে মনচাষ’ নিলামে সাড়ে বাইশ

‘সারা পৃথিবী ৮৭’ প্লাটফর্মের বই নিলাম অনুষ্ঠান - ছবি : নয়া দিগন্ত

ব্যাচটা ১৯৮৭ সালের। আনন্দ আর দুষ্টুমিতে মনে হচ্ছে সদ্য স্কুলে ভর্তি হওয়া কোনো দুষ্টুদের দল। ‘সারা পৃথিবী ৮৭’ প্লাটফর্মের মাধ্যমে বন্ধুত্ব। নিজেদের বন্ধুত্ব ঠিক রাখার পাশাপাশি দেশের কল্যাণে যে যার জায়গা থেকে অবদান রেখে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ৮৭ ব্যাচের অসচ্ছলদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি করেন তারা সামাজিক নানান কাজ।

এই বন্ধনের গভীরতা জিইয়ে রাখতে বের করলেন ‘পঞ্চাশে মনচাষ’ নামক একটি প্রেমের চিঠি সংকলন। যাতে স্থান পেয়েছে ১৯৮৭ সালে এসএসসি উত্তীর্ণ বন্ধুদের মনের মাধুরী মিশানো চিঠি। আর বইটি এবারের বইমেলায় নিলামে উঠেছে ২২ হাজার ৬৮৭ টাকা। কিনেছেন তাদের মিরপুরের বন্ধু বাবলু এমদাদ।

বইমেলাতে যেমন এটি নতুন, ঠিক বন্ধুত্বের বন্ধনেও এটি এক্কেবারে অন্যরকম আমেজ। বয়সের ভারে পঞ্চাশ পার হলেও যেন এখনো তারুণ্যে ভরা যৌবন তাদের। খুঁনসুটি আর ভালোবাসায় যেন মনে হয় একেবারে শুরু লগ্নের নতুন সূচনায় প্রাথমিকে পড়া একঝাঁক তরুণ। অথচ দেশ বিজয়ের পঞ্চাশ বছরের চাক্ষুষ সাক্ষী এরা। দেশের বিজয়ের সূচনা আর বিশ্বমানচিত্রে অবস্থান যেন ৮৭‘র সাথে নিবিড় বন্ধন। আর এই বন্ধন টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি ‘পঞ্চাশে মনচাষ’ নামক একটি প্রেমের চিঠি সংকলন তৈরি করে স্মৃতি জিইয়ে রাখার আরো একটি বাস্তবায়িত সফল পদক্ষেপ তাদের।

বইটিতে স্থান পেয়েছে প্রায় ৬৫ জনের প্রেমের চিঠি। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে তৎকালীর প্রেমের রোমাঞ্চ। প্রতিটি চিঠির মাঝে আছে অতীত। এক সময় ছিল এই চিঠির যুগ। চিঠির অপেক্ষায় দিন গিয়ে রাত এসে সপ্তাহ ফুরাতো, তবুও অপেক্ষার প্রহর শেষ হতো না। চিঠি আসার পর হারিকেন জ্বালিয়ে রাতে আর দিনের সূর্যের আলোতে কতশত বার পড়া হতো তার হদিস নেই। চিঠির উত্তর হতো আবার চিঠিতে। অথচ সেই যুগ এখনকার এই যুগের কাছে একেবারেই যেন গল্পকাহিনী বৈ কিছুই না।

ঠিক তেমনি একটি যুগ পার করে এসেছে চুল পাকা আর দাড়ি-মোছ পাকা ৮৭‘র বন্ধুমহল পঞ্চাশ বছরের এই তরুণ মানুষগুলোর সেই পার করা যুগকে জিইয়ে রাখতেই ‘পঞ্চাশে মনচাষ’-এর আয়োজন।

শুক্রবার (৪ মার্চ, ২০২২) বাংলা একাডেমীর ৭০২ নম্বর স্টলে গিয়ে দেখা গেল, ‘পঞ্চাশে মনচাষ’ এই বইটিকে নিলামে তোলা হয়। সারা পৃথিবী ৮৭ ফেসবুক পেইজ থেকে লাইভের মাধ্যমে অনলাইন-অফলাইনে এর নিলাম তোলা হয়। ১০০১ টাকা দিয়ে বইটির নিলাম শুরু করা হয়। যা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দাম উঠে ৫০০১ টাকা । ফের শুক্রবার আবার নিলামে তোলা হলে বইটি বিক্রি হয় ২২ হাজার ৬৮৭ টাকা। সর্বশেষ ডাকটি ছিল ১৯৮৭ সালের এসএসসি ব্যাচের বন্ধু বাবলু এমদাদের। ‘৮৭ এর বন্ধু বাবলু এমদাদের হাতে বইটি হাতে তুলে দিবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বাবলু এমদাদ বলেন, সবাইকে শুভেচ্ছা ও ভালবাসা।যারা এখানে অংশ গ্রহণ করেছে সবার জন্য ভালবাসা। এটা কোনো অর্থের ব্যাপার না, এটা আসলে আমাদের বন্ধুত্বের ভালবাসা। এটা আসলে আমাদের ভিতরকার একটা ভালবাসা। এটা যেন কেউ অন্যদিকে না নিয়ে নেন, অন্যভাবে না দেখেন। এটা কোনো অর্থ না, কেবল আমাদের একটা আনন্দ।

