যশোরে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯:১৮
সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা রিনা বেগম। রাত কাটান যশোর রেল স্টেশন এলাকার এক ঘরের বারান্দায়। পায়ে ব্যথার কারণে ভিক্ষা করতেও পারেন না। রোববার যশোর টাউন হল ময়দানে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় কালের কণ্ঠ শুভ সংঘের কম্বল হাতে পাওয়ার পর তার চোখে নামে অশ্রুর বান। তবে এ অশ্রু বেদনার নয়, আনন্দের। ময়লা শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে তিনি বললেন, ‘বাবারে, পরের ঘরের বারান্দায় নাত্তিরি (রাত) থাকি। কিযে জাড় লাগে (শীত)। জাড়ে কালায় (জমে যাওয়া) যাই। দলাবলা হইয়ে শুইয়ে থাকি আর উইঠে বইসে থাকি। ঘুমোতি পারিনে। আইজগের তে আর নাত্তিরি দলাবলা হইয়ে থাকতি হবে না, কম্বল খান গায় দিয়ে আরামে ঘুমোতি পারবানে। তাই খুশিতি চোখে ইট্টু পানি আইয়েছে। যারা কম্বল দেছে আল্লা তাগের ভালো করুক।’
একই মাঠে কম্বল হাতে পেয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মুক্তার হোসেনের মুখে ফুটল আনন্দের ঝিলিক, কম্বলে হাত বুলাতে বুলাতে তিনি বললেন, ‘বুড়ো বয়সে রক্ত ঠাণ্ডা হইয়ে যায়। রক্তের জোর আর থাকে না। এজন্যি শীত বেশি লাগে। এই কম্বলডা গায় জড়াইয়ে রাত্তিরি গা গরম থাকপেনে। তিনি আরো বললেন, আল্লা বসুন্ধরা আলাগের আরো বেশি বেশি গরীব মানুষগের এইরাম দান করার ক্ষমতা দিক।’
বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় কালের কণ্ঠ শুভ সংঘের উদ্যোগে রিনা বেগম ও মুক্তার হোসেনদের মতো যশোরের এমন অসহায় শীতার্ত দুই হাজার মানুষকে রোববার কম্বল বিতরণ করা হয়।
কম্বল বিতরণের প্রস্তুতিতে গত কয়েকদিন শুভ সংঘের যশোর শাখার সদস্য শেখ সাজাহান, আনিকা তাবাসসুম, নাঈমুল হক হামীম, রাফসান রাফিদ, চিশতী, প্রান্ত্ম কুমার দত্ত, তুলিব ও সজল দিনে-রাতে বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি-বাড়ি, রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল ঘুরে বেছে বেছে প্রকৃত অসহায় মানুষদের মাঝে কম্বলের স্লিপ বিতরণ করেন। এরপর রোববার সকালে তারা টাউন হল ময়দানে কম্বল নিতে আসা অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের এগিয়ে আনা, ঠিকভাবে বসিয়ে কম্বল বিতরণে সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখেন।
নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন প্রধান অতিথি যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল। তিনি অসহায় শীতার্ত মানুষদের হাতে কম্বল তুলে দেন। এসময় তিনি বলেন, শুভসংঘ সবসময় সকল শুভ কাজে থাকে। এই শীতে যারা কষ্ট পায় আজকে তারা বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় এই কম্বল বিতরণ করছে। আপনারা এই বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য দোয়া করবেন, তারা যেন আরো বেশি বেশি অসহায় গরীব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আজকে বসুন্ধরা গ্রুপ যেভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এরকমভাবে অন্য বিত্তশালীরা যদি আরো বেশি করে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে এদেশের অসহায় মানুষরা আর শীতে কষ্ট পাবে না।
সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন শুভ সংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান। এদিন যশোর সদর উপজেলায় ৬ শ’, মনিরামপুর উপজেলায় ৩ শ’, কেশবপুর উপজেলায় ৩ শ’, চৌগাছা উপজেলায় ২ শ’, বেনাপোলে ২ শ’, বাঘারপাড়া উপজেলায় ২ শ’, ও অভয়নগর উপজেলায় ২ শ’ কম্বল বিতরণ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি।