চিকিৎসকদের বয়সসীমা ৩৪ না করলে কর্মবিরতির হুমকি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:০৪
বিসিএস পরীক্ষায় চিকিৎসকদের বয়সসীমা আগের মতো দুই বছর বাড়িয়ে ৩৪ বছর করা না হলে, সারাদেশে চিকিৎসা শাটডাউন কর্মসূচির হুমকি দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আজ রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় সচিবালয়ের প্রধান ফটকের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে চিকিৎসকরা বয়স বৃদ্ধি করা না হলে এ হুমকি দেন তারা।
তারা বলেছেন, আমরা এরই মধ্যে সব ধরনের টেবিলওয়ার্ক সম্পন্ন করেছি। আমরা চেয়েছি যেন টেবিলেই বিষয়টি সমাধান হয়। কিন্তু দীর্ঘ একমাস ধরে টেবিল থেকে টেবিলে ঘুরলেও সমস্যা সমাধানের কার্যকর কোনো উদ্যোগ আমরা দেখছি না। তাই বাধ্য হয়ে রাজপথেই বয়স বৃদ্ধির সমাধান আদায় করতে নেমেছি।
চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলোর সম্মিলিত সংগঠন ইউনাইটেড মেডিক্যাল অর্গানাইজেশনস্ অব বাংলাদেশের (ইউমব) চিফ কো-অর্ডিনেটর ডা. মোবারক হোসাইন বলেন, আমাদেরকে কঠোর হতে বাধ্য করবেন না। আমরা এতোদিন চেয়েছি টেবিল ওয়ার্কের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করতে। কিন্তু সবাই আমাদের সাথে ঐকমত্য পোষণ করলেও অদৃশ্য কারণে সেটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন চিকিৎসকদের সাথে দেখা করেছি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার গিয়েছি। বয়স বাড়ানোর এই দাবিতে সবাই আমাদের সাথে এক হয়েছেন যে, এ ব্যাপারে আমাদের সাথে বৈষম্য করা হয়েছে।
ডা. মোবারক হোসাইন বলেন, আমরা চাই না আবারও শাহবাগ অবরোধ হোক, চিকিৎসকরা রাজপথে নেমে আসুক। চিকিৎসকরা রাজপথে এলে কর্মবিরতি দিয়ে আসবে, তখন রোগীদের দুর্ভোগ হবে, আমরা এটা চাই না। আমরা বিষয়টি টেবিলে সমাধান করতে চাইলেও কেউ হয়তো তা চায় না। এখন আমরা কর্মবিরতির চিন্তাই করছি।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কমিউনিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. রায়হান আসার বলেন, আমাদের ঊর্ধ্বতন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রত্যেকেই আমাদের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বয়স বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেটি দীর্ঘ এক মাস ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে।
ভয়েস অব ডক্টরসের আহবায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মিনহাজুল আবেদীন বলেন, ৪৭তম বিসিএসের আবেদনের আর মাত্র ১২ দিন বাকী আছে। কিন্তু এখনও চিকিৎসকদের সমস্যাটি সমাধান হচ্ছে না। বিসিএসে সবার বয়স বৃদ্ধি করা হলেও চিকিৎসকদের বৃদ্ধি করা হয়নি। আমাদের সাথে এটা বড় ধরনের বৈষম্য। আমরা মনে করছি, সব বৈষম্য চিকিৎসকদের সাথেই করা হয়, এর কারণ আমরা জানি না।
তিনি আরো বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চিকিৎসক সমাজ অংশগ্রহণ করেছিল। আমরা তো কোনো বৈষম্য টিকিয়ে রাখার জন্য আন্দোলন করিনি।
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন চিকিৎসক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. মাহফুজুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মঈন উদ্দিন চিশতিসহ আরো অনেকে।
চিকিৎসকরা জানান, ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদনের প্রজ্ঞাপনে আবেদনকারীর বয়সসীমা ২১ থেকে ৩২ বছর উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যান্য বিসিএস আবেদনকারীর স্নাতক শেষ করতে যেখানে ন্যূনতম ৪ বছর সময় প্রয়োজন হয়, সেখানে একজন চিকিৎসকের এমবিবিএস/বিডিএস স্নাতক ও ইন্টার্নশিপ শেষ করতে ন্যুনতম ৭৮ মাস বা সাড়ে ৬ বছর লাগে। তাই পূর্ববর্তী সব বিসিএস পরীক্ষায় যেখানে আবেদনকারীদের বয়সসীমা ৩০ বছর ছিল, সেখানে চিকিৎসকদের বয়সসীমা ৩২ বছর ছিল। কিন্তু সর্বশেষ প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে সবার ক্ষেত্রে বয়সসীমা ২ বছর বাড়িয়ে ৩২ বছর করা হলেও চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে কোনো বয়সসীমা বৃদ্ধি হয়নি। ফলে চিকিৎসকরা এই ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকা হচ্ছেন বলে সচেতন চিকিৎসক মহল মনে করেন।