বইটির সম্পাদক রহমান মুস্তাফিজ বলেন, বাংলাদেশের বয়স আর আমাদের বয়স সমান। স্বাধীন এই দেশের প্রতিটি ঘটনার সাক্ষী আমরা। আমরা সেই প্রজন্ম যারা পাঁচ পয়সা দিয়ে আইসক্রিম কিনেছি। তিনি বলেন, আমাদের যেসকল বন্ধুরা ১৯৮৭ সালে এসএসসি পাস করেছি এই বইটি তাদের। বইটির গায়ে মূল্য ৫০০ টাকা আর কমিশন বাদ দিয়ে ৩৭৫ টাকা। আমরা যেহেতু ১৯৮৭ সালের এসএসসি, তাই এই বইয়ের ১৯৮৭ নাম্বার বইটি আমরা নিলামে তুলেছি। এবং ৩৭৫ টাকার সেই নিলাম ডাক এখন ২২ হাজার ৬৮৭ টাকা উঠেছে। এই বইটি আজ থেকে প্রায় ৩৫ বছর পূর্বে যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি তাদের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।

তিনি বলেন, এই বইয়ের লাভের টাকা আমরা বিভিন্ন বন্ধুর প্রয়োজনে ব্যয় করবো। এটা একটা বিজয়, এই টাকা দিয়ে ৮৭‘র ব্যাচের বন্ধুদের কল্যাণে কাজ করা হবে।

১৯৮৭ সালে এসএসসি বন্ধুদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন স্টলের সামনে। নিলামের ডাকের সাথে সাথে আনন্দে মেতে উঠছিলেন তারা। জানিয়েছেন নানান আবেগপ্রবণ বক্তব্যের সাথে ভালোবাসার বন্ধনের উচ্ছ্বাস।

‘৮৭ বন্ধুমহলের বন্ধু শাসুদ্দিন দিদার বলেন, আমরা যারা ১৯৮৭ সালে এসএসসি দিয়েছি এটি তাদের অন্যতম একটি আনন্দের বন্ধন। আমাদের এমন একত্রিত হওয়ার মধ্য দিয়ে মনে হয়েছে আবারো সেই ১৯৮৭ সালে গিয়ে আমরা উপনীত হয়েছি। বইটিতে আমাদের বন্ধুদের মধ্যে যাদের চিঠি স্থান পেয়েছে, তা এককথায় অসাধারণ। মনের সব কথা এতো সুন্দর করে আমাদের বন্ধুরা চিঠির মাধ্যমে তুলে ধরেছে, যা আমি পড়ে অবাক হয়েছি। আমরা চাই, আমাদের এই বন্ধন আমৃত্যু জেগে থাকুক আর লেগে থাকুক ১৯৮৭ সালের সেই তরুণমনা খুনসুঁটি আর ভালোবাসার মেলবন্ধন।

বইটির প্রকাশক পুলক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ১৯৮৭ সালে যারা এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তারাই মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম। আর আমরাই সেই প্রজন্ম। বাংলাদেশের জন্ম আর আমাদের জন্ম একই সময়ে।

‘৮৭ সালের বন্ধুরা আজ যে যার ক্ষেত্রে দেশ গড়ার কাজে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সবাই আমাদের বন্ধু। এই বন্ধুত্বের দায়বদ্ধতা থেকে আমরা একত্রিত হয়েছি। সারা পৃথিবী ৮৭ তেমনই একটি প্ল্যাটফর্ম।

তিনি আরো বলেন, আমরা ৮৭ বন্ধুরা নানা ধরনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য আড্ডার মধ্য দিয়ে পেশাজীবী নারীদের পাশাপাশি যারা বাড়ির চার দেয়ালে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন, তাদেরও আমরা সক্রিয় করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় পঞ্চাশ বছর বয়েসী বন্ধুদের মাঝে সুপ্ত থাকা সুকুমারবৃত্তি জাগিয়ে তুলতে ‘সারা পৃথিবী ৮৭’-এর পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছে এই প্রেমের চিঠি লেখার প্রতিযোগিতা। আর এমন উদ্যোগ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি। প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement