সড়ক পরিবহন আইন আনাড়িভাবে তৈরি করা হয়েছে : হোসেন জিল্লুর
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৫ আগস্ট ২০১৮, ১৬:১৮
পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, 'সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮' এ বেশ কিছু চিহ্নিত ঘাটতি ও দূর্বলতা রয়েছে। আইনটি কিছু আনাড়িভাবে তৈরি করা হয়েছে বলা যায়।
ঢাকা রিপোর্টর্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে রোড সেইফটি এন্ড ট্রান্সপোর্ট এ্যালায়েন্স-শ্রোতার উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। তিনি জানান, আজ সোমবার কেবিনেটে এই আইনটি তোলা হতে পারে। `-'সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮' এর তাই কিছু চিহ্নিত ঘাটতি ও দূর্বলতা নিরসন তুলে ধরতেই এসংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, এ আইনটি করতে গিয়ে অনেকগুলো গুরত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়ে গেছে। এ আইনের শিরোনাম নিয়েই ঘাটতি আছে। এটার শিরোনামটা ঠিক করতে হবে। শিরোনামে সড়ক নিরাপত্তার সংক্রান্ত নামটি না থাকলে এর লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য জনমনে পরিষ্কার হবে না। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় জান-মালের ক্রমবর্ধমান ক্ষয়ক্ষতি আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য হুমকি স্বরূপ। সুতরাং পরিবহনের সাথে 'নিরাপত্তা'র বিষয়টি আইনের সকল বিধানের সাথে সমন্বয় করা প্রয়োজন। তাই আইনটির শিরোনাম ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৭’ এর পরিবর্তে ‘সড়ক পরিবহন ও সড়ক নিরাপত্তা আইন, ২০১৭’ নামকরণ করার প্রস্তাব করেন তিনি।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান জানান খসড়া আইনে কিছু টেকনিক্যাল টার্ম অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে যাদেরকে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি যেমন ধারা ৪৪-এ মহাসড়কের ও ধারা ২৬ (৫) এ রঙচটা, বিবর্ণ, জরাজীর্ণ কিংবা ঝুকিঁপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত ইত্যাদি। আইনগত ব্যাখ্যার সুবিধার্থে ধারা ২-এ এ টার্মগুলোর সংজ্ঞা প্রদান করা জরুরী বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। সরকার ও যাত্রী সাধারণের অংশগ্রহণে সড়ক নিরাাপত্তা তহবিল গঠন করতে সুপারিশ করেন তিনি। যাত্রী ছাউনী, ওভারপাস, আন্ডারপাস, জেব্রাক্রসিং, বাস স্টপেজ, ফুটপাথ, বাস টার্মিনালের স্থান নির্ধারন, স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ কমিটিতে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব ছাড়াও যাত্রী প্রতিনিধিত্বের বিধান অর্ন্তভূক্ত করার প্রস্তাব করেন তিনি। এ ছাড়াও মহাসড়কে চালক ও পরিবহন শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রামাগার নির্মাণ সংক্রান্ত আইনি কাঠামো প্রণয়ন করার দাবি নকরেন তিনি তার প্রস্তাবে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনা মামলার ক্ষেত্রে বিশেষায়িত তদন্ত প্রয়োজন। কারণ এই তদন্ত প্রক্রিয়া অন্যান্য ফৌজদারি মামলার তদন্ত থেকে ভিন্ন। এখানে কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক সহায়ক যন্ত্রপাতি, বিশেষায়িত পদ্ধতি ও দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। সড়ক পরিবহন আইনের উপর প্রণিতব্য বিধিমালায় দুর্ঘটনা মামলা তদন্ত প্রক্রিয়া অর্ন্তভূক্তরণের সুপারিশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশে দ্রুত নগরায়ণ ও সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন খাতের গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ খাতের সুষ্ঠু ও নিয়ন্ত্রিত বিকাশের স্বার্থে আধুনিক নিরাপদ সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনার একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামোর প্রয়োজন। কারণ সড়ক দুর্ঘটনা এক নূতন মহামারী হিসেবে জনজীবনকে আতঙ্কগ্রস্থ করে রেখেছে। তিনি দ্রুত ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যে একটি ক্ষতিপূরণ ট্রাইবুনাল গঠনের বিধান এই আইনে অর্ন্তভূক্ত করার জন্য সুপারিশ করেন। এর পাশাপাশি দুর্ঘটনায় আহতদের সাহায্যকারীগণের আইনগত সুরক্ষা করে একটি পৃথক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেন তিনি। এছাড়া সকল পরিবহন স্থাপনা নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী বান্ধব করার বিধান রাখা।
সংবাদ সম্মেলনে ব্লাস্ট’র অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেইন, নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, যাত্রী কল্যাণ সমিতি’র মহাসচিব মো: মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